Exclusive, IPL 2022: অখ্যাত Mohsin-এর কাছে নাকি Shami-র থেকে বেশি রসদ আছে! কেন এমন দাবি করলেন ছোটবেলার কোচ?
নিজেকে ঘষামাজা করতে গিয়ে ২০২০ সালে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে চলে এসেছিল সুযোগ। কিন্তু রোহিত শর্মার দলের সঙ্গে অনুশীলন করলেও, ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি ২৩ বছরের তরুণ।
সব্যসাচী বাগচী: টেলিভিশন থেকে সোশ্যাল মিডিয়া, চলতি আইপিএল (IPL 2022) নিয়ে আলোচনা হলে একটাই নাম সবার মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তিনি উমরান মালিক (Umran Malik)। তবে শুধু উমরান নন। আরও একজন অখ্যাত জোরে বোলার ইতিমধ্যেই তাঁর পেস ও সুইংয়ের সৌজন্যে নজরে এসেছেন। তিনি উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদ থেকে উঠে আসা মহসিন খান (Mohsin Khan)।
মাত্র ২০ লাখ টাকায় তাঁকে নিলাম টেবিল থেকে কিনে নিয়েছিল লখনউ সুপার জায়ান্ট (Lucknow Super Giants)। দলের ‘মেন্টর’ গৌতম গম্ভীর (Gautam Gambhir) তাঁকে দলের নেওয়ার পর থেকে বাকিটা তো ইতিহাস। এখনও পর্যন্ত চার ম্যাচে আট উইকেট নিয়ে ফেলেছেন এই বাঁহাতি পেসার। সেরা পারফরম্যান্স দিল্লি ক্যাপিটালসের (Delhi Capitals) বিরুদ্ধে। মাত্র ১৬ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। তাঁর পেসে কাবু হয়েছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার (David Warner), ঋষভ পন্থের (Rishbah Pant) মতো ব্যাটার।
এহেন মহসিনের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে গিয়ে আমাদের কলকাতা ময়দানের কানেকশন খুঁজে পাওয়া গেল। মহসিন এখনও পর্যন্ত ময়দানে পা রাখেননি। তবে তাঁর কোচ ও মেন্টরের সঙ্গে গঙ্গাপাড়ের মাঠগুলোর নিবিড় যোগাযোগ। কোচ বদরুদ্দিন আহমেদ (Badruddin Ahamed)। আর ‘মেন্টর’ এক ও অদ্বিতীয় মহম্মদ শামি (Mohammed Shami)। এই বদরুদ্দিনের হাতধরেই একটা সময় মোরাদাবাদের সহেসপুর গ্রাম থেকে কলকাতা ময়দান হয়ে ভারতীয় ক্রিকেটে পা রেখেছিলেন টিম ইন্ডিয়ার (Team India) পেসার।
বদরুদ্দিন সোমবার সন্ধের দিকে জি ২৪ ঘন্টাকে বললেন, “আমার দুই ছাত্র শামি ও মহসিনের মধ্যে অনেক মিল আছে। দুজনেই প্রচণ্ড অলস, বিরিয়ানির পর ঘুমোতে যাওয়ার একটু জায়গা পেলে আর কিছুই চায় না। আর দুজনেই শুরুতে ব্যাটার হতে চেয়েছিল!”
টেলিফোনে কথাগুলো বলতে গিয়ে নিজের খেয়ালে অতীতে ফিরে গেলেন বদরুদ্দিন। যোগ করলেন, “মহসিনকে ওর দাদা আমার কাছে নিয়ে এসেছিল। ওর তখন মাত্র ১২ বছর বয়স। ঠিক শামি যেমন ওর দাদার হাতধরে আমার কাছে এসেছিল। তবে শামি শুরু থেকেই খুব সিরিয়াস ছিল। মহসিন কিন্তু তেমন ছিল না। আসলে ওর নিজের প্রতিভা সম্পর্কে ধারণাই ছিল না। তাই তো সেই কবে উত্তর প্রদেশের হয়ে অনুর্ধ্ব-১৬ ও ১৯ খেলে ফেলার পরেও নিজের নামে প্রতি সুবিচার করতে পারেনি। অনুর্ধ্ব-১৯ প্রতিযোগিতার মাত্র তিন ম্যাচে ২৭ উইকেট নেওয়ার পরেও নিজের খেই হারিয়ে ফেলেছিল!”
কেন খেই হারিয়েছিলেন এ বারের আইপিএল-এ সাড়া ফেলে দেওয়া মহসিন? বদরুদ্দিন বলে গেলেন, “হাড় ভাঙা খাটুনির ভয়ে আমার ক্যাম্পে আসতে চাইত না। সেই সময় আশে পাশের গ্রামে গিয়ে টেনিস বলে খেপ খেলে বেড়াত। এমন সময় একবার খেপ খেলতে গিয়ে কাঁধে খুব জোর চোট পেয়েছিল। ওর বাবা আবার পুলিসে চাকরি করেন। পরিবারে ওর বাবা-কেই সবচেয়ে বেশি ভয় পেত মহসিন। শেষ পর্যন্ত সেই বাবার বকা খেয়েই পেশাদারী ক্রিকেট নিয়ে ফের ভাবনাচিন্তা করতে শুরু করে মহসিন।“
নিজেকে ঘষামাজা করতে গিয়ে ২০২০ সালে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে চলে এসেছিল সুযোগ। কিন্তু রোহিত শর্মার দলের সঙ্গে অনুশীলন করলেও, ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি ২৩ বছরের তরুণ। মাঠে নামার সুযোগ না পাওয়ার জন্য আমার ও শামির কাছে মাঝেমধ্যেই আক্ষেপ করতেন। দুই ‘গুরু’র সঙ্গে দেখা হলেই বলতেন , ‘স্যর, মুঝে ইয়ে লোগ খিলা নেহি রহে হ্যায়, মে পরেশান হোগায়া হুঁ (ওরা আমাকে দলে অন্তর্ভুক্ত করছে না, আমি হতাশ হয়ে পড়েছি)।’
পুরনো কথা মনে করে বদরুদ্দিন বলছিলেন, “সেই সময় আমি ওকে বলেছিলাম, বোকার মতো ভেব না। জহির খান এবং লাসিথ মালিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলো। ওঁদের থেকে শেখার চেষ্টা করো। মাথা খেয়ে ফেলে ওদের থেকে শিখে নাও পেস বোলিংয়ের খুঁটিনাটি। দেখবে ভবিষ্যতে আরও ভাল বোলার হয়ে উঠেছো। আমি সেটা বলতে গিয়ে শামির উদাহরণ পর্যন্ত দিয়েছিলাম। কলকাতা নাইট রাইডার্সে থাকার সময় শামি একটাও ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়নি। কিন্তু তাই বলে ও হাত গুটিয়ে বসে ছিল না। ওয়াসিম আক্রমের কাছে থেকে অনেক কিছু শিখে নিয়েছিল। মহসিনকেও সেই নীতি ধরেই এগিয়ে যেতে বলেছিলাম।“
কোচের কথা বেদবাক্যের মতো শুনে মহসিন এগিয়ে যাওয়ার চেস্টা করছিলেন। ঠিক এমন সময় দেশে বাড়তে থাকে কোভিড হানা। এবং সেই প্রেক্ষিতে দেশজুড়ে শুরু হয়ে যায় লকডাউন। এই লকডাউন মহসিনের কাছে যেন ‘শাপে বর’ হিসেবে ধরা দিল। কারণ ‘মেন্টর’ শামির সঙ্গে অনুশীলন করার সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন এই তরুণ। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিতেন বদরুদ্দিন। তীব্র গরম উপেক্ষা করে চলতো বোলিং পাঠ।
বদরুদ্দিন বলছেন, “শামির সঙ্গে এই সময় কাটানোই মহসিনকে বদলে দিয়েছিল। কারণ ও রিভার্স সুইং এবং সিমে বল ডেলিভারি করার শিল্প শামির থেকে শিখেছিল। বদলে যাওয়া মহসিনকে দেখে শামির খুব ভাল লেগেছিল। একদিন আমাকে শামি বলে, ‘স্যর এই ছেলেটা তো আমার থেকেও ভাল!’ সেটা মহসিনকে বলার পর থেকে ক্রিকেটের প্রতি ওর মানসিকতাই একেবারে বদলে গিয়েছে!”
১২ বছর বয়সে প্রথমবার দেখা মহসিনের সঙ্গে আইপিএল জগতে দাপিয়ে বেড়ানো ছাত্রকে মেলাতে পারেন না। টেলিভিশনের পর্দায় মহসিনকে ওই সাদা বল হাতে নিয়ে রান আপ নিতে দেখলেই, বদরুদ্দিন বলে ওঠেন, ‘ওই তো আমার শামি ছুটে আসছে।‘
সত্যি দুই ছাত্রের অনেক মিল। তফাৎ শুধু এক ছাত্র শামি ইতিমধ্যেই ক্রিকেট বিশ্বে নাম লিখিয়ে ফেলেছেন। মাথা ঠিক রাখতে পারলে মহসিন সেই ব্রম্ভান্ডে নাম লেখাতে পারেন। সেই প্রতিক্ষায় রয়েছে মোরাদাবাদ গ্রাম ও তাঁর ছোটবেলার কোচ।