Exclusive, Kalyan Chaubey : বিজেপি তত্ত্ব উড়িয়ে ভারতীয় ফুটবলের সংস্কার সম্ভব? জানালেন নতুন সভাপতি কল্যাণ চৌবে
Exclusive, Kalyan Chaubey : বাইচুং ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের পরোক্ষ সহযোগিতাতেই নির্বাচনে জয়ী কল্যাণ। যদিও ভারতের প্রাক্তন গোলকিপার যে বেশি ভোট পেয়ে মসনদে বসবেন সেই ইঙ্গিত আগেই পাওয়া গিয়েছিল।
সব্যসাচী বাগচী
রেজাল্ট ঘোষণা হওয়ার পর থেকে ফোনে পাওয়ার চেষ্টা। এবং নাগাড়ে চেষ্টা করলেও হাত এসেছে বারবার ব্যর্থতা। কখনও মোবাইল ব্যস্ত। আবার মাঝেমধ্যে রিং হয়েই যাচ্ছে। ফলে বেড়েই যাচ্ছিল উৎকণ্ঠা। অবশেষে স্বস্তি এনে দিলেন সর্ব ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের (All India Football Federation) নতুন সভাপতি (AIFF President) নিজেই। সন্ধে ছ'টা নাগাদ মেসেজে লিখলেন, 'প্লিজ কল'। এরপর দিল্লির ফুটবল হাউসে (Football House) নিজের ঘরের 'হট সিট'-এ বসে জি ২৪ ঘণ্টাকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন কল্যাণ চৌবে (Kalyan Chaubey)। টেলিফোনিক আলাপচারিতায় উঠে এলে প্রাক্তন সতীর্থ বাইচুং ভুটিয়া (Bhaichung Bhutia), বিজেপি তত্ত্ব (BJP), প্রয়াত শ্বশুর অঞ্জন মিত্র (Anjan Mitra), বিসিসিআই সভাপতি (BCCI President) সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Sourav Ganguly) প্রসঙ্গ। এবং ভারতীয় ফুটবলের (Indian Football) নতুন রুপরেখা নিয়েও ধারণা দিলেন প্রাক্তন গোলকিপার।
প্রশ্ন : অনেকদিন পর স্ট্রাইকার বাইচুং ভুটিয়াকে হারতে দেখা গেল! ভোটের মার্জিন ৩৩-১। আপনার পক্ষে। কীভাবে ওঁর শট সেভ করলেন?
কল্যাণ চৌবে : আমি জানতাম খুব সহজে জিতব। কারণ আমি তো গত কয়েক বছর ধরে ভারতীয় ফুটবল ও সব রাজ্য ফুটবল সংস্থার সঙ্গে জড়িয়ে আছি। তাই জয়ের ব্যাপারে অনেক আগে থেকে আশাবাদী ছিলাম। বৃহস্পতিবার রাতেই আমাদের আলোচনায় বুঝেছিলাম, জিতছি। তাছাড়া আমাদের দলে কোনও ভাঙন ছিল না। সবাই ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে ফুটবলের উন্নয়নে এগিয়েছিলাম। অন্ধ্রপ্রদেশ ফুটবল সংস্থা ঐক্যমত্যে আসলে নির্বাচন করতেই হত না।
প্রশ্ন : একেবারে শেষে নির্বাচনে যোগ দিয়ে বাইচুং কি 'ঘোলা জলে মাছ ধরলেন'?
কল্যাণ চৌবে : বাইচুং কোন ইচ্ছা নিয়ে নির্বাচনে নেমেছিলেন সেটা উনিই বলতে পারবেন। তবে আমি কিন্তু সবাইকে আমার কমিটিতে স্বাগত জানাচ্ছি। বাইচুং-এর মতো ফুটবল মস্তিষ্ক আমাদের প্যানেলে আসলে ও মতামত দিলে সেটা ভারতীয় ফুটবলের জন্যই ভাল হবে। ১৯ মাস ধরে রাজ্য সংস্থাগুলোর অসুবিধা নিয়ে লড়ছি। কিন্তু এই সময়ে বাইচুংকে দেখতে পাইনি। নির্বাচনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বলে উনি যে মন্তব্য করেছিলেন, সেই উনিই ব্যাখ্যা দিতে পারবেন। উনি জানেন না রাজ্য সংস্থাগুলো এত দিন ধরে কতটা অসুবিধার মধ্য দিয়ে এগিয়েছে।
প্রশ্ন : আপনি বিজেপি-র হাত ধরে চেয়ারে বসেছেন। বিরোধীদের এমনটাই অভিযোগ! কী বলবেন?
কল্যাণ চৌবে : বিরোধীরা এগুলো বলবেই। তবে এতে আদৌ লাভ হল না। আর কে কী বললেন, কিচ্ছু যায় আসে না। একটা তথ্য জানিয়ে রাখার দরকার। আমার প্যানেলের সহ-সভাপতি নালাপদ অ্যাহনান হ্যারিস বেঙ্গালুরু থেকে কংগ্রেসের তিনবারের বিধায়ক। এছাড়া ইউজেসিং লিংডো। সে মেঘালয়ের ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক পার্টির বিধায়ক। আর আমার সামান্য পরিচিতি তো মাঠে খেলেই। তাই আমার মনে হয় ফুটবলে কোনও রাজনৈতিক দলকে টেনে আনা উচিত নয়।
প্রশ্ন : আপনার কমিটিতে কারা কারা থাকছেন?
কল্যাণ চৌবে : আমাদের ১৪ সদস্যের নতুন এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্যরা হলেন জিপি পালগুনা, অভিজিৎ পাল, অনিলকুমার পি, ভালাঙ্কা আলেমাও, মালোজি রাজে ছত্রপতি, মেনলা ইথেনপা, মোহন লাল, আরিফ আলি, কে নেবোউ সেখোস, লালঘিনলোভা হমার, দীপক শর্মা, বিজয় বালি, সৈয়দ ইমতিয়াজ হুসেন, সৈয়দ হাসনাইন আলি নকভি। বিনা নির্বাচনেই এই ১৪জন নির্বাচিত হয়েছেন।
প্রশ্ন : শোনা যাচ্ছে বেশ কয়েক জন প্রাক্তন ফুটবলার নাকি কো-অপ্ট সদস্য রয়েছেন?
কল্যাণ চৌবে : হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। মোট ছ’জন প্রাক্তন ফুটবলারকে কো-অপ্ট সদস্য করা হয়েছে। বাইচুং, আই এম বিজয়ন, সাবির আলি ছাড়াও এই তালিকায় রয়েছেন ক্লাইম্যাক্স লরেন্স। রয়েছেন দুই প্রাক্তন মহিলা ফুটবলার পিঙ্কি বোমপাল মাগার এবং থোংগাম থাবাবি দেবী।
আরও পড়ুন: AIFF Election: ৩৩-১ ব্যবধানে বাইচুং ভুটিয়াকে হারিয়ে ফেডারেশনের নতুন সভাপতি কল্যাণ চৌবে
আরও পড়ুন: AIFF Election : কল্যাণের সাফল্যের মুহূর্তে বাবা অঞ্জন মিত্রকে নিয়ে আবেগি সোহিনী
প্রশ্ন : এমন একটা বিশেষ দিনে অঞ্জন মিত্রকে কতটা মনে পড়ছে?
কল্যাণ চৌবে : অবশ্যই ওঁর কথা সবসময় মনে পড়ছে। শুধু আমার শ্বশুর বলে নয়, 'অঞ্জন দা'-র নিজস্ব একটা পরিচয় আছে। দীর্ঘ ২৩ বছর উনি মোহনবাগানের সচিব ছিলেন। ফলে ভারতীয় ফুটবলের সবকিছু জানতেন। ওঁর আমলেই টিএফএ (পড়ুন, টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমি) থেকে সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে চাপিয়েছিলাম। আপনার সঙ্গে কথা বলার কিছুক্ষণ আগে টুটু কাকু আমাকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সত্যি বলতে অঞ্জন দা বেঁচে থাকলে আমারও খুব ভাল লাগত। আসলে অদ্ভুত শোনালেও আমি কিন্তু শেষ দিন পর্যন্ত আমার শ্বশুর মশাইকে 'অঞ্জন দা' বলেই ডেকে এসেছি। কারণ ময়দানি ভাষায় আমরা সবাইকেই দাদা বলে থাকি। এবং সোহিনীর মতো আমারও বিশ্বাস অঞ্জন দা বেঁচে থাকলে তিনি সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন।
প্রশ্ন : শোনা যাচ্ছে এ বার নাকি আইএফএ-এর কোন প্রতিনিধি নেই?
কল্যাণ চৌবে : হ্যাঁ। দীর্ঘ অনেক বছর পর এ বার ফেডারেশনে আইএফএ-এর কোনও প্রতিনিধি থাকছে না। তবে তাই বলে আইএফএ-কে চিন্তা করার দরকার নেই। আইএফএ যেমন গুরুত্ব পেয়ে এসেছে, তেমন গুরুত্বই পাবে।
প্রশ্ন : বিসিসিআই ও এআইএফএফ, দুটি ক্রীড়া সংস্থার সর্বোচ্চ পদে বঙ্গ সন্তান। কীভাবে দেখছেন?
কল্যাণ চৌবে : ভাবলে তো ভাল লাগেই। ভারতীয় ক্রীড়া জগতে বাংলার অবদান অনস্বীকার্য। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই দক্ষ ক্রীড়া প্রশাসক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আমাকেও সেই পথে হাঁটতে হবে। আমাদের সময় সন্তোষ ট্রফিতে বাংলা মাঠে নামলেই চ্যম্পিয়ন হত। জাতীয় দল থেকে শুরু করে ক্লাব, সব জায়গায় বাঙালি ফুটবলারদের রমরমা ছিল। আমাকে সেই সময় ফিরিয়ে আনতে হবে।
প্রশ্ন : বিসিসিআই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা প্রাক্তন ফুটবলারদের পেনশন দেয়। আপনি এমন কোনও পদক্ষেপ নেবেন?
কল্যাণ চৌবে : প্রশ্নটা ভাল। এমন একটা উদ্যোগ নেওয়াই যায়। তবে আমি একা কিছু করতে পারব না। আমার প্যানেলের সঙ্গে আলোচনা করার পর এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারব। আমাদের একটা পলিসি থাকবে। আমরা সেই ভাবে এগিয়ে যাব।
প্রশ্ন : কলকাতা ও ভারতীয় ফুটবলের সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে আপনার বিশেষ কোনও পরিকল্পনা?
কল্যাণ চৌবে : ফুটবলের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র কলকাতা। অবশ্যই তাকে কাজে লাগাব। আগামী ১৭-১৮ সেপ্টেম্বর নবনির্বাচিত কর্মসমিতির প্রথম বৈঠক হবে কলকাতায়। ফেডারেশনের নতুন সচিব হতে চলেছেন সাজি প্রভাকরণ। ফিফা ও এএফসিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। ভারতীয় ফুটবল পরিকল্পনার জন্য ১০০ দিনের মধ্যেই আমাদের নতুন টিম বৈঠকে বসবে। শুধু তাই নয়, আগামী দিনে ভারতীয় ফুটবলের রূপরেখাও তৈরি করবে। এখনই অতিরঞ্জিত করে কিছু বলব না। আকাশকুসুম স্বপ্নও দেখাব না। তবে সঠিক বাস্তব পরিকল্পনার সঙ্গে আমাদের দেশের পরিকাঠামো, জলবায়ু অনুযায়ী ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইব।