সব্যসাচী বাগচী 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

ব্রাজিল: ১ ('৮৩ কাসেমিরো)


সুইৎজারল্যান্ড:  ০ 


ডিফেন্স করেও ব্রাজিলকে (Brazil) আটকে রাখতে পারল না সুইৎজারল্যান্ড (Switzerland)। ম্যাচের ৮৩ মিনিট পর্যন্ত সেই কাজে সফলও হয়েছিল তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারল না সুইৎজারল্যান্ড। অবশেষে কাসেমিরোর (Casemiro) বুট ব্রাজিলকে স্বস্তি এনে দিল। ডান পায়ের দুরন্ত শটে গোল করে দলকে মূল্যবান ৩ পয়েন্ট এনে দিলেন তিনি। এই জয়ের পরে দু’ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ জি-র শীর্ষে ব্রাজিল। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই বিশ্বকাপের (FIFA World Cup 2022) প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেল সেলেকাওরা। তবে জিতলেও ব্রাজিলের খেলায় কিন্তু মন ভরল না। 


এক ফুটবলপ্রেমী দার্শনিক লিখেছিলেন, 'অন্য দলগুলো যখন খেলে, তখন মনে হয় ঘরামি বুরুশ দিয়ে বাড়ি রং করছে। আর ব্রাজিল দলটা যখন খেলতে নামে তখন মনে হয়, মাঠের ক্যানভাসে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি তুলি দিয়ে ছবি আ়ঁকছেন।' ব্রাজিলের শৈল্পিক ফুটবলের কথা ভেবেই হয়তো তিনি লিখেছিলেন। সেটা নির্ঘাতভাবে পেলে, গ্যারিঞ্চাদের আমলে। এমনকি জিকো, পরবর্তী সময় রোমারিও, বেবেতো, রোনাল্ডোদের সময় হলেও, মেনে নেওয়া যায়। তবে সেই লোকটি তিতের (Tite) এই ব্রাজিলকে নিয়ে লিখলে সোশ্যাল মিডিয়াতে অবধারিত ট্রোল হয়ে যেতেন। 


সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ডুয়েলের ম্যাচ রিপোর্ট লেখার সময় বারবার ২৫ নভেম্বরের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। মানে ওই সার্বিয়া (Serbia) ম্যাচটার কথা। সার্বিয়া ০-২ ব্যবধানে হারলেও মামুলি দল ছিল না। এই সুইস দলও হেলাফেলা করে দেওয়ার নয়। সার্বিয়ানদের মতোই সুইস ডিফেন্ডারদের উচ্চতাও দেখার মতো। সঙ্গে যোগ হলেন দুরন্ত গোলকিপার ইয়ান সোমার (Yann Sommer)। এই সুইসদের টপকে গোল করা ছিল অসাধ্য। উইং থেকে বক্সে বল পাঠালেও খুব একটা কাজে দেয়নি। মাটিতে বল রেখে, সোজা মাঝ বরাবর ডিফেন্স ভাঙতে হবে। নেইমার (Neymar Jr) ছিলেন না। তাই এই কাজটা করার জন্য ব্রাজিলের কোচ রেখেছিলেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র, (Vinicius Jr), রিচার্লিসনকে (Richarlison)। তবুও এলাম, দেখলাম, জয় করলাম, কিন্তু হল না। 




সার্বিয়ার বিরুদ্ধে গোল পেতে ব্রাজিলকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ৬২ মিনিট পর্যন্ত। এবার গোল এল ৮৩ মিনিটে। কাসেমিরোর পা থেকে। বল জালে ঢুকতেই দুলে উঠেছিল অগণিত হলুদ জার্সি গায়ে চাপানো সমর্থক ঠাসা স্টেডিয়াম  ৯৭৪-এর গ্যালারি। অবশেষে গোল করল ব্রাজিল। বাঁ প্রান্ত ধরে ভিনিসিয়াস-রদ্রিগো যুগলবন্দিতে বক্সের মধ্যে বল পান কাসেমিরো। ডান পায়ে জোরালো শট মারেন তিনি। সুইৎজারল্যান্ডের ডিফেন্ডারের শরীরে লেগে সেই বল জালে জড়িয়ে যায়। কিছু করার ছিল না সোমারের। এর আগে অবশ্য আরও একটা গোল পেয়েছিল ব্রাজিল। ৬৪ মিনিটে। ভিনিসিয়াসের পা থেকে। বকিন্তু 'ভার'-এর সাহায্যে সেই গোল বাতিল করে দিলেন রেফারি। ভিনিসিয়াস অফসাইডে না থাকলেও গত ম্যাচের জোড়া গোলদাতা রিচার্লিসনের ভুলের খেসারত দিতে দলকে।


ব্রাজিলের হলুদ আর সুইসদের লাল জার্সি। এরসঙ্গে যোগ হয়েছে মখমলের মতো সবুজ মাঠ। সুইসরা কিন্তু সার্বিয়ার মতো রাফ অ্যান্ড টাফ ফুটবল খেলল না। বরং নিজের ডিফেন্স আগলে সুপরিকল্পিতভাবে খেলে গেল। পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর দেশটি ফুটবল মাঠে ব্রাজিলের বরাবরের গাঁট। ইতিহাস বলছে, সার্বিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে যাত্রা শুরু করা ব্রাজিল এর আগে বিশ্বকাপের মঞ্চে সুইজারল্যান্ডের হারাতে পারেনি। এবার স্টেডিয়াম  ৯৭৪-এ  মুখোমুখি হওয়ার আগে দু'বারের দেখায় দুটি ম্যাচই ড্র হয়েছে। চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়েছিল। ১৯৫০ বিশ্বকাপে দুই দলের প্রথম দেখার ম্যাচটি ড্র হয়েছিল ২-২ ব্যবধানে। তবে এবার হিসেব বদলে দিলেন কাসেমিরো। 


আরও পড়ুন: Neymar, FIFA World Cup 2022: 'নেইমারকে অহেতুক মারা বন্ধ করুন!' ফিফা-র কাছে আর্জি জানিয়ে বিস্ফোরক তিতে


আরও পড়ুন: Neymar-কে মাঠে নামাতে তৈরি NASA! কিন্তু কীভাবে?


সুইসরা বিশ্বকাপে না জিতলেও মুখোমুখি সাক্ষাতেও খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি ব্রাজিল। সব মিলিয়ে সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে অতীতের ৯টি ম্যাচে তিনটিতে জয় ব্রাজিলের, দুটি জিতেছে সুইসরা। বাকি চারটি ড্র। ব্রাজিলের মতো শাকিরিরাও এবারের বিশ্বকাপ শুরু করেছিল জয় দিয়ে। ক্যামেরুনকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল সুইসরা। তবে এবার আর শেষরক্ষা হল না। 




অতীতের পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে শুরু থেকেই সেলেকাওদের তারকা ফরোয়ার্ড লাইনকে রুখে দিচ্ছিল সুইজারল্যান্ডের ডিফেন্ডাররা। বেশ বোঝা যাচ্ছিল প্রতি-আক্রমণে খেলার পরিকল্পনা করে নেমেছেন সুইস কোচ মুরাত ইয়াকিন। চোটের জন্য নেইমার খেলছেন না। এটা সবার জানা। নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার দানিলোও গোড়ালির চোটে ভুগছেন। তাই মাঝমাঠের দখল নেওয়ার জন্য ফ্রেডকে শুরু থেকেই নামিয়ে দিয়েছিলেন দলের 'হেড স্যর' তিতে। জ্বরের জন্য ম্যাচের আগের দিন অনুশীলন করতে পারেননি লুকাস পাকুয়েতা। কিন্তু নেইমার না থাকায় তাঁকেও খেলানো হল। প্লে-মেকারের কাজ করার জন্য পাকুয়েতা পরিচিত। কিন্তু গোলের মুখ খুলতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছিল ব্রাজিল। 


প্রথমার্ধের খেলা দেখে মনে হচ্ছিল এ যেন সার্বিয়া ম্যাচের রিমেক! গত ম্যাচের মতোই বাঁ দিক থেকে বারবার বিপক্ষের বক্সের কাছে চলে যাচ্ছিলেন রিয়াল মাদ্রিদে খেলা ভিনিসিয়াস। নিজের গতি ব্যবহার করেছেন। কিন্তু লাভ হয়নি। কারণ ফাইনাল থার্ডে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলছে সেলেকাওদের আক্রমণ। ১৮ মিনিটের মাথায় পাকুয়েতার ক্রসে পা ছোঁয়াতে পারেননি গত ম্যাচে জোড়া গোলের নায়ক রিচার্লিসন। বল পায়ে ছোঁয়ালেই চলতি কাপ যুদ্ধে নিজের তৃতীয় গোল সেরে ফেলতে পারতেন। 




অনেক ভরসা করে ভিনিসিয়াস সুযোগ দিচ্ছেন তিতে। কিন্তু গত ম্যাচের এবারও সুযোগ হারাচ্ছিলেন ২২ বছরের উইঙ্গার। খেলার বয়স তখন ২৬ মিনিট। গোলের সহজ সুযোগ নষ্ট করলেন ভিনিসিয়াস। বক্সের ডান দিক থেকে তাঁর পা লক্ষ্য করে ক্রস বাড়ান রাফিনহা। বল ভিনিসিয়াসের পায়ে যেতেই তাঁর সামনে ছিলেন বিপক্ষের গোলকিপার। জোরাল শট মারতে না পারার জন্য হেলায় সেভ করে দেন সুইস ব্রিগেডের শেষ প্রহরী। যদিও সুযোগ আসছিল। কিন্তু গোলের দেখা গেল না। প্রথমার্ধের একেবারে শেষ দিকে চলে আসে আরও একটি সুযোগ। রাফিনহার ক্রসে গোলের পরিস্থিতি তৈরি হলেও এবার থিয়াগো সিলভা দলকে এগিয়ে দিতে ব্যর্থ হলেন। 


দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হতেই সুইসরা ছকে বদল আনে। তবে তাদের আক্রমণও ব্রাজিলকে সমস্যায় ফেলেনি। কারণ গোলকিপার অ্যালিসন বেকার আক্রমণ রোধ করছিলেন। তবে খেলার শেষ দিকে ৮৩ মিনিটে অবশেষে গোল করল ব্রাজিল। বাঁ প্রান্ত ধরে ভিনিসিয়াস-রদ্রিগো যুগলবন্দিতে বক্সের মধ্যে বল পান কাসেমিরো। ডান পায়ে জোরালো শট মারেন তিনি। সুইৎজারল্যান্ডের ডিফেন্ডারের শরীরে লেগে সেই বল জালে জড়িয়ে যায়। কিছু করার ছিল না সোমারের। ফলে অনেক লড়াই করে ম্যাচ পকেটে পুরে নকআউটে চলে গেল পাঁচবারের বিশ্বজয়ী দল। 



(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)