FIFA World Cup 2022, FRA vs TUN: এমবাপেকে আগলে রাখার অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের খেসারত, কাজরির গোলে ফ্রান্সের গরিমা ভাঙল টিউনিশিয়া
টিউনিশিয়া প্রথমার্ধেই লিড পেয়ে যেতে পারত। খেলার বয়স তখন মাত্র ৮ মিনিট। এই ওহাবি কাজরি ফ্রান্সের বক্সে হানা দিয়ে গোল করে দেন। কিন্তু ভার-এর সাহায্যে সেবার বেঁচে যায় ফ্রান্স।
সব্যসাচী বাগচী
টিউনিশিয়া: ১ ('৫৮ ওহাবি কাজরি)
ফ্রান্স: ০
একটা সময় মনে হচ্ছিল 'মিনি হাসপাতাল' হয়ে যাওয়া ফ্রান্স (France) কাপ যুদ্ধে এগিয়ে যেতে পারবে তো! তবে সবাইকে চমকে দিয়ে প্রথম দল হিসেবে চলতি বিশ্বকাপের নক আউটে (FIFA World Cup 2022) নক আউটে জায়গা করে নিয়েছিল দু'বারের বিশ্বকাপ জয়ী দল। আর তাই হয়তো ফিফা (FIFA) র্যাঙ্কিংয়ে অনেক পিছিয়ে থাকা টিউনিশিয়ার (Tunisia) বিরুদ্ধে প্রথম একাদশের ন'জন ফুটবলারকে বসিয়ে দিয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। আদ্রিয়েন ব়্যাবিয়ট, অলিভিয়ের জিহু, আন্তোনি গ্রিজমান, উসমান দেম্বেলের মতো বড় নাম রিজার্ভ বেঞ্চে আলো করে বসেছিলেন। সেই সুযোগে তৃতীয়বার কাপ জয়ের দাবিদার ফ্রান্সের গালে সজোরে চড় মেরে দিয়ে গেলেন ওহাবি কাজরি (Wahbi Khazri)। ম্যাচের ৫৮ মিনিটে। আর সেটাই জয়সূচক গোল হয়ে গেল। খেলার ফলাফল ১-০। টিউনিশিয়ার পক্ষে। বিশ্বকাপের মঞ্চে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে এই প্রথম জয় পেল টিউনিশিয়া।
তবে শেষদিকে ফ্রান্সও নিজেদের সম্মান বাঁচানোর জন্য একের পর এক আক্রমণ তুলে আনছিল। সবটাই কিলিয়ান এমবাপেকে (Kylian Embape) কেন্দ্র করে। এরমধ্যে আবার আট মিনিটের অতিরিক্ত সময়! সেই সময় স্টেডিয়ামের গ্যালারির দৃশ্য ছিল দেখার মতো। টিউনিশিয়ার সমর্থকরা নিজের দেশের জয় চাইবেন, সেটাই স্বাভাবিক। তবে গোটা বিশ্ব ছড়িয়ে থাকা নিখাদ ফুটবলপ্রেমীরাও টিউনিশিয়ার হয়েই গলা ফাটাচ্ছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে একেবারে ম্যাচের শেষ মুহূর্তে অ্যান্টনি গ্রিজম্যান (Antoine Griezmann) বিপক্ষের জালে বল জড়ান। ব্যস মনে হচ্ছিল মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে কোটি কোটি টিউনিশিয়ানদের কাছে এই রাত স্বপ্নভঙ্গের। কিন্তু ফুটবল দেবতা সঙ্গে ছিলেন। আর তাই সেই গোল বাতিল করে দিল 'ভার' (Video Assistant Referre)
কিন্তু কিলিয়ান এমবাপেকে কেন দ্য এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে শুরু থেকে নামালেন না হেড কোচ দিদিয়ের দেশঁ? উঠে আসছিল দুটি তথ্য।
প্রথম কারণ) কাপ যুদ্ধের আগে 'মিনি হাসপাতাল' হয়ে যাওয়া ফ্রান্স আগেই হেসেখেলে নক আউটে চলে গিয়েছে। তাই টপ ফর্মে থাকা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ তিন গোল করা স্ট্রাইকারকে আগলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দেশঁ।
দ্বিতীয় কারণ) এমবাপের সঙ্গে দেশজ ফরাসি মিডিয়ার সম্পর্ক খুব খারাপ! কাতারে পা রাখার পর থেকে একবারও মিডিয়ার সামনে আসেননি এমবাপে। গ্রুপ লিগের পর পর দুটো ম্যাচেই গোল করে ম্যাচের সেরা তিনি। বিশ্বকাপে ফিফার নিয়ম হল, ম্যাচের পর কোচের সঙ্গে ম্যাচের সেরাকে সাংবাদিক বৈঠকে আসতেই হবে। অস্ট্রেলিয়া ও ডেনমার্কের বিরুদ্ধে গোল করে ম্যাচের সেরা হওয়ার পরেও তিনি দেশঁ-র সঙ্গে সাংবাদিকদের সামনে আসেননি। যা গর্হিত অপরাধ। সঙ্গে সঙ্গে এমবাপেকে নিয়ে সতর্ক করে ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশনকে কড়া চিঠি পাঠায় ফিফা। জানিয়ে দেয়, এরকম অপরাধ ফের হলে এবার শাস্তির মুখে পড়বেন এমবাপে। 'ইগো' নিয়ে চলা ২৩ বছরের এমবাপেকে অনেক চেষ্টা করেও রাজি করাতে পারেননি ৫৪ বছরের দিদিয়ের দেশঁ। তাই কি টিউনিশিয়ার বিরুদ্ধে মাঠেই নামালেন না? কারণ ম্যাচ না খেললে তো সাংবাদিকদের সামনে আসার প্রশ্নই ওঠে না। ফিফা-র রোষ থেকেও বাঁচা যাবে।
কিন্তু এমবাপেকে আর আগলে রাখতে পারলেন না। টিউনিশিয়া লিড পেতেই ফ্রান্সের 'হেড স্যর'-এর ঘুম ভাঙে। দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য স্ট্রাইকারকে মাঠে নামাতে বাধ্য হন তিনি। অবশ্য এর আগে কাজের কাজ করে দিয়ে চলে যান ১০ নম্বর জার্সিধারী ওহাবি কাজরি। একক দক্ষতায় ফ্রান্সের বক্সে ঢুকে গোলিকপারকে পরাস্ত করে মাটি ঘেঁষা শটে জালে বল জড়িয়ে দেন তিনি।
অবশ্য টিউনিশিয়া প্রথমার্ধেই লিড পেয়ে যেতে পারত। খেলার বয়স তখন মাত্র ৮ মিনিট। এই ওহাবি কাজরি ফ্রান্সের বক্সে হানা দিয়ে গোল করে দেন। কিন্তু ভার-এর সাহায্যে সেবার বেঁচে যায় ফ্রান্স। তবে দ্বিতীয়ার্ধে আর দুর্গ আটকানো গেল না। গোল করে দিদিয়ের দেশঁ-র অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসকে ভেঙে গুড়িয়ে দিল টিউনিশিয়া।
এবারের বিশ্বকাপে এই ম্যাচের আগে গোলের দেখা পায়নি আফ্রিকার দলটি। গত শনিবার দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ১-০ গোলে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল টিউনিশিয়া। প্রথম ম্যাচে ডেনমার্ককে রুখে দিয়ে এক পয়েন্ট অর্জন করেছিল তারা। তবে তাতে কি! ভালো স্মৃতি রেখেই কাতার ছাড়বে ফ্রান্সের পাশে থাকা এই ছোট্ট দেশ। ওহাবি কাজরির দারুণ গোলের সৌজন্যে।
অনেকে ভাবতেই পারেন সম্ভাব্য বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে টিউনিশিয়া অঘটন ঘটালো। একেবারেই না। বরং দুই দলের ৯০ মিনিটের লড়াইয়ের ইতিহাস কিন্তু অন্য হিসেব দিচ্ছে। এই ম্যাচের আগে পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচে ফ্রান্স জিতেছে দু'বার। একবার জিতে মাঠ ছেড়েছে টিউনিশিয়া। এরমধ্যে ১৯৭১ সালে প্রথম সাক্ষাতেই ফ্রান্সকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছিলেন কাজরির পূর্বপুরুষরা। দুটি ম্যাচ হয়েছিল ড্র। তাহলে এই জয় নিয়ে ছয় ম্যাচের হিসেব করলে স্কোরলাইন বলছে ২-২। মনে হয় দিদিয়ের দেশঁ ইতিহাস ভুলে গিয়েছিলেন। না হলে বিপক্ষকে তাঁর 'লিলিপুট' মনে হচ্ছিল। দ্বিতীয়টাই ঠিক। প্রথম একাদশের ন'জনকে কেউ রিজার্ভ বেঞ্চে সাজিয়ে রাখতে পারেন!