FIFA World Cup 2022, JPN vs CRO: টাইব্রেকারে ডমিনিক লিভাকোভিচের হ্যাটট্রিক সেভ! সূর্যোদয়ের দেশকে হারিয়ে শেষ আটে ক্রোয়েশিয়া
গতিকে হাতিয়ার শুরু থেকেই ঝড় তুলেছিল হাজিমে মরিইয়াসুর ফুটবলাররা। সেই আক্রমণকে প্রতিহত করার জন্য ক্রোয়েটরা খেলাকে স্লো করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পরপর আক্রমণ করে গেলেও, বড় বড় দুর্গ ভেঙে পড়ে। এ তো স্রেফ গতবারের রানার্সদের রক্ষণ।
সব্যসাচী বাগচী
জাপান: ১ ('৪৩ দাইজেন মায়েদা) (১)
ক্রোয়েশিয়া: ১ ('৫৫ ইভান পেরিসিচ) (৩)
টাইব্রেকার
জাপান: ০, ০ , ১ , ০ (১)
ক্রোয়েশিয়া: ১, ১, ০, ১ (৩)
ইভান পেরিসিচ (Ivan Perisic) কিংবা লুক মদ্রিচ (Luka Modric) নয়। বরং মহা চাপের প্রি কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ক্রোয়েশিয়াকে (Croatia) কোয়ার্টার ফাইনাল নিয়ে চলে গেলেন ডমিনিক লিভাকোভিচ (Dominik Livakovic)। অনেক লড়াই করেও শেষ আটে যাওয়ার আগেই জাপানকে (Japan) নিজের জোড়া গ্লাভসে থামিয়ে দিলেন ক্রোয়েট গোলকিপার। টাইব্রেকারে হ্যাটট্রিক করে চলতি কাতার বিশ্বকাপে (FIFA World Cup 2022) ক্রোয়েশিয়ার আশা বাঁচিয়ে রাখলেন ডমিনিক লিভাকোভিচ। কারণ টাইব্রেকারে খেলার ফলাফল ক্রোয়েশিয়ার পক্ষে ৩-১। তবে তাই বলে জাপানের লড়াইকে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। মরুদেশে সূর্যাস্ত হলেও জাপান একটা স্টেটমেন্ট দিয়ে বিদায় নিল। সামুরাইয়ের দেশের ফুটবলাররা চোখে জলে মাঠ ছাড়লেও, ১২০ মিনিটের বেশি সময় ধরে তাঁদের লড়াই বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে অক্ষত রয়ে গেল।
লড়াই। লড়াই। আর শুধু লড়াই। নামেই ৯০ মিনিটের যুদ্ধ! কিন্তু সেটা ৯০ মিনিটে সীমাবদ্ধ থাকল না। ছাড়িয়ে অতিরিক্ত সময়। সেখানেও সেয়ানে সেয়ানে টক্কর। জাপান ও ক্রোয়েশিয়া, এই দুটি দলের অদম্য লড়াইয়ের সাক্ষী থাকল আল জানৌব স্টেডিয়াম এবং অগণিত ফুটবলপ্রেমী। অতিরক্ত সময় দুই দলের ডিফেন্ডার ও গোলকিপার বারবার পরীক্ষা দিলেন। ক্রোয়েশিয়া এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে, পিছিয়ে ছিল না জাপান। তারাও প্রতি আক্রমণে বাড়তি তাগিদ দেখিয়ে ম্যাচ নিজেদের দখলে নিয়ে আসার প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। স্বভাবতই গ্যালারিতে ভরা দুই দলের সমর্থকদের গা হয়ে যাচ্ছিল গরম। তবে ঠাণ্ডা মাথায় একের পর এক সেভ দিয়ে যাচ্ছিলেন দুই দলের গোলকিপার শুইচি গোন্দা ও ডমিনিক লিভাকোভিচ। ১২০ মিনিটেও স্কোরলাইন সেই ১-১। আর তাই চলতি কাপ যুদ্ধের প্রথম নক আউট ম্যাচ গড়াল টাইব্রেকারে।
তবে ৯০ মিনিটেও যে একের পর এক নাটক মঞ্চস্ত হয়েছে। প্রথমার্ধে এগিয়ে যাওয়ার সুবাদে, স্কোর লাইন জাপানের অনুকুলে থাকলে নিশ্চিতভাবে নিজের দেশের সমর্থকদের কাছে তিনিই 'ভিলেন' বনে যেতেন। প্রথমার্ধে দু'বার সেই সুযোগ নষ্ট করেন ইভান পেরিসিচ। দেশের হয়ে ১২০ নম্বর ম্যাচ খেলছেন। লুকা মদ্রিচের পর এই দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ফুটবলার। অথচ দু'বারই পোস্টের কাছে এসে খেই হারিয়ে ফেললেন! অবিশ্বাস্য! এই গোল তো বুড়ো বয়সের অসীম বিশ্বাসও মিস করবেন না! ৯-এর পর ৪০ মিনিট। দু'বার দলকে এগিয়ে দেওয়ার সুযোগ পেলেও হেলায় হারালেন। কীভাবে তিনি দুটি গোল জার্সি নম্বর চার, মিস করেছিলেন সেই ব্যাখ্যা নিজেও দিতে পারবেন না ইভান। তবে সেই লোকটাই ৫৫ মিনিটে গতবারের রানার্সদের হৃদয়ে এনে দিলেন প্রাণ!
একইসঙ্গে সমতা ফিরিয়ে প্রবাদপ্রতিম ডাভর সুকেরকে টপকে হয়ে গেলেন ক্রোয়েশিয়ার ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা। নয় গোল করে এতদিন এই রেকর্ড সুকেরের নামে লেখা ছিল। সর্বোচ্চ ১০ গোল করে শীর্ষে চলে গেলেন ইভান পেরেসিচ। এমনকি এহেন ইভান পেরেসিচ হলেন ক্রোয়েশিয়ার প্রথম ফুটবলার যিনি নিজের তিনটি বিশ্বকাপেই গোল করার নজির গড়লেন।
ম্যাচের বয়স তখন ৫৫ মিনিট। এগিয়ে থেকে দাপট দেখাচ্ছে জাপান। অনেকেই বলাবলি করতে শুরু করে দিয়েছেন যে, 'জাপানের ইতিহাস গড়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। ঠিক সেই সময় 'ভিলেন' থেকে 'হিরো' হয়ে ধরা দিলেন ইভান পেরিসিচ। খেলার গতির বিপরীতে দুরন্ত একটি গোল করেন তিনি। লভরেন ডান দিক থেকে বলকে সুইং করলে, পেরিসিচ হেডারে সেই রানিং বলকে নেটে জড়িয়ে দেন। একেবারে মাপা হেড। অসাধারণ একটি গোল। সমতা ফেরাল ক্রোয়েশিয়া।
আরও পড়ুন: Kylian Mbappe: কেন মিডিয়াকে 'ব্ল্যাক আউট' করেছিলেন? জানালেন সর্বোচ্চ ৫ গোল করে ফুটতে থাকা এমবাপে
অথচ এর আগে পর্যন্ত সামুরাইয়ের দেশ মাঠ দাপাচ্ছিল। ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই বড় সুযোগ পেয়েছিল জাপান। ওয়াতারু এনদোর ক্রসে ছয় গজ বক্সের মুখে ডিফেন্ডার শোগো তানিগুচির হেড অল্পের জন্য জালে জড়ায়নি। ১৩ মিনিটে ডি বক্সে জুনিয়া ইতোর বাড়ানো বলে ছুটে গিয়ে পা ছোঁয়াতে পারেননি ফরোয়ার্ড দাইজেন মায়েদা। ৪০ মিনিটে দাইচি কামাদার শট গোলপোস্টের উপর দিয়ে চলে যায়।
একের পর এক হানা দেওয়ার পর ৪৩ মিনিটেই কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পায় জাপান। ডান দিক থেকে বক্সে প্রতিপক্ষের ক্রস ক্লিয়ার করতে পারেনি ক্রোয়েট ডিফেন্ডাররা। গোলপোস্টের কাছ থেকে নিখুঁত শটে জাপানকে এগিয়ে দেন কিছুক্ষণ আগে গোল মিস করা দাইজেন মায়েদা। জার্মানি, স্পেনকে মাটি ধরিয়ে হারিয়ে দেওয়া। সেই দুটি ম্যাচ দেখার পর থেকেই মনে হচ্ছিল, এই জাপান কাপ যুদ্ধে আরও এগিয়ে যেতে পারে। মনে পড়ছিল বাংলায় একটা পুরনো প্রবাদ। 'সা রে গা মা পা ধা নি/বোম ফেলেছে জাপানি'। দাইজেন মায়েদাই যে 'মানব বোমা' রুপে ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণকে ছিন্নভিন্ন করে দেবেন সেটা হয়তো অনেকেই ভাবতে পারেননি। ফুটবল পন্ডিতদের সব হিসেব বদলে দিয়েছে সূর্যোদয়ের দেশ। স্রেফ নিজেদের গতি ও লড়াকু মনোভাব দিয়ে।
গতিকে হাতিয়ার শুরু থেকেই ঝড় তুলেছিল হাজিমে মরিইয়াসুর ফুটবলাররা। সেই আক্রমণকে প্রতিহত করার জন্য ক্রোয়েটরা খেলাকে স্লো করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পরপর আক্রমণ করে গেলেও, বড় বড় দুর্গ ভেঙে পড়ে। এ তো স্রেফ গতবারের রানার্সদের রক্ষণ। সেটাও ভেঙে পড়ল। তবে পিছিয়ে গেলেও হাল ছাড়েনি ক্রোয়েটরা। অন্যদিকে এগিয়ে থেকে গোল হজম করলেও, লড়ছিল জাপান। নাহলে লুকা মদ্রিচের গোলার মতো ভলি শুইচি গোন্দা রুখে দিতে পারতেন না। ৬৩ মিনিটে ক্রোয়েট অধিনায়কের সেই শট আটকে দেওয়ার জন্যই অতিরিক্ত সময়ে গড়াল ম্যাচ।
তবে সেখানেও ফয়সলা হল না। স্কোরলাইন ছিল সেই ১-১। ফলে ম্যাচের ফয়সলা হল টাইব্রেকারে। এবং শেষ পর্যন্ত ক্রোয়েশিয়ার গোলকিপার ডমিনিক লিভাকোভিচের কাছে হার মানল জাপান। তাঁর জোড়া গ্লাভস হ্যাটট্রিক সেভ করে দলকে নিয়ে গেলেন শেষ আটে। তবে তাই বলে জাপানের লড়াইকে খাটো করা যাবে না। মরুদেশে সূর্যোদয়ের দেশ সূর্যাস্তে গেলেও অনেক বছর মনে থাকবে ওদের লড়াই।
(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)