FIFA World Cup 2022, MAR vs ESP: শেষ আটে গিয়ে ইতিহাস লিখল আছরাফ-ইয়াসিনদের লড়াকু মরক্কো, ১০১৮টি পাস খেলেও স্পেনের বিদায়
বেলজিয়াম (০-২) ও কানাডাকে (০-১) হারানোর সঙ্গে, মরক্কো আবার কাপ যুদ্ধের প্রথম ম্যাচেই আটকে দিয়েছিল ক্রোয়েশিয়াকে। ফলে ওয়ালিদ রেগরাগুইয়ের ফুটবলাররা আত্মবিশ্বাসে ফুটবে, সেটা তো নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
সব্যসাচী বাগচী
মরক্কো: ৩ (টাইব্রেকার)
স্পেন: ০
ম্যাচটা যে কোনও থ্রিলার ওয়েব সিরিজকেও হার মানাবে! পরতে পরতে এত উত্তেজনা, দু'দলের এমন হার না মানা মনোভাব একমাত্র ফুটবলেই দেখা সম্ভব। বিশেষ করে মরক্কোর (Morocco) লড়াই টানটান উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচকে নিয়ে গিয়েছিল একেবারে অন্য মাত্রায়। তবে সব লড়াইয়ের ইতি থাকে। স্বাভাবিকভাবেই এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামের এই যুদ্ধও শেষ হল। ঠিক গত জাপান (Japan) বনাম ক্রোয়েশিয়া (Croatia) ম্যাচের মতোই। টাইব্রেকারে। আর এবার স্পেনের (Spain) কাপ যুদ্ধের স্বপ্ন মাটিতে মিশিয়ে দিলেন মরক্কোর গোলকিপার ইয়াসিন বুনু (Yassine Bounou)। তবে স্পেনে জন্ম নেওয়া মরক্কোর সবচেয়ে বড় তারকা আছরাফ হাকিমির (Achraf Hakimi) কথাও বলতে হবে। কারণ ইয়াসিন বুনু দুটি সেভ করার পর, জয়সূচক গোল করে মরক্কোকে কোয়ার্টার ফাইনালে নিয়ে গেলেন আছরাফ। প্রথমবার বিশ্বকাপের (FIFA World Cup 2022) শেষ আটে গিয়ে ইতিহাস লিখল মরক্কো। চোখের জলে বিদায় নিল ২০১০ বিশ্বকাপের জয়ী দল স্পেন। কারণ এই নিয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে চারবার টাইব্রেকারে নার্ভ বজায় রাখতে পারল স্প্যানিশরা।
ডিফেন্স। ডিফেন্স। এবং আগাগোড়া ডিফেন্স। দুই অর্ধ ও অতিরিক্ত সময় মিলিয়ে স্পেন মোট ১০১৮টি পাস খেলেছে। লুইস এনরিকের (Luis Enrique) ছেলেদের বল পজেশন ৭৬ %। তবে তাতে কি! ওয়ালিদ রেগরাগুইয়ের (Walid Regragui) মরক্কো দেখিয়ে দিল অদম্য জেদ ও হার না মানা মনোভাব থাকলে অতি বড় লড়াই, বিশ্বজয়ীদের বিরুদ্ধেও টক্কর দেওয়া সম্ভব। তবে এক্ষেত্রেও দুই গোলকিপার উনাই সিমন (Unai Simon) এবং ইয়াসিন বুনুর আলাদা করে তারিফ করতেই হবে। দু'জনের গ্লাভস ওয়ার্ক জাপান ও ক্রোয়েশিয়ার দুই গোলকিপার শুইচি গোন্দা (Shuichi Gonda) ও ডমিনিক লিভাকোভিচের (Dominik Livakovic) লড়াইয়ের তুলনা আনতে বাধ্য। এরমধ্যে আবার ১১১ মিনিটে চোটের জন্য মাঠ থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হলেন মরক্কোর অধিনায়ক রোমেইন সাইস (Romain Saiss)। বাকিটা সময় ১০ জনে খেললেও, হাল ছাড়েনি এই দল। ফলে দুই অর্ধের মতো অতিরিক্ত সময়ের খেলার ফলাফলও সেই গোলশূন্য!
শেষ আটে যাওয়ার এই ম্যাচটা খেলতে নামার আগে ২০১০ সালের বিশ্বজয়ী স্পেন তাদের প্রতিপক্ষ থেকে মাত্র দু'টি জয়ের ব্যবধানে এগিয়ে ছিল। এর আগে তিনবারের সাক্ষাতে দু'বার জয়ের মুখ দেখেছিল স্পেন। তবে স্প্যানিশদের কাছে গত রাশিয়া বিশ্বকাপের স্মৃতি মোটেই সুখের ছিল না। কারণ, ২০১৮ সালে ২-১ গোলে পিছিয়ে থাকা ম্যাচের একেবারে শেষ মুহূর্তে গোল করেছিলেন ইয়াগো অ্যাসপাস। সমতা ফিরিয়ে ২-২ করার জন্য হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিল স্পেন। তবে এবার কিন্তু এই মরক্কো দল একেবারে অন্য মেজাজে খেলছে। কাপ যুদ্ধের শুরু থেকে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত খেলার ফলাফল ছিল গোলশূন্য। তবে ৯০ মিনিটে ড্যানি ওলমোর শট শরীর ছুড়ে ইয়াসিন বুনু সেভ না করলে, তাঁর সতীর্থদের ডিফেন্স করার লড়াই জলে চলে যেত।
ম্যাচটা দেখার সময় জাপান বনাম ক্রোয়েশিয়ার যুদ্ধটা মনে পড়ে যাচ্ছিল। যুদ্ধই বটে। চলতি কাপ যুদ্ধে দুই দলের অদম্য লড়াইয়ের সাক্ষী থেকেছে প্রি কোয়ার্টার ফাইনালের গত ম্যাচ। মঙ্গলবার এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামের ম্যাচটা যেন গত লড়াইয়ের 'রিমেক'! প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধেও ফলাফল গোলশূন্য! ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে স্পেন যতই এগিয়ে থাকুক, এবার কাতারের মহারণে বারবার হিসেব বদলে গিয়েছে। লুইস এনরিকের দলই তো এর সবচেয়ে বড় সাক্ষী। কোস্টারিকাকে ৭ গোল মারলেও, জার্মানির কাছে একেবারে শেষ মুহূর্তে গোল খেয়েছিল তাঁর দল। আর জাপানের বিরুদ্ধে গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচে ১–২ গোলে হারের লজ্জা তো এনরিকে আজীবন বয়ে বেড়াবেন।
অন্যদিকে বেলজিয়াম (০-২) ও কানাডাকে (০-১) হারানোর সঙ্গে, মরক্কো আবার কাপ যুদ্ধের প্রথম ম্যাচেই আটকে দিয়েছিল ক্রোয়েশিয়াকে। ফলে ওয়ালিদ রেগরাগুইয়ের ফুটবলাররা আত্মবিশ্বাসে ফুটবে, সেটা তো নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। বল পজেশন থেকে বেশি পাস খেলা, সবদিক থেকেই এগিয়ে ছিল স্পেন। তবে এতে লাভ হয়নি। কারণ লড়াকু মরক্কো মাঝেমধ্যে প্রতি আক্রমণে ওঠার সঙ্গে, ডিফেন্স আগলেও বিপক্ষের চোখে চোখ রাখছিল। স্প্যানিশ আর্মাডার বিরুদ্ধে তুলে দিয়েছিল এগারো জনের দেওয়াল!
গত ম্যাচ থেকে পাঁচটি বদল করে স্পেন শুরু থেকেই ছোট ছোট পাসে খেলতে থাকে। বেশিরভাগ সময় বল তাদের দখলেই ছিল। কিন্তু উল্লেখযোগ্য সুযোগ তৈরি করতে পারছিল না। ১২ মিনিটে ফ্রি কিক পায় মরক্কো। কিন্তু আছরাফ হাকিমির শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে যায়। ৩৩ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে মরক্কোর মাসাওয়ির জোরালো শট সেভ করেন স্পেনের গোলকিপার উনাই সিমন। বিরতির আগে সোফিয়ান বুফালের ক্রসে কাছ থেকে নায়েফ আগের্দের হেড ক্রসবারের ওপর দিয়ে উড়ে যায়। প্রথমার্ধে গোলের জন্য যে একটি শট নিতে পেরেছে স্পেন, সেটিও ছিল লক্ষ্যভ্রষ্ট! এটি বিশ্বকাপের ম্যাচের প্রথমার্ধে তাদের সবচেয়ে কম শট নেওয়ার রেকর্ড।
৫৫ মিনিটে গোলের সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল স্পেন। অ্যাসেনসিও ফ্রি-কিক থেকে ওলমোকে পাস দেন। ওলমোর শট মারলেও বল জালে ঢুকল না। মরক্কোর গোলকিপার ইয়াসিন বুনু করে বলটি ক্লিয়ার করে দেন। ফলে গোলের মুখ খুলল না। দ্বিতীয়ার্ধেও স্পেন সেভাবে কিছু করে উঠতে পারছে না। বল পজেশন ও পাসের নিরিখে স্পেন এগিয়ে থাকলেও, ম্যাচ রিডিংয়ের দিক থেকে অনেক এগিয়ে ছিল উত্তর আফ্রিকার এই দল। ফলে তিকিতাকার জালেই আটকে যাচ্ছিল স্পেন। তাদের খেলার যেন কোনও গতিই নেই! আর তাই দ্বিতীয়ার্ধেও খেলার ফলাফল ছিল গোলশূন্য। এমনকি অতিরিক্ত সময়েও কোনও দল এগিয়ে যেতে পারল না। ফলে ম্যাচ গড়াল টাইব্রেকারে।
আর সেখানে লড়াই করার মূল্য পেল মরক্কো। ইয়াসিন বুনুর জোড়া সেভ এবং আছরাফ হাকিমির শট স্প্যানিশ শিবিরকে কাঁদাতে বাধ্য করল। টাইব্রেকারে ৩-০ ব্যধধানে জিতে কাপ যুদ্ধের ইতিহাসে প্রথমবার কোয়ার্টার ফাইনালে চলে গেল উত্তর আফ্রিকার দল।
(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)