সুমন মজুমদার


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

৪১৭টি টেস্ট উইকেট।  ভারতীয় অফ স্পিনার হিসাবে যা কিনা সর্বোচ্চ।  ওয়ান ডে ক্রিকেটে ২৬৯ টি উইকেট। ভারতীয় স্পিনার হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। কিন্তু এসব কিছুই হতো না। তিনি এতদিনে কানাডায় সাধারণ জীবন যাপন করতেন। আর টিভির সামনে বসে ভারতীয় দলের ম্যাচ দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলতেন নিজের অজান্তেই। ভাবতেন, একটা সুযোগ আমাকে কেউ দিল না! আমিও দেখিয়ে দিতাম নাহলে। 


যাক, সেসব আফসোসের আর দরকার পড়েনি। হরভজন সিং ভারতীয় ক্রিকেটে ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছেন। চল্লিশের ঘরে সবে পা রাখলেন ভাজ্জি। ক্রিকেটার হিসেবে কেরিয়ার প্রায় শেষ। তবে ক্রিকেটে তিনি যা রেখে গিয়েছেন তাতে ভাজ্জি নামটা ভবিষ্যতে উচ্চারিত হলেই অনেকগুলো ছবির কোলাজ ফুটে উঠবে।  বিশেষ করে ইডেন টেস্টে একার হতে ভাজ্জির অস্ট্রেলিয়াকে শেষ করে দেওয়ার সেই ঐতিহাসিক ছবি।  সুযোগ সবসময় আসে না। আর এলে কাজে লাগাতে না পারলে হাত কামড়াতে হয়। এই আপ্তবাক্য ভাজ্জি বিনা তর্কে মেনে  নেন। তাঁর কাছে সুযোগ এসেছিল একবারই। তিনি সেটা ফস্কে যেতে দেননি।


২০০০ সাল। ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমি তাঁকে বাদের তালিকায় ফেলে দিয়েছিল। হতাশ ভাজ্জি ভেবেছিলেন এখানেই শেষ। সেই সময় ভাজ্জির গ্রামের অনেক যুবক কানাডায় চলে যেতেন কাজের খোঁজে। ভাজ্জি সেইসব পড়শী যুবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা শুরু করলেন। যদি একটা কাজের খোঁজ পাওয়া যায় আর কী! ক্রিকেট থেকে নির্বাসন হচ্ছেনই। তিনি এমনটাই ধরে নিয়েছিলেন। তাই বাকি জীবনটা কিছু একটা করে তো চালাতে হবে! কিন্তু ভাগ্যদেবী তাঁর জীবনের জাবেদা খাতায় অন্য কিছু লিখে রেখেছিলেন। ভারতীয় দলের তৎকালীন  ক্যাপ্টেন সৌরভ গাঙ্গুলি নির্বাচকদের বললেন, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে হোম সিরিজে তিনি হরভজন কে দলে চান। ব্যস, ভাজ্জির ক্রিকেট জীবনের চাকা ঘুরে গেল তারপর থেকেই। 


ভাজ্জির কথায়, "দাদা সেদিন আমার ওপর ভরসা না রাখলে এখন আমি কানাডায় থাকতাম। ক্রিকেট খেলা আমার আর হত না। ওই হোম সিরিজ আমার কাছে মরণ বাঁচন ছিল। উইকেট নেওয়া ছাড়া আমার সামনে আর কোনও রাস্তা খোলা ছিল না। দাদা ভরসা করেছিল বলে নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছিলাম। নাহলে ক্রিকেট কেরিয়ার ২০০০ সালেই শেষ হয়ে যেত।" অনিল কুম্বলে চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়ায় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন ভাজ্জি। তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথম ম্যাচ ছিল মুম্বাইতে। ভাজ্জি ওই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে চার উইকেট নেন। কিন্তু ভাজ্জি জাত চিনিয়েছেন ইডেনে দ্বিতীয় টেস্টে। প্রথম ভারতীয় বোলার হিসাবে টেস্ট হ্যাটট্রিক করে। ভাজ্জি বলেছেন, "সেদিন আমি রাহুল দ্রাবিড়কে দেখে অবাক হয়েছিলাম। জীবনে প্রথমবার মাঠে ওকে ওভাবে সেলিব্রেট করতে দেখি। দলের সবাই সেলিব্রেট করছিল। আমিতো সবসময় বলি, ওটা গোটা টিমের হ্যাটট্রিক।"


জীবনে অনেকবার ভাজ্জি কানাডায় গিয়েছেন। যতবার গিয়েছেন ততবার তাঁর মনে হয়েছে, দাদা সেদিন ভরসা না রাখলে তিনি এতদিনে হয়তো ওখানেই থাকতেন। ভাজ্জি নিজেও বারবার এই কথা বলেছেন। বারবার বলেছেন, দাদাই আমার ক্যাপ্টেন।