Jhulan Goswami, INDW vs ENGW : বিদায়বেলায় বোলার ঝুলনের সৌজন্যে সাহেবদের হোয়াইটওয়াশ করে দেশে ফিরছে হরমনের ভারত
Jhulan Goswami, INDW vs ENGW : প্রথম স্লিপে দাঁড়িয়ে থেকে সেই ক্যাচটা ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে চিরাকালের জন্য ফ্রেম করে রেখে দেওয়া উচিত। বয়স প্রায় ৪০। উচ্চতা ছয় ফুটের বেশি। ফিটনেস এখনও দারুণ।
সব্যসাচী বাগচী
বর্ণোজ্জ্বল কেরিয়ারে অসংখ্য মাইলস্টোন গড়েছেন ঝুলন গোস্বামী (Jhulan Goswami)। কেরিয়ারের শেষ ম্যাচেও একটি দুর্দান্ত মাইলস্টোন গড়লেন। ইংল্যান্ডের (England Womens Cricket Team) বিরুদ্ধে ৫৫টি (৯.১ ওভার) বল করলেই একমাত্র মহিলা ক্রিকেটার হিসেবে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ হাজার বল করার কৃতিত্ব অর্জন করতে পারতেন এই প্রবাদপ্রতিম। সেই মাইলস্টোনও নিজের নামে করে নিলেন 'চাকদহ এক্সপ্রেস' (Chakdah Express)। ১০ ওভারে ৩০ রান। ৩টি মেডেন। ২ উইকেট। একদিনের ক্রিকেটে ২৫৫টি উইকেটে থামলেন ঝুলন। আন্তর্জাতিক মঞ্চে সব ফরম্যাট মিলিয়ে সংখ্যাটা দাঁড়াল সবার উপরে ৩৫৫ উইকেটে। এমন পারফরম্যান্সের পরেও ভারতের জয় সহজে এল না। শেষ বেলায় বাড়ল রক্তচাপ। যদিও সব চাপ কাটিয়ে ব্রিটিশদের ডেরায় তাদের ১৫৩ রানে অল আউট করার সুবাদে ১৬ রানে জিতল ভারত। একইসঙ্গে এই জয়ের জন্য একদিনের সিরিজে বিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করল ভারতের প্রমীলাবাহিনী (Indian Womens Cricket Team)।
২০১১ বিশ্বকাপ অভিযানে নামার আগে মহেন্দ্র সিং ধোনির (Mahendra Singh Dhoni) টিম ইন্ডিয়া (Team India) একটা শপথ নিয়েছিল। যে সচিন তেন্ডুলকরের (Sachin Tendulkar) জন্যই ২ এপ্রিলের রাতে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে কাপ হাতে তুলতে হবে। ঝুলনকে পূর্ণ মর্যাদায় বিদায় জানানোর জন্য হরমনপ্রীত কৌর-এর (Harmanpreet Kaur) ভারত ব্যাটিং ভরাডুবির পর এমন কোনও শপথ নিয়েছিল কিনা জানা নেই। তবে 'ক্রিকেটের মক্কা' লর্ডসে (Lords) ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নিয়মরক্ষার তৃতীয় একদিনের ম্যাচে মাত্র ১৬৯ রানে অল আউট হয়ে যাওয়ার পর এমন শপথ নিলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।
কম রানের পুজি হাতে নিয়ে ঝুলন, রেণুকা সিং (Renuka Singh) ও রাজেশ্বরী গায়কোয়াড়দের (Rajeshwari Gayakwad) দুরন্ত বোলিং দেখে বারবার মনে হচ্ছিল, প্রিয় 'ঝুলু'-দিকে সসম্মানে বিদায় জানানোর জন্য দলটা একজোট হয়ে পারফর্ম করছে। কম রান চেজ করতে নামলেও একটা সময় ২৭ রান তুলে দিয়েছিলেন দুই ব্রিটিশ ওপেনার। রান ধীর গতিতে উঠলেও, উইকেটের দেখা মিলছিল না। বাড়ছিল চাপ। ঠিক সেই সময় দুই ওপেনার এমা ল্যাম্ব ও ট্যামি বিউমন্ট। ইংল্যান্ড তখন ৩৪ রানে ২ উইকেট হারিয়ে কাঁপছে। ঝুলন নিজে ও তাঁর নির্দেশেই বোলাররা স্টাম্প লক্ষ্য করে বোলিং করছিলেন। সেই ছকেই এল তৃতীয় সাফল্য। ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন ঝুলন। তবে 'বোলার ঝুলন'-এর ঝুলি খালি থাকল না। ১০.৬ ওভারে ঝুলনের বলে হার্লিন দেওলের হাতে ধরা পড়েন অ্যালিস ক্যাপসি। ইংল্যান্ড ৩৯ রানে ৩ উইকেট হারায়। এরপর আরও একটি উইকেট নিলেন বঙ্গ তনয়া।
আর প্রথম স্লিপে দাঁড়িয়ে থেকে সেই ক্যাচটা ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে চিরাকালের জন্য ফ্রেম করে রেখে দেওয়া উচিত। বয়স প্রায় ৪০। উচ্চতা ছয় ফুটের বেশি। ফিটনেস এখনও দারুণ। বাজ পাখির মতো এই ক্যাচ ধরা ম্যাথিউ হেডেন, মার্ক ওয়া-র পারফরম্যান্স মনে পড়িয়ে দেয়। ১৪.১ ওভারে রাজেশ্বরী গায়কোয়াড়ের বলে স্লিপে সোফি একলেস্টোনের দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেন ঝুলন গোস্বামী। ৩ বল খেলেও খাতা খুলতে পারেননি সোফি। ইংল্যান্ড ৫৩ রানে ৬ উইকেট হারায়।
দেখতে দেখতে ৬৫ রানে সাত উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। আর সেখান থেকেই শুরু হল অধিনায়ক অ্যামি জোনস ও চার্লি ডিনের পাল্টা লড়াই। তবে শেষরক্ষা হল না। অষ্ঠম উইকেটে ৩৮ রান যোগ করার পর সাজঘরে ফিরে যান অ্যামি জোনস। ডিপ স্কয়ার লেগে থাকা হার্লিন দেওল সামনের দিকে ডাইভ মেরে দুরন্ত ক্যাচ ধরেন। বোলার সেই রেণুকা। এরপর মহিলা দলকে ম্যাচ জেতার জন্য বেশি বেগ পেতে হয়নি। ঝুলনের বিদায়ী ম্যাচে সিম বোলিং-এ মাতিয়ে দিলেন হিমাচলের রেণুকা। নিলেন ২৯ রানে ৪ উইকেট।
আরও পড়ুন: Jhulan Goswami, INDW vs ENGW : 'ঝুলু দি'-র বিদায়ী ম্যাচে লর্ডসে দাঁড়িয়ে কাঁদলেন হরমন, ভাইরাল ভিডিয়ো
ম্যাচের আগে আবেগতাড়িত হরমনপ্রীতকে কাঁদতে দেখা যায়। এমনকী ঝুলনকে তিনি টস করতেও সঙ্গে নিয়ে যান। তব টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতেই নামতে হয় ভারতীয় দলকে। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই চরম বিপাকে পরে ভারতীয় দল। ২৯ রানেই চার উইকেট হারিয়ে ফেলে ভারত। শেফালি এবং ইয়াস্তিকা উভয়েই শূন্য রানে আউট হন। হরমনপ্রীতও চার রানের বেশ করতে পারেননি। হার্লিন দেওল তিন রানে সাজঘরে ফেরেন।
পরপর উইকেট হারানোর পর অবশেষে পঞ্চম উইকেটে স্মৃতি ও দীপ্তি মিলে ভারতের হয়ে হাল ধরার চেষ্টা করেন। দুইজনে ৫৮ রানের পার্টনারশিপ গড়েন। তবে দুর্ভাগ্যবশত পুল শট মারতে গিয়ে ব্যাটের কাণায় বল লেগে ৫০ রানেই বোল্ড হন স্মৃতি। পূজা বস্ত্রকর ক্ষণিকের জন্য দীপ্তির সঙ্গে মিলে ফের একবার ভারতীয় ইনিংসকে পথে ফেরানোর চেষ্টা করেন বটে। দুইজনে সপ্তম উইকেটে ৪০ রান যোগ করেন। তবে পূজা ২২ রানে আউট হন। দীপ্তি কার্যত একাই লড়াই চালিয়ে যান। তিনি ৬৮ রানে অপরাজিত থাকেন। কেট ক্রস ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বাধিক চার উইকেট নেন। নিজের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রথম বলে শূন্য রানে আউট হন ঝুলন। ফলে মাত্র ১৬৯ রানে গুটিয়ে যায় ভারত।
নিজের দুই দশকের আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের শুরুটা ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেই করেছিলেন ঝুলন। আর সেই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়েই শেষ হল তাঁর আন্তর্জাতিক কেরিয়ার। মহিলাদের একদিনের ক্রিকেটের সর্বকালের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারীর শেষ ম্যাচ ঘিরে আবেগ এবং উত্তেজনা থাকাটাই স্বাভাবিক। এই কারণেই এই ম্যাচ বিশেষ গুরুত্বও পাচ্ছে। ম্যাচের আগে এক ঘটনাই ভারতীয় দলের অন্দরমহলের সমীকরণ এবং ঝুলনের প্রতি বাকি ক্রিকেটারদের সম্মানের ছবিটা স্পষ্ট করে দেয়। হয়তো তাই প্রিয় 'ঝুলু'-দির জন্যই সাহেবদের হোয়াইটওয়াশ করে দেশে ফিরছে ভারতের প্রমীলাবাহিনী।