নিজস্ব প্রতিনিধি: ছিয়াশির সেই সন্ধে। নিজের সেন্টার সার্কেল থেকে বল ধরে প্রায় ষাট গজ ধরে ইংল্যান্ডের একের পর এক ছজনকে কাটিয়ে গোল করে এলেন। চোখের পাতা পড়েনি সেদিন। এমনও হয়! গোল অফ দ্য সেঞ্চুরি।  সাদা-কালো টিভির দিকে সবাই কেমন অবাক হয়ে তাকিয়ে। কী আছে বাঁ পায়ে। জাদু! আচ্ছা, ইংরাজিতে স্কিলের বাংলা প্রতিশব্দ কি 'জাদু' হতে পারে?
আর বুধবার রাতে যখন মৃত্যুর খবর এল, তখন আবারও সবাই হতভম্ব। 
মারাদোনা তো শুধু একজন বিশ্ববন্দিত ফুটবলার নন, তিনি এক উদ্দাম জীবন। যার বাঁকে বাঁকে বিতর্ক, তাকে টপকে কেবল ফুটবলেই যাপন। বিশ্ব হারাল তার এমন এক কৃতী সন্তানকে, যাঁর চর্চায় আগামি আরও কতযুগ যে কেটে যাবে। 
সাড়ে ৫ ফুটের লোকটা, আর্জেন্তিনার এক শ্রমিক পরিবারের পঞ্চম সন্তান। বিশ্ব ফুটবলের অবিসংবাদী রাজপুত্র। 


  • COMMERCIAL BREAK
    SCROLL TO CONTINUE READING

    বুয়েনস আইরেসে বড় হয়ে ওঠা মারাদোনা মাত্র ১৬ বছর বয়সে  সুযোগ পান আর্জেন্তিনার জুনিয়র দলে। টানা ৫ বছরে খেলেন ১৬৭ ম্যাচ, গোল করেন ১১৬।

  • ১৭ বছর বয়সেই আর্জেন্তিনার জাতীয় দলে।

  • বোকা জুনিয়র্সে মাত্র ১ বছর খেলেন। তারপরেই বার্সেলোনা। ৪০  ম্যাচে ২৮ গোল!

  • হঠাৎই বার্সেলোনা ছেড়ে যোগ দেন নাপোলিতে। নাপোলির হয়ে খেলেন ১৮৮ ম্যাচ। গোল করেন ৮১।

  • দেশের হয়ে ৪টি বিশ্বকাপ খেলেন তিনি। ১৯৮২ তে প্রথম। ততদিনে বিশ্ব ফুটবলে নিজের ছাপ রাখতে শুরু করেছেন। প্রথম বিশ্বকাপে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডার পেরিয়ে মাত্র ২ গোল।

  • তারপরই ইতিহাস। ১৯৮৬। মহাতারকার জন্ম। আপাত সাধারণ আর্জেন্টিনা দল নিয়ে পশ্চিম জার্মানিকে ৩-২ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ তোলেন অধিনায়ক মারাদোনা।

  • ১৯৯০য়ে মধুর প্রতিশোধ নেয় জার্মানি। দলকে ফাইনালে তুলেও মারাদোনার হাতে উঠল না বিশ্বকাপ।

  • ১৯৯৪ য়ে খেলেন শেষ বিশ্বকাপ। তবে তা ছিল নেহাতই কলঙ্কময়। মাদক পরীক্ষায় পাশ করতে না পেরে মাত্র ২ ম্যাচ খেলেই ফিরে যেতে হয় দেশে।

  • দেশের হয়ে ৯১ ম্যাচে ৩৪ গোল করেন মারাদোনা।

  • ক্লাব ফুটবলে করেছেন ২৫৯ গোল। ম্যাচ খেলেছেন ৪৯১। 

  • ওই একই বছরে কোচ হিসেবে  কাজ শুরু করেন। কিন্তু ফুটবলার হিসেবে যে উচ্চতায় বিরাজ করেছেন, তার ধারেপাশেও ছিল না তাঁর কোচিং জীবন।


মেক্সিকো বিশ্বকাপে একটা সাধারণ আর্জেন্তিনা দলকে নিয়ে যেভাবে পশ্চিম জার্মানি, বেলজিয়াম আর ইংল্যান্ডকে টপকে গিয়েছিলেন ২৫ বছরের যুবক, তা বিস্ময়েরই। কারণ, বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে এমনটা আর দেখা যায় নি।
ইংলন্ডের বিরুদ্ধে প্রথম গোল নিয়ে যা বিতর্ক, তাতে যা জবাব দিয়েছিলেন, তা তাঁকেই মানায়৷ 'ঈশ্বরের হাত' বিশ্ব ফুটবলের এমন এক কয়েনেজ হয়ে দাঁড়ায়, যার তুলনা মেলা ভার। ঈশ্বর তখনই বোধহয়, তাঁর বরপুত্রের পাশে এসে দাঁড়ান, আর একই ম্যাচে প্রতিপক্ষের ৬ জন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে সেই গোল, যা দেখে টিভি ধারাভাষ্যকার বলে ওঠেন,  'কোন গ্রহ থেকে এসেছেন'?
৬০ বছরের জন্মদিন কাটতে না কাটতেই মস্তিষ্কের অপারেশনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন। ম্যানেজারের কথায়, সেরেও উঠছিলেন। বাড়ি যাওয়ার জন্য বায়না করছিলেন। শেষরক্ষা হল না। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন ফুটবলের রাজপুত্র।  এমন একদিনে, যেদিন তাঁর জীবনের আইকন ফিদেল কাস্ত্রোরও মৃত্যুদিন।