জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: গত ২০ নভেম্বর মায়ের ১০০তম জন্মদিন পালন করেছিলেন। কে জানত, মায়ের আগে চিরঘুমে চলে যান এডসন অ্যারানটিস দো নাসিমেন্ট (Edson Arantes do Nascimento)। গত ৩০ ডিসেম্বর মধ্যরাতে ৮২ বছর বয়সে মারা যান পেলে (Pele)। তবে তাঁর বৃদ্ধ মা ডোনা সেলেস্তে (Maria Lucia do Nascimento) জানেন না, ছেলে আর বেঁচে নেই। পেলের একমাত্র জীবিত বোন মারিয়া লুসিয়া দো নাসিমেন্ট দেখাশোনা করেন ১০০ বছর বয়সী সেলেস্তের। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

লুসিয়া নাসিমেন্ট সাংবাদিকদের বলেন, 'আমাদের কথা হচ্ছে। কিন্তু তিনি পরিস্থিতি জানেন না। তিনি আসলে তাঁর নিজের দুনিয়ায় আছেন।' শৈশবে পেলেকে ‘ডিকো’ নামে ডাকতেন তাঁর মা। এখনও ডিকো নামটা শুনলেই সাড়া দেন তিনি। নাসিমেন্ট বলেন, "আমি যখন নামটা উচ্চারণ করি তিনি চোখ খুলে তাকান এবং বলেন, 'আমরা ওর জন্য প্রার্থনা করি।' কিন্তু আমি আসলে কী বলছি সেদিকে খেয়াল নেই তাঁর।" 


দীর্ঘদিন ধরেই ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন কিংবদন্তি পেলে। কাতার বিশ্বকাপের (FIFA World Cup 2022) সময় তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছিল। ২৯ নভেম্বর তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এরপর বড়দিনের কয়েকটা দিন পরেই থেমে যায় পেলে-র ইনিংস। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। পেলে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে পেলে বিদায় নিলেও এখনও জীবিত আছেন তাঁর মা। এক মাস আগেই মাকে শততম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন কিংবদন্তি ফুটবলার নিজেই। ইনস্টাগ্রামে মায়ের সঙ্গে ছবি পোস্ট করে দিয়েছিলেন আবেগঘন বার্তা।



পেলে লিখেছিলেন, 'আজ আমরা ডোনা সেলেস্তের ১০০তম জন্মদিন পালন করলাম। ছোটবেলা থেকেই তিনি আমাকে ভালোবাসা ও শান্তির মূল্য শিখিয়েছেন। তাঁর সন্তান পেরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একশটিরও বেশি কারণ রয়েছে আমার। প্রিয় মা, গভীর আবেগ নিয়ে বিশেষ দিনে তোমার সঙ্গে তোলা ছবিগুলো আমি শেয়ার করছি। তোমার উপহার দেওয়া প্রতিটি দিনের জন্য ধন্যবাদ।'  


পেলের মা, সেলেস্তে ব্রাজিলের টেস কোরাকো শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পেলের জন্মের পর পরিবার নিয়ে তাঁরা চলে আসেন বুরাউতে। কিশোর পেলের ফুটবল যাত্রার শুরু সেখান থেকেই। ফুটবল কেরিয়ারে পেলেকে সব ধরনের উৎসাহ জুগিয়েছেন তাঁর মা। সম্প্রতি ও গ্লোবো নামক সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে 'ব্রাজিলিয়ান মাদার অফ দ্য ইয়ার' স্বীকৃতি পেয়েছেন সেলেস্তে।


বর্তমানে ব্রাজিলের স্যান্টোস শহরে থাকেন সেলেস্তে। পেলের শেষকৃত্যও করা হবে সেখানেই। তবে এর আগে কিংবদন্তি ফুটবলারের ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হবে স্যান্টোসের ক্লাব প্রাঙ্গনে। এরপর স্যান্টোসের রাস্তায় হবে 'শেষ যাত্রা'। সেখান থেকে পেলের মৃতদের নিয়ে যাওয়া হবে মায়ের কাছে। মায়ের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার পর তাঁকে সমাহিত করা হবে মেমোরিয়া নেক্রোপোল একুমেনিকা নামক সমাধিস্থলে। 


আরও পড়ুন:  Pele Passes Away: 'ফুটবল সম্রাট'-এর কেরিয়ারের ১০ অজানা তথ্য, জানলে চমকে উঠবেন


আরও পড়ুন: Pele Passes Away: কর্কটগ্রাসে অস্তাচলে 'ফুটবল সম্রাট', চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দিয়েগোর সঙ্গে জমে উঠবে আড্ডা


আরও পড়ুন: Pele Passes Away: শেষবারের মতো প্রিয় স্যান্টোসে ফিরছেন চিরঘুমে চলে যাওয়া 'ঘরের ছেলে' পেলে



মৃত্যুর খবর জানার পর হাসপাতালের বাইরে জড়ো হতে থাকেন সাধারণ মানুষ। ব্রাজিলে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক চলছে এখন। শেষবার এমন রাষ্ট্রীয় শোক পালন হয়েছিল রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে। কিন্তু ব্রাজিলিয়ানদের কাছে পেলের মাহাত্ম্য অন্যরকম। ব্রাজিলের রাস্তাঘাটের চিত্রই বলে দিচ্ছে যে পেলে আর নেই। অগণিত মানুষের গায়ে আইকনিক ১০ নম্বর জার্সি। উঁচু বিল্ডিংগুলোতে জ্বলজ্বল করছে পেলের ছবি। 


ব্রাজিলের নানা শহর তো বটেই, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকেও ভক্তদের ভিড় এখন স্যান্টোসমুখী। আবেগ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধায় শেষবার প্রিয় তারকাকে বিদায় জানানোর প্রহর গুনছে সবাই। ব্রাজিলীয়রা নববর্ষ উদযাপনেও স্মরণ করেছে তিনটি বিশ্বকাপ জেতা একমাত্র এই কিংবদন্তিকে। কোপাকাবানা বিচে নতুন বছর বরণের সবচেয়ে বড় আয়োজনে বিশাল জায়ান্ট স্ক্রিনে 'ফুটবল সম্রাট'-এর ছবি আর ভিডিয়ো দেখে পেলেকে স্মরণ করেছেন অগণিত মানুষ।


স্যান্টোসের ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে ভক্তদের শ্রদ্ধা জানানো শেষে মঙ্গলবার শুরু হবে পেলের অন্তিমযাত্রা। স্যান্টোসের বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে সেই যাত্রা শেষ হবে নেক্রোপোল একুমেনিকাতে। 'ফুটবল সম্রাট'-কে সমাধিস্থ করা হবে সেখানেই। সেই অনুষ্ঠানে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ, থাকতে পারবেন শুধু পরিবারের সদস্যরা।  



(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)