Ranji Trophy: রোমহর্ষক ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট থেকে Manoj Tiwary-র ব্যর্থতা, কাটাছেড়ায় Arun Lal, Saurasish
খেলছে বাংলা। জিতছে বাংলা।
সব্যসাচী বাগচী: শেষদিনেই বাড়ছে রক্তচাপ। শেষদিনেই সব অকল্পনীয় কান্ড ঘটাচ্ছে বঙ্গব্রিগেড। ৩৪৯ রান তাড়া করে জয় হোক, কিংবা ২৩৯ রানের পুঁজি নিয়ে ছয় পয়েন্টের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়া। চলতি রঞ্জি ট্রফিতে (Ranji Trophy) বঙ্গব্রিগেড দাপট বজায় রেখে চলেছে। বাংলার (Bengal) আগুনে বোলিং ও লোয়ার অর্ডারে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের সৌজন্যে এই মুহূর্তে ২ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে রঞ্জিতে এলিট গ্রুপ বি-র শীর্ষে অভিমন্যু ঈশ্বরণের (Abhimanyu Eashwaran) দল। বরোদার বিরুদ্ধে রুদ্ধশ্বাস জয়ের পর এ বার শেষ দিনের থ্রিলারে হায়দরাবাদকে (Hyderabad) উড়িয়ে দেওয়া। সদ্য সমাপ্ত ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট থেকে অভিজ্ঞ মনোজ তিওয়ারির (Manoj Tiwary) লাগাতার ব্যর্থতা। জি ২৪ ঘণ্টার কাছে কাটাছেড়া করলেন দলের হেড কোচ অরুণ লাল (Arun Lal) ও কোচ সৌরাশিস লাহিড়ী (Saurasish Lahiri)।
একাত্মবোধ মূলমন্ত্র -
অরুণ লাল: খুব ভাল লাগছে। আমাদের দলের টিম স্পিরিট ও লড়াকু মনোভাব সবার কাছে শিক্ষণীয়। সবাই একজোট হয়ে খেলছে। সবাই চেষ্টা করছে। সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা ক্রিকেটের সঙ্গী। তবে সবাই ১০০ শতাংশ উজাড় করে দিচ্ছে। কোচ হিসেবে এদের জন্য গর্বিত। আগেও বলেছি আমার দলের বোলিং 'ভারতসেরা'। সেটা এই ম্যাচে ফের একবার ছেলেরা প্রমাণ করল। তবে ব্যাটিং এখনও ভোগাচ্ছে। সিনিয়ররা রান পেতে শুরু করলে আমাদের দলকে হারানো খুব কঠিন হবে।
সৌরাশিস লাহিড়ী: একজোট থাকা আমাদের দলের মন্ত্র। ম্যাচ শেষ না হওয়ার আগে পর্যন্ত আমরা হারতে চাই না। তাছাড়া সবাই খুবই আত্মবিশ্বাসী। শুধু তাই নয়, একে অন্যের প্রতিও প্রচুর আস্থা ও ভরসা আছে। আর সেইজন্য কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও এই দলটা বুক চিতিয়ে লড়াই করছে। দলগত খেলায় 'ফেলো ফিলিং' থাকা খুব জরুরি। সেটা কিন্তু এই দলের মধ্যে রয়েছে। তাই চলতি মরসুমের এই দুটি ম্যাচে একাধিক রোমহর্ষক মুহূর্ত ও স্নায়ুর লড়াই চললেও আমাদের ছেলেরা হার মানেনি।
ছন্দহীন মনোজ কি আদৌ এই দলে ফিট? -
অরুণ লাল: মনোজকে নিয়ে আমার কোনও সমস্যা নেই। এই দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ওর মতো অভিজ্ঞ লোকের দরকার। মনে রাখবেন ও কিন্তু বাংলার সর্বকালের সেরা ব্যাটার। তাছাড়া একটা সময় অধিনায়কত্ব করেছে। তাই আমার বিশ্বাস মনোজ বড় রান করবেই। ৩ মার্চ থেকে চণ্ডীগড়ের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে নামছি। সেই ম্যাচেই পুরনো মনোজকে দেখতে পারেন।
সৌরাশিস লাহিড়ী: বাংলা ক্রিকেটের ইতিহাসে মনোজ সর্বাধিক রান করেছে। সেটা ভুলে চলবে না। আমার মনে হয় ও একটা লক্ষ্য নিয়েই এ বার রঞ্জি খেলতে নেমেছে। সেটা কিন্তু দলের জন্য ভাল হবে। তাছাড়া মনে রাখবেন মনোজ কিন্তু এখন শুধু ক্রিকেট খেলে না। ও রাজ্যের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর পাশাপাশি একজন বিধায়ক। তাই ওকে সময় দেওয়া উচিত।
ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট -
অরুণ লাল: ওরা হারলেও দারুণ লড়াই করেছে। দুই ইনিংসে বেশ কিছু জুটি আমাদের চাপ বাড়িয়েছিল। তবে ২৩৯ রান চেজ করতে গিয়ে শুরুতেই হায়দরাবাদ তিন উইকেট হারায়। সেখান থেকেই ওরা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল। ৮৫ রানে ৬ উইকেট চলে গেলেও হাল ছাড়েনি তিলক। এ বার প্রথম ইনিংসে ৮১ রানে অপরাজিত থাকা রবি তেজাকে নিয়ে ফের লড়াই শুরু করল। সপ্তম উইকেটে জুড়ে গেল ৪৯ রান। কিন্ত আমাদের চাপ যখন বাড়ছে, ঠিক তখন বল হাতে জ্বলে উঠল শাহবাজ। বল হাতে নিয়েই ফর্মে থাকা রবি তেজা ও তনয় ত্যাগরাজনকে ফিরিয়ে দিতেই ম্যাচ আমাদের দিকে ঢলে যায়।
সৌরাশিস লাহিড়ী: গত চারদিনে একাধিক মুহূর্ত তৈরি হয়েছে। প্রথম ইনিংসে অভিষেক ও শাহবাজ প্রবল চাপে চুপসে না গিয়ে পালটা আক্রমণ চালায়। মারমুখী মেজাজে ব্যাট চালানোর জন্য সপ্তম উইকেটে উঠেছিল ৯৬ বলে ৭৪ রান। সেইজন্য আমরা ২৪২ রান তুলতে পেরেছিলাম। এরপর ওদের প্রথম ইনিংসে মুকেশের দুরন্ত বোলিং। অষ্টম উইকেটের জুটিতে রবি তেজা ও তনয় ত্যাগরাজন ২৩২ বলে ১০৯ রান যোগ করে। তবে শেষ পর্যন্ত ৭২.৫ ওভারে এই জুটি ভাঙে মনোজ। সেটা না হলে ম্যাচ ঘুরে যেতে পারত। দ্বিতীয় ইনিংসে ফের একবার শাহবাজের দুরন্ত ব্যাটিং। এবং সর্বোপরি দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিং করতে নেমে আগাগোড়া দাপট দেখালাম। এই ইনিংসের প্রথম বলেই উইকেট নেয় মুকেশ। আবার তৃতীয় দিনের শেষ বলে ফের একবার ওদের ধাক্কা দিয়ে আকাশ উইকেট তুলে নেয়। সেই ধারাবাহিকতা এদিনের শুরু থেকেই বজায় ছিল। দিনের প্রথম বলেই ফের উইকেট পায় আকাশ। এছাড়া আমাদের গ্রাউন্ড ফিল্ডিং ও কঠিন ক্যাচ অনায়াসে লুফে নেওয়ার মানসিকতার জন্য ছেলেদের প্রশংসা করতেই হবে। যেমন ধরুন প্রদীপ্ত এই ম্যাচে খেলছিল না। কিন্তু মাত্র ১০ মিনিটের জন্য মাঠে নেমেই নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করল। যে ভাবে ঝাঁপিয়ে ও তিলক ভার্মার ক্যাচ নিয়েছে সেটা এককথায় অসাধারণ। এতেই বোঝা যায় যে সবাই কতটা মরিয়া হয়ে আছে। আমাদের ক্রিকেটারদের নামের পাশে বড় শতরান নেই। বোলারদের ঝুলিতে পাঁচ উইকেট নেই। কিন্তু একতা আছে। তাই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এবং এই মানসিকতা নিয়েই খেলতে হবে।
দুরন্ত শাহবাজ -
অরুণ লাল: আক্ষরিক অর্থে আমাদের দলের 'ক্রাইসিস ম্যান'। কঠিন অবস্থায় ও সবসময় ব্যাটে-বলে পারফর্ম করে চলেছে। সেইজন্য আরসিবি-র মতো দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠেছে।
সৌরাশিস লাহিড়ী: এমন ইস্পাতকঠিন মানসিকতার ক্রিকেটার অনেক বছর পরে দেখলাম। চাপের মধ্যে পালটা লড়াই করা ও অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছে। একজন প্রকৃত টিমম্যান ও ম্যাচ উইনার।
ব্লাড প্রেসার বেড়ে গিয়েছিল? -
অরুণ লাল:হে ঈশ্বর। আমার যে কী অবস্থা হয়েছিল সেটা শুধু আমিই জানি। আর যারা আমার সঙ্গে ড্রেসিংরুমে ছিল তারা জানে। প্রত্যেক বলে মনে হচ্ছিল এই বুঝি হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে!
সৌরাশিস লাহিড়ী: অস্বীকার করে তো লাভ নেই। এমন পরপর দুটি এমন রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ দেখলে চাপ তো বাড়বেই। কিন্তু কোচ হিসেবে নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এটা সিনিয়রদের থেকে শিখেছি। তবে আমাকে আরও শিখতে হবে। কারণ খেলাধুলায় রোজ তো জেতা যায় না। হারতে হবেই। তাই মাটিতে পা রেখে শুধু শিখে যাওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: Ranji Trophy: দুরন্ত বোলিং, রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে হায়দরাবাদকে হারিয়ে নক আউটে লড়াকু বাংলা
আরও পড়ুন: Wriddhiman Saha: ঋদ্ধিকে বিচার দিতে BCCI-এর কমিটি গঠন, 'ঘরের ছেলে'কে নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত ও নীরব সিএবি