সব্যসাচী বাগচী 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

বাঁ হাতের বুড়ো আঙুলের চোট এখনও সারেনি। সেই ভাঙা আঙুল নিয়েই বুক চিতিয়ে লড়লেন বঙ্গব্রিগেডের 'ক্রাইসিস ম্যান'। বাইশ গজের যুদ্ধে তরুণ প্রজন্মের আর এক 'রান মেশিন' সুদীপ কুমার ঘরামিকে (Sudip Gharami) নিয়ে। তিনি এক ও অদ্বিতীয় অনুষ্টুপ মজুমদার (Anustup Manumdar)। বুড়ো আঙুলের চোট পাওয়া জায়গায় যখন প্রতিপক্ষ ফিল্ডারের ছোড়া বল এসে লাগল, যন্ত্রণায় লাফিয়ে উঠলেন তিনি। মাঠে দৌড়ে এলেন ফিজিও। শুশ্রূষা চলল। কেউ কেউ ভাবছিলেন, মাঠ ছেড়ে না বেরিয়ে যেতে হয় তাঁকে। কিন্তু তিনি অন্য ধাতুতে গড়া। ফের গ্লাভস পরলেন। স্টান্স নিলেন। এবং বাংলার (Bengal) অভিজ্ঞ ব্যাটার শতরান করে প্রমাণ করলেন, এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে নারাজ। শুধু অনুষ্টুপ কেন, তরুণ সুদীপের লড়াকু শতরানও যে ভোলা যাবে না। তা চলতি রঞ্জি ট্রফির সেমি ফাইনালে (Ranji Trophy Semi Final 2023) মধ্যপ্রদেশ (Madhya Pradesh) যতই ম্যাচে ফিরে আসুক। 


আর কয়েক মাস পরেই ৩৯-এ পা দেবেন 'রুকু'। তবুও লড়ে যাচ্ছেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৩তম শতরান সারলেন। যদিও ওঁর কাছের মানুষজন মনে করেন, পরিসংখ্যান আরও ভালো হওয়া উচিত ছিল। যাই হোক। গতবারের মতো এবারও তিনি দলের ব্যাটিংকে টানছেন। এখনও পর্যন্ত ৯ ম্যাচের ১২ ইনিংসে করে ফেলেছেন ৭১০ রান। সর্বোচ্চ ১৫৯, হিমাচল প্রদেশের বিরুদ্ধে। গড় ৬৪.৫৪। স্ট্রাইক রেট ৫৫.৩৩। সঙ্গে রয়েছে ৩টি শতরান ও ৩টি অর্ধ শতরান। 


এহেন অনুষ্টুপ বছরের পর বছর ধরে ঘরোয়া ক্রিকেটে রান করছেন। তবুও জাতীয় নির্বাচকরা ওঁর দিকে ফিরেও তাকান না। সেটা নিয়ে আর আক্ষেপ করেন না তিনি। এদিনও জি ২৪ ঘণ্টাকে সেটাই ফের বললেন। রুকু বলছিলেন, " আর ভেবে কী হবে! অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। আমার কাজ বাংলার হয়ে রান করা। সেটাই করছি। বাংলার হয়ে এখনও পারফর্ম করার তাগিদ অনুভব করি বলেই, ভাঙা আঙুল নিয়েও এদিন ব্যাট করলাম। বাকিটা তো সবাই দেখল।" 



ম্যাচের আগের দিন মনোজ তিওয়ারি এই প্রতিবেদককে জানিয়েছিলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে অনুষ্টুপ বড় ম্যাচে বড় রান করবে। সেটাই করলেন এই অভিজ্ঞ যোদ্ধা। তবে ২০৬ বলে ১২০ রান করে ফিরে যাওয়ার সময় অনুষ্টুপের চোখে-মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট ছিল। ১৩টি চার ও ১টি ছক্কা দিয়ে সাজানো ছিল তাঁর ইনিংস। কারণটাও জানালেন। অনুষ্টুপ যোগ করলেন, "আমি ও সুদীপ দিনের শেষ পর্যন্ত খেললে খুব ভালো হত। ম্যাচে আমরা আরও দাপট দেখাতে পারতাম। এখন সবকিছু মনোজ ও শাহবাজের উপর নির্ভর করছে। ওরা দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশন কাটিয়ে দিতে পারলেই, ম্যাচের রাশ আমাদের হাতে পুরোপুরি চলে আসবে।"


আরও পড়ুন: Ranji Trophy Semi Final 2023, BEN vs MP: অনুষ্টুপ-সুদীপের জোড়া শতরানের পরেও লড়াইয়ে রয়েছে আবেশ খানের মধ্যপ্রদেশ


আরও পড়ুন: Rahul Dravid, Border Gavaskar Trophy 2023: কিউরেটরের উপর বেজায় চটলেন ঠান্ডা মাথার রাহুল দ্রাবিড়! কিন্তু কেন?


হোলকারের বাইশ গজে বল প্রথম দিন থেকেই ঘুরছে। তাই বাংলাও চাইছে প্রথম ইনিংসে বড় রান গড়তে। সেটাও স্পষ্ট করে দিলেন অনুষ্টুপ। তাঁর প্রতিক্রিয়া, "এই পিচে যা অবস্থা তাতে তৃতীয় দিনের পর থেকে ব্যাট করা খুব কঠিন। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে গেলে সমস্যা বাড়বে। তাই আমরা বড় রানের লিড নিতে চাই।" 


অনুষ্টুপের সঙ্গী সুদীপও দিনের শেষে আউট হয়ে হতাশ। তবে একইসঙ্গে কামব্যাক করার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ। ৫১ রানে ২ উইকেট চলে যাওয়ার পর সিনিয়র পার্টনারের সঙ্গে জুটি বেঁধে লড়লেন। প্রতিটি শটে তাঁর আত্মবিশ্বাস ফুটে উঠছিল। ফিরে যাওয়ার আগে করলেন ২১৩ বলে করলেন ১১২ রান। মারলেন ১২টি চার ও ২টি ছক্কা। তবে সুদীপ শুধু এই ম্যাচে নয়, পুরো মরসুম জুড়েই বিপ্লব ঘটিয়ে চলেছেন। 



এই মুহূর্তে চলতি রঞ্জি ট্রফিতে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকার ছয় নম্বরে রয়েছেন, এখনও পর্যন্ত ৯ ম্যাচের ১৫ ইনিংসে তাঁর রান ৭৪৮। সর্বোচ্চ এই সেমি ফাইনালেই করলেন। গড় ৫৭.৫৩। স্ট্রাইক রেট ৫৪.৭১। সঙ্গে রয়েছে ৩টি শতরান ও ৫টি অর্ধ শতরান। এমন তরুণ 'রান মেশিন'-কে দেখে আপ্লুত অনুষ্টুপ। তাঁর মতে ২৩ বছরের ছেলেটা লম্বা রেসের ঘোড়া। 


এহেন সুদীপ শতরানের পরেই বিশেষ ভাবে সেলিব্রেশন করলেন। কেন করেছিলেন এমনভাবে সেলিব্রেশন? সুদীপ বলছিলেন, "আসলে লক্ষ্মী দা ও মনোজ দা সবসময় আমাকে ভরসা জুগিয়েছে। লক্ষ্মী দা বাইরে থেকে প্রতি বলে চিৎকার করে ভরসা দেয়। রুকু দা-ও আমাকে ব্যাক করেছে। এগুলোর জন্যই এবার সুযোগ পেয়েই পারফর্ম করতে পারছি।"  


দিনের শেষে বাংলা ৪ উইকেটে ৩০৭ রান তুলেছে। ক্রিজে আছেন মনোজ ও শাহবাজ। এখন দেখার দ্বিতীয় দিনের শুরুটা তাঁরা কেমন করেন। অনুষ্টুপ-সুদীপ কিন্তু কামব্যাকের আশায় রয়েছেন। বাকি ব্যাটাররা কি লড়াই করতে পারবেন? সেটাই দেখার। 



(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)