Ranji Trophy Semi Final 2023, BEN vs MP: অনুষ্টুপ-সুদীপের জোড়া শতরানের পরেও লড়াইয়ে রয়েছে আবেশ খানের মধ্যপ্রদেশ
টসে জিতেই ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন মনোজ। অধিনায়কের ডাকে সাড়া দিয়ে বেশ ভালো শুরু করেন অভিমন্যু ঈশ্বরণ ও করণ লাল। মাত্র ১২.৪ ওভারে ৫১ রানে তুলে দেন দুই ওপেনার। কিন্তু এরপরেই ছন্দ পতন। ক্ষণিকের ভুলে গৌরব যাদবের বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে যান অভিমন্যু।
সব্যসাচী বাগচী
বাঁ হাতের বুড়ো আঙুলের চোট এখনও সারেনি। তবুও লড়লেন 'ক্রাইসিস ম্যান'। অনুষ্টুপ মজুমদার (Anustup Manumdar) শতরান পূর্ণ করতেই, সাজঘরে থাকা মনোজ তিওয়ারি (Manoj Tiwary) প্রচণ্ড আগ্রাসী মেজাজে 'কাম অন' বলে চিৎকার করে উঠলেন। সেই মুহূর্ত দেখে মনে করে গেল ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে (ICC World Cup 2015) ভারত বনাম পাকিস্তান (India vs Pakistan) ম্যাচের একটি বিশেষ মুহূর্ত। সেই মেগা ম্যাচে বিরাট কোহলির (Virat Kohli) সঙ্গে ক্রিজে ছিলেন সুরেশ রায়না (Suresh Raina)। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিরাট তাঁর শতরান পূর্ণ করতেই নন স্ট্রাইকার এন্ডে থাকা রায়না ডান হাত ছুড়ে লাফিয়ে উঠেছিলেন। বুধবার চলতি রঞ্জি ট্রফির সেমি ফাইনালে (Ranji Trophy Semi Final 2023) তেমনই মুহূর্ত ধরা দিল। শুধু অনুষ্টুপ নন, চলতি মরসুমে দারুণ ফর্মে থাকা সুদীপ ঘরামির (Sudip Kumar Gharami) শতরানের পর এমনভাবেই গর্জে উঠেছিল বঙ্গব্রিগেড। তবুও ইন্দোরের (Indore) হোলকার স্টেডিয়ামের (Holkar Cricket Stadium) বাইশ গজে বাংলা যে পুরোপুরি দাপট দেখাতে পারল, এমনটা কিন্তু নয়। কারণ দিনের শেষে বাংলা ৩০৭ রানে তুলে ফেললেও, ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে। সারাদিন দাপট দেখালেও, শেষ বেলায় ফিরে গেলেন দুই শতরানকারী। আর তাই লড়াইয়ে রয়েছেন অনুভব আগরওয়াল (Anubhav Agarwal)-আবেশ খানের (Avesh Khan) মধ্যপ্রদেশ (Madhya Pradesh)।
এদিন টসে জিতেই ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন মনোজ। অধিনায়কের ডাকে সাড়া দিয়ে বেশ ভালো শুরু করেন অভিমন্যু ঈশ্বরণ ও করণ লাল। মাত্র ১২.৪ ওভারে ৫১ রানে তুলে দেন দুই ওপেনার। কিন্তু এরপরেই ছন্দ পতন। ক্ষণিকের ভুলে গৌরব যাদবের বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে যান অভিমন্যু। ৩৩ বলে ২৭ রানে ফিরলেন অভিমন্যু। এর কিছুক্ষণ পরেই আউট হলেন করণ। এবার বাংলাকে ধাক্কা দিলেন অনুভব আগরওয়াল। ৪৫ বলে ২৩ রান করেন করণ। ৫১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলা।
তবে এরপর চাপে চুপসে না গিয়ে পালটা লড়াই শুরু করেন দেন অনুষ্টুপ ও সুদীপ। তখন দাপট দেখাচ্ছিলেন মধ্যপ্রদেশের বোলাররা। আর একটি উইকেট হারালে বড় চাপ পড়ে যেত মিডল অর্ডারের উপর। সেটা হতে দিলেন না দুই ব্যাটার। অভিজ্ঞ অনুষ্টুপের সঙ্গে তরুণ সুদীপের জুটি বাংলাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করল।
আরও পড়ুন: Sourav Ganguly and Rahul Dravid: প্রবল চাপে থাকা দ্রাবিড়ের সমর্থনে এগিয়ে এলেন 'বন্ধু' সৌরভ
কোনও তাড়াহুড়ো করলেন না তাঁরা। বল দেখে শট খেললেন। যতটা পারলেন সোজা ব্যাটে খেলার চেষ্টা করলেন। তার ফলও পেলেন দুই ব্যাটার। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পরে উইকেট কিছুটা সহজ হয়ে গেল। তখন কয়েকটি বড় শট দেখা গেল বাংলার ব্যাটারদের কাছে। চার মেরে নিজের অর্ধশতরান করলেন অনুষ্টুপ। অন্য দিকে লং অফের উপর দিয়ে ছক্কা মেরে অর্ধশতরান করলেন সুদীপ। এরপর যত সময় এগিয়েছে, ততই দাপট দেখিয়ে দুজনের ব্যাট। দুজনের জোড়া শতরানের সৌজন্যে তৃতীয় উইকেটে উঠে গেল ২৩৫ রান।
তখন মনে করা হচ্ছিল যে, প্রথম দিনের তৃতীয় সেশনও বাংলার নামেই লেখা থাকবে। কিন্তু সেটা আর হল কোথায়! বিপক্ষের অধিনায়ক আদিত্য শ্রীবাস্তব নতুন বল নিতেই ম্যাচে ফিরে আসে গতবারের রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন দল। আবেশ খানের ভিতরে আসা ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে যান 'রুকু'। ২০৬ বলে ১২০ রান করে ফিরে যাওয়ার সময় অনুষ্টুপের চোখে-মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট ছিল। ১৩টি চার ও ১টি ছক্কা দিয়ে সাজানো ছিল তাঁর ইনিংস। অনুষ্টুপ থামতেই ২৯২ রানে ৩ উইকেট হারাল বাংলা। আর ৪ রানের মাথায় আবার ধাক্কা। এবার ফিরলেন সুদীপ। অনুভবের ভিতরে আসা বলে লাইন মিস করতেই লেগ বিফোর হলেন এই তরুণ। ফিরে যাওয়ার আগে সুদীপ ২১৩ বলে করলেন ১১২ রান। মারলেন ১২টি চার ও ২টি ছক্কা।
শেষ বেলায় ক্রিজে আছেন মনোজ ও আর ডাকাবুকো শাহবাজ আহমেদ। প্রথম দিনের শেষবেলার জোড়া ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বাংলা? সেটাই এখন দেখার। হোলকারের বাইশ গজে কিন্তু প্রথম দিন থেকেই বল ঘুরছে। বাংলার ঝুলিতেও রয়েছে তিন স্পিনার। মনোজ-শাহবাজ জুটি বড় রান করে দিলেই, কিন্তু ম্যাচের রাশ হাতে তুলে নিতে পারে বঙ্গব্রিগেড। বাকিটা দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনেই বোঝা যাবে।