BEN vs MP | Ranji Trophy Semi Final 2023: অনুষ্টুপের আউট নিয়ে ক্ষোভ! সৌরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বদলার ফাইনালে ইডেনে নামছে বাংলা
Ranji Trophy Semi Final 2023, BEN vs MP: মরসুমের পর মরসুম ধরে এটাই বঙ্গ ব্যাটিংয়ের অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে! যেভাবে তিনি প্রায় প্রতি ম্যাচে রান করে চলেছেন, তাতে ড্রেসিংরুমের বাইরে লিখে দেওয়া উচিত `শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা। অনুষ্টুপ মজুমদারই ভরসা।`
সব্যসাচী বাগচী
মরসুমের পর মরসুম ধরে এটাই বঙ্গ ব্যাটিংয়ের অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে! যেভাবে তিনি প্রায় প্রতি ম্যাচে রান করে চলেছেন, তাতে ড্রেসিংরুমের বাইরে লিখে দেওয়া উচিত 'শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা। অনুষ্টুপ মজুমদারই (Anustup Majumdar) ভরসা।' কঠিন পিচে মধ্যপ্রদেশের (Madhya Pradesh) বিরুদ্ধে 'রুকু'-র ব্যাটে ভর করে কার্যত রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে (Ranji Trophy Final 2023) চলে গেল বাংলা (Bengal)। ঘরের মাঠ ইডেন গার্ডেন্সে (Eden Gardens) আয়োজিত মেগা ফাইনালে মনোজ তিওয়ারির (Manoj Tiwary) দলের প্রতিপক্ষ সৌরাষ্ট্র (Saurashtra)। ২০১৯-২০ মরসুমে এই সৌরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রাজকোটে আয়োজিত ফাইনালে হেরে গিয়েছিল বঙ্গব্রিগেড। তাই ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে চলা এবারের ফাইনাল যে বাইশ গজে বদলার ম্যাচ, সেটা নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
তবে মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে ৫৪৭, বিশাল রানে এগিয়ে থাকার পরেও বঙ্গব্রিগেডের ক্ষোভ থামছে না। কারণ আম্পায়ার অনিল চৌধুরীর (Anil Chaudhary) ভুল সিদ্ধান্তে ৮০ রানে থামতে হল অনুষ্টুপকে। কুমার কার্তিকয়ের যে ডেলিভারিতে তাঁকে আউট দেওয়া হল, সেই বল প্যাডে নয়। বরং ব্যাটের কানায় লেগে ফাইন লেগের দিকে গিয়েছিল। খালি চোখে সেটা দেখে গেলেও, আন্তর্জাতিক মঞ্চের আম্পায়ার অনুষ্টুপের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত দিলেন। স্বভাবতই এমন ক্ষোভ ফুঁসছে বাংলা। কেন ঘরোয়া ক্রিকেটে ডিআরএস (DRS) থাকবে না, সেটা নিয়ে ফের উঠছে প্রশ্ন।
প্রথম ইনিংসের মতো সেমি ফাইনালের চতুর্থ দিনেও ভরসা সেই অনুষ্টুপ। তফাৎ শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় দিন স্কোরবোর্ডে বড় রান তোলার জন্য আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট করেছিলেন। আর এবার তাঁকে দেখা গেল একেবারে রাহুল দ্রাবিড়ের (Rahul Dravid) মেজাজে। ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল, যেন তিনি বিছানাপত্র নিয়ে পিচে চলে গিয়েছিলেন!
প্রথম দিন থেকেই বল টার্ন করছিল। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ দিন হোলকার স্টেডিয়ামের কালো মাটির পিচ ব্যাটারদের কাছে বদ্ধ ভূমি হয়ে যায়। অভিমন্যু ঈশ্বরণ থেকে মনোজ, করণ লাল থেকে সুদীপ ঘরামি সেট হয়েও মধ্যপ্রদেশের দুই স্পিনারের বিরুদ্ধে আউট হয়েছেন। সেখানে অনুষ্টুপ তাঁর যাবতীয় অভিজ্ঞতা দিয়ে লড়াই করলেন। ফরোয়ার্ড ডিফেন্স থেকে ব্যাকফুট পাঞ্চ, সবেতেই বাংলার 'ক্রাইসিস ম্যান' ছিলেন অনবদ্য। জোরে বোলারদের বিরুদ্ধে বরাবরই ভালো ব্যাট করেন। তবে এই ম্যাচে স্পিনারদের বিরুদ্ধে এক সময় বাংলা ছেড়ে দেওয়া অনুষ্টুপের ফুট ওয়ার্ক ছিল দেখার মতো।
বাঁ হাতের বুড়ো আঙুলে এখনও ক্ষত আছে। সঙ্গে রয়েছে প্রবল যন্ত্রণা। তবুও অনুষ্টুপকে থামানো যায়নি। প্রথমে সুদীপের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ৮৫ রান যোগ করেন। এরপর সুদীপ ৪১ রানে ফিরে গেলেন, মনোজের সঙ্গে জুটি বেঁধে লিডকে আরও বাড়াতে শুরু করেন অনুষ্টুপ। মনোজ এবারও বড় রান করতে পারলেন না। সেট হয়ে গিয়েও ১৫ রানে ফিরলেন বঙ্গ অধিনায়ক। সারাংশ জৈনকে কভারের উপর দিয়ে তুলে মারতে গেলে, শরীর ছুড়ে তাঁর ক্যাচ ধরেন কুমার কার্তিকেয়। ফলে ১৬৩ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলা। তবে অনুষ্টুপকে টলানো যায়নি।
প্রথম ইনিংসে ২০৬ বলে ১২০ রান করেছিলেন। মেরেছিলেন ১৩টি চার ও ১টি ছক্কা। স্ট্রাইক রেট ছিল ৫৮.২৫। সেখানে দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর স্ট্রাইক রেট কমে দাঁড়াল ৩৬.৫৩। ২১৯ বলে ৮০ রানে থামলেন হতভাগ্য অনুষ্টুপ। এবার মারলেন মাত্র সাতটি চার। দ্বিতীয় সেশনে তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দিলেন শাহবাজ আহমেদ। শাহবাজ ২৯ রানে ফিরলেন।
তবে ২২৩ রানে ৯ উইকেট চলে গেলেও, শেষদিকে ঈশান পোড়েলকে সঙ্গে লড়লেন প্রদীপ্ত প্রামাণিক। শেষ জুটিতে উঠে গেল ৫৬ রান। ডাকাবুকো মেজাজে প্রদীপ্ত ১০১ বলে ৬০ রানে অপরাজিত রইলেন। মারলেন ৫টি ছক্কা ও ৩টি চার। ইনিংসকেও কুর্নিশ জানাতেই হবে। ফলে দ্বিতীয় ইনিংসে ৯ উইকেটে ২৭৯ তুলে নিল বাংলা। আর তাই লিড বেড়ে গিয়ে দাঁড়াল ৫৪৭ রানের। যা এই পিচে শেষদিন চেজ করা কার্যত অসম্ভব।
এর আগে প্রথম ইনিংসে অনুষ্টুপ ও সুদীপের জোড়া শতরানের সৌজন্যে বাংলা ৪৩৮ রান তোলে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১৭০ রানে গুটিয়ে যায় মধ্যপ্রদেশের প্রথম ইনিংস। সৌজন্যে আকাশ দীপ। এবারও বঙ্গ পেস বোলিংয়ের ব্যাটন সামলালেন এই ডানহাতি পেসার। নিয়েছিলেন ৪২ রানে ৫ উইকেট। সেই সুবাদে ২৬৮ রানের মহামূল্যবান লিড পেয়েছিল। সেই লিড এবার বেড়ে দাঁড়াল ৪৮৫ রানের। ফলে আরও একবার মেগা ফাইনাল খেলার দিকে অনেকটা এগিয়ে গেল মনোজ তিওয়ারির দল।
বঙ্গ বোলারদের দাপটের পর ফের ব্যাট হাতে অনুষ্টুপ ও প্রদীপ্তর লড়াকু ইনিংস। সেটা দেখে মনে হচ্ছিল, 'এটা একেবারে অন্য বাংলা। যারা ঘরে ঢুকে মারতে জানে।' নিজের দলের পতন ড্রেসিংরুমে বসে দেখতে বাধ্য হন গতবারের রঞ্জি ট্রফি জয়ী কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত। ক্ষোভে তাঁর চোখ-মুখ লাল হয়ে যাচ্ছিল। অন্যদিকে এখন থেকেই সৌরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বদলা নেওয়ার ছক কষতে শুরু করে দিয়েছেন লক্ষ্মীরতন শুক্লা-মনোজ তিওয়ারি।