Roger Federer, Laver Cup: বিদায়বেলায় স্ত্রী মির্কাকে ধন্যবাদ জানিয়ে কাঁদলেন `রাজা রজার`, সতীর্থদের চোখেও জল
Roger Federer, Laver Cup: খেলা চলাকালীনই ফেডেক্স ভক্তদের অনেকের চোখে জল দেখা যাচ্ছিল। আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা যে বড় কঠিন কাজ।
জি ২৪ ঘন্টা ডিজিটাল ব্যুরো: রাজা আবার জনসমক্ষে কাঁদেন নাকি! কস্মিনকালে কোনও রাজাকে চোখের জলে একাকার হতে দেখেছেন! এই রাজা কিন্তু কাঁদলেন। সমাজবিধি, লোক-লজ্জাকে আগুনে সার্ভিসে হেলায় উড়িয়ে কেঁদেই চললেন রজার ফেডেরার (Roger Federar)। টেনিস সার্কিটে যাকে আমরা 'রাজা রজার' কিংবা ফেডেক্স নামে চিনি। জানি।
বলছিলেন, 'এই কান্না আনন্দের। আমি আনন্দে কাঁদছি।' ২৪ বছরের কেরিয়ারের শেষদিনে নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না ফেডেরার। ম্যাচ শেষ করে সঞ্চালকের সঙ্গে কথা বলতে বলতে অঝোরে কাঁদলেন টেনিসের রাজা। কখনও স্ত্রী মির্কাকে (Mirka Federar) জড়িয়ে ধরে, কখনও সন্তানদের কাছে টেনে নিয়ে, কখনও সতীর্থদের আলিঙ্গন করে। তিনি কাঁদলেন, সেই সঙ্গে কাঁদল গোটা টেনিস বিশ্ব। কোর্টে আর দেখা যাবে না টেনিসের রাজাকে।
ফেডেক্সের বিদায়ের জন্য লেভার কাপের (Laver Cup) আয়োজকরা বেশ কিছু বন্দোবস্ত রেখেছিলেন। ফেডেরার এ দিন নেমেছিলেন এক সময়ের তাঁর প্রধান 'শত্রু' রাফায়েল নাদালকে (Rafael Nadal)সঙ্গী করে। গ্যালারিতে তখন বসে ম্যাচ উপভোগ করছেন নোভাক জকোভিচ (Novak Djokovic), অ্যান্ডি মারেরা (Andy Murray)। প্রতিপক্ষ ছিল ফ্রান্সেস টিয়াফো এবং জ্যাক সফ জুটি। দীর্ঘদিন বাদে চোট সারিয়ে ফেরা নাদাল এবং ফেডেরার জুটি জিততে পারেনি। প্রথম সেটে ৬-৪ পয়েন্টে জিতেও ম্যাচ জেতা হয়নি। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষেও হারতে হয়েছে ৬-৪, ৬-৭, ৯-১১ ব্যাবধানে। তবে এই ম্যাচের ফলাফল হয়তো সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ নয়। ফেডেরার হারলেন, নাকি জিতলেন সেটা হয়তো কেউ দেখতে আসেননি। সবাই দেখতে এসেছিলেন টেনিসের রাজাকে বিদায় জানাতে। শেষ বারের মতো টেনিসের রাজাকে কোর্টে রাজত্ব করতে দেখতে। আরও একবার টেনিস নামক খেলাটিকে শিল্প হয়ে যেতে দেখতে। দর্শকদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে।
আরও পড়ুন: Jhulan Goswami : বিশ্বজয়ী না হওয়ার আক্ষেপ, সৌরভ-দ্রাবিড়-লারাদের দলে নাম লেখালেন 'চাকদহ এক্সপ্রেস'
খেলা চলাকালীনই ফেডেক্স ভক্তদের অনেকের চোখে জল দেখা যাচ্ছিল। আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা যে বড় কঠিন কাজ। রজার নিজে অবশ্য নিজেকে ম্যাচের শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন। কিন্তু ম্যাচ শেষে আর পারলেন না। সঞ্চালকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অঝোরে কেঁদে ফেললেন। জড়িয়ে ধরলেন স্ত্রীকে। তারপর সন্তানদের। ধীরে ধীরে এগিয়ে এলেন নাদাল, জকোভিচরা। ফেডেক্স তবু কেঁদেই চলেছেন। রাজার বিদায়ে তাঁরাও যেন আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলেন না। চোখ ভিজে আসছিল তাঁদের। শেষ পর্যন্ত ফেডেক্সকে কাঁধে বসিয়ে রাজার মতোই বিদায় দিলেন তাঁরা।
শেষে কোনওক্রমে চোখের জল মুছে ফেডারার বললেন, 'এতবছর যারা আমার পাশে ছিলেন তাঁদের ধন্যবাদ। যারা এতবছর ধরে আমার সঙ্গে গোটা বিশ্ব ঘুরেছে, তাদের ধন্যবাদ। আমার সতীর্থ, আমার প্রতিপক্ষ, সবাইকে ধন্যবাদ। আমার বিদায়ে যেন একটা উৎসব হচ্ছে। এটাই তো চেয়েছিলাম।'
জীবনের শেষ ম্যাচে কেন নাদালকে সঙ্গী করলেন? কেনই বা সিঙ্গলস খেললেন না? ২০ গ্র্যান্ড স্লামের মালিক বললেন, 'আমি একা হয়ে যেতে চাইনি। বিদায় জানানোর সময় দলকে পাশে ছেয়েছি।'
বিদায়বেলায় ফেডেক্স একা হননি ঠিকই, কিন্তু তাঁকে ছাড়া গোটা টেনিস বিশ্ব যেন একা হয়ে গেল। 'অ্যাডভান্টেজ ফেডেরার...'আর শোনা যাবে না। ইন্টারনেটের অন্দরে কান পাতলে অবশ্য শুনতে পাওয়া যাবে। ইউটিউব , ফেসবুক কিংবা টুইটারে ট্রেন্ডিং হবে। ২৪ বছরের টেনিস অধ্যায়ের শেষ। যে অধ্যায়ের নাম রজার ফেডেরার। টেনিস ইতিহাসে আবার যে চ্যাপ্টারের নাম হতে পারে ফেডেক্স। সেই অধ্যায়ের গভীরতা মাপতে যাওয়া আর সুইস চকলেট-এর স্বাদের অনুভূতি উপলব্ধি করা অনেকটা একই।