SAvsIND: টেস্ট ক্রিকেটের অধিনায়কত্বও ছাড়লেন বিরাট কোহলি
সব ফরম্যাটের নেতৃত্ব থেকে সরে গেলেন বিরাট কোহলি।
নিজস্ব প্রতিবেদন: চিরদিন কারও সমান যায় না। বিরাট কোহলির (Virat Kohli) ক্ষেত্রেও সেটাই হল। গত চার-পাঁচ বছর তাঁর রাজত্ব চললেও ২০২১ সালে ইংল্যান্ড সফরের পর থেকে পতন শুরু হয়েছিল। আর এর শেষ অধ্যায় লেখা হল দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ২-১ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ হারের পর। মাত্র তিন মাসে রাজ্যপাট খোয়ালেন কোহলি।
আর তাই প্রোটিয়াসদের কাছে নাস্তানাবুদ হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই টিম ইন্ডিয়ার (Team India) টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেন কোহলি। শনিবার টুইটারে পোস্ট করে নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিলেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সিরিজ হারের পরেই এই সিদ্ধান্ত নিলেন ‘কিং কোহলি’। ফলে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে আয়োজিত টেস্ট সিরিজে সম্ভবত কেএল রাহুলকে নেতা হিসেবে দেখা যাবে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট ফরম্যাট থেকে সরে গিয়েছিলেন। এরপর তাঁকে গত ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজের দল ঘোষণার আগে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তখন থেকেই বিসিসিআই-এর সঙ্গে তাঁর যুদ্ধ প্রকাশ্যে চলে এসেছিল। একের পর এক বিতর্কে জর্জরিত হয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু টেস্ট সিরিজ জিততে পারলে মুখ রক্ষা করতে পারতেন। তবে কেপটাউনে সাত উইকেটে হেরে সিরিজ জয়ের স্বপ্নও তাঁর জলাঞ্জলি হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অহেতুক ‘স্টাম্প মাইক’ বিতর্ক। কেপটাউনে সেই আচরণের জন্য গোটা ক্রিকেট দুনিয়া তাঁর নিন্দা করছে। তাই প্রবল চাপে থাকা কোহলি এ বার টেস্ট ক্রিকেটের অধিনায়কত্ব থেকেও সরে গেলেন।
টুইটারে কোহলি লিখেছেন, ‘গত সাত বছর ধরে প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রম, একটানা ধৈর্য দেখিয়ে দলকে একটা সঠিক দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। সম্পূর্ণ সততার সঙ্গে এই কাজ করেছি এবং কিছু বাদ রাখিনি। কোনও একটা স্তরে এসে সবকিছুই একসময় থেমে যায় এবং টেস্ট দলের অধিনায়ক হিসেবে, আমার কাছেও এটাই থেমে যাওয়ার সময়।‘
আরও পড়ুন: SAvsIND: সিরিজ জিতেই Kohli-র Team India-কে কোন ইস্যু নিয়ে খোঁচা দিলেন Dean Elgar?
আরও পড়ুন: SAvsIND: Virat Kohli-র আচরণে বেজায় ক্ষুব্ধ Shane Warne, Adam Gilchrist
এরপর কোহলি আরও লিখেছেন, ‘এই যাত্রাপথে অনেক উত্থান এবং কিছু পতন হয়েছে। কিন্তু কখনওই চেষ্টা বা বিশ্বাসের খামতি থাকেনি। যাই করি না কেন, বরাবর নিজের ১২০ শতাংশ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। যদি সেটা না পারি, তা হলে আমি জানি এটা সঠিক কাজ নয়। দলের প্রতি অসৎ হতে পারব না।‘
কোহলির সঙ্গে প্রাক্তন হেড কোচ রবি শাস্ত্রীর সম্পর্ক কতটা আন্তরিক সেটা সবাই জানেন। তাই এই বিবৃতিতে শাস্ত্রীকেও ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন কোহলি। তবে শাস্ত্রীর আগে কোচের পদে থাকা অনিল কুম্বলে কিংবা বর্তমান হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড় সম্পর্কে একটি শব্দও খরচ করেননি এই তারকা।
কোহলি লিখেছেন, ‘রবি শাস্ত্রী এবং বাকি সাপোর্ট স্টাফদের প্রশংসা প্রাপ্য। ভারতীয় দল যে ভাবে একটা গাড়ির মতো ধারাবাহিক ভাবে উপরে উঠে এসেছে, সেই গাড়ির ইঞ্জিন ছিলেন ওঁরা। আমার দর্শনকে সত্যি করার জন্য আপানাদের তোমাদের ভূমিকা অসামান্য। পাশাপাশি দলের প্রতিটি সতীর্থকেও ধন্যবাদ জানাই। কারণ সবাই একজোট না হলে এই সাফল্য পেতাম না। তাই তোমাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।‘
তবে শুধু শাস্ত্রী নন, টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে সাফল্য অর্জন করার জন্য প্রাক্তন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সদ্য বিদায়ী কোহলি। একেবারে শেষে তিনি ফের লিখেছেন, ‘এমএস ধোনিকে সব থেকে বেশি ধন্যবাদ আমাকে অধিনায়ক হিসেবে যোগ্য মনে করার জন্য। ভারতীয় ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, এই বিশ্বাস ধোনির ছিল।‘
২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে প্রথম বার টেস্ট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন কোহলি। প্রথম টেস্টে ধোনি নির্বাসিত থাকায় কোহলি অধিনায়কের দায়িত্ব সামলান। সেই সিরিজেরই মেলবোর্নে আয়োজিত তৃতীয় টেস্টে অবসর ঘোষণা করেন ধোনি। ফলে শেষ টেস্টেও কোহলিকে নেতৃত্ব দিতে দেখা গিয়েছিল। এরপর থেকেই তিনি একটা ভারতের টেস্ট দলকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বে দল সাত নম্বর থেকে শীর্ষে উঠেছে।
তবে ইদানীং তাঁর সময়টা মোটেও ভাল যাচ্ছিল না। একে তো ২০১৯ সাল থেকে টেস্ট ও একদিনের ফরম্যাটে শতরান নেই, এর মধ্যে বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে তরজায় জড়িয়েছিলেন। তাই শেষ পর্যন্ত চাপের কাছে মাথানত করে এ বার টেস্ট দলের নেতৃত্বও ছাড়লেন ‘কিং কোহলি’।