Tulsidas Balaram Death: `আজ বুক ভেঙে যাচ্ছে আমার`! বন্ধু আর নেই, শোকবিহ্বল সুকুমার সমাজপতি
Sukumar Samajpati mourns Tulsidas Balaram Death: কিংবদন্তি ফুটবলার তুলসীদাস বলরাম আজ না ফেরার দেশে। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোকাহত বন্ধু-ভাই সুকুমার সমাজপতি। জি ২৪ ঘণ্টার সঙ্গে কথা বলার সময় সুকুমার বুঝিয়ে দিলেন যে, তিনি আজ কী হারালেন! সুকুমারের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে রইল অনুলিখন...
জি ২৪ ঘন্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ভারতীয় ফুটবল আকাশ একেবারে খালি করে দিয়ে চলে গেলেন তুলসীদাস বলরাম (Tulsidas Balaram)। মাত্র আড়াই বছরের ব্যবধানে পিকে-চুনী-বলরামরা চিরঘুমের দেশে। ভারতীয় ফুটবল রয়ে গেল। কিন্তু চলে গেলেন ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর। বলরামের প্রয়াণে শোকবিহ্বল তাঁর প্রাক্তন সতীর্থ সুকুমার সমাজপতি (Sukumar Samajpati)। খেলতে খেলতে বন্ধুতা থেকে যে সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল দাদা-ভাইয়ের। সুকুমার বিশ্বাস করতে পারছেন না যে, তাঁর বন্ধু আর নেই। বিগত কয়েকদিন সুকুমার পাটুলিতে নিজের বাসভবনে আসতেন শুধু স্নান-খাওয়ার জন্য়। বাকি সময়টা তিনি বন্ধু বলরামের জন্য থাকতেন হাসপাতালে। বলরামের মৃত্যুর পর জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটালে আবেগি সাক্ষাৎকার দিলেন প্রাক্তন ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) রত্ন। সুকুমারের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে রইল অনুলিখন...
সুকুমারের চোখে ফুটবলার বলরাম
'পিকে-চুনী-বলরাম নিঃসন্দেহে ভারতীয় ফুটবলের ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর। তবে আমি একটা কথা আজ বলবই, বলরামের মতো এত বড় খেলোয়াড় ভারতীয় ফুটবলে কখনও আসেনি। আনপ্যারালাল। ওর সমকক্ষ কোনও খেলোয়াড় ছিল না ভারতে। সাধারণত অন্য ফুটবলারদের দু'টো পা সমান চলে না, তবে বলরামের দু'টি পা সমান ছিল। যেমন ডজ, তেমন শট-ভলি। ডান পা, বাঁ-পা বলে আলাদা কোনও ব্যাপার ছিল না। খেলার মধ্যে প্রতিটি মুহূর্তে থাকত বুদ্ধির ছাপ। অদ্ভুত সম্পূর্ণতা ছিল ওর খেলায়। মাথা ঠান্ডা করে খেলত। কখনও মাথা গরম করেনি।
আরও পড়ুন: Tulsi Das Balaram Death: ৮৭ বছরে চিরঘুমে পিকে-চুনীর সহযোদ্ধা তুলসীদাস বলরাম
এক সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা
সেভাবে আন্তর্জাতিক ফুটবলে কখনও আমার ওর সঙ্গে বলরামের খেলার সৌভাগ্য হয়নি। মাারডেকায় যখন আমি সুযোগ পেয়েছিলাম, তখন বলরামের সঙ্গেই গিয়েছিলাম মালয়েশিয়ায়। কিন্তু ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচেই ওর হাঁটুতে চোট লেগে যায় প্রতিপক্ষের ফুটবলারের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে। ও মাঠ ছেড়ে উঠে এল। আমি মাঠে নামলাম। বলতে গেলে ওই একটিই আন্তর্জাতিক ম্যাচ, যেখানে এক সঙ্গে ওর-আমার খেলা। ৬৩, ৬৪-তে ও বুকের চোটের জন্য খেলা ছাড়তে বাধ্য হয়। কিন্তু আমি ৬৬ পর্যন্ত এশিয়ান খেলেছি। ইস্টবেঙ্গেলে দু'বছর বলরামের সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা আমার অনবদ্য। এই অভিজ্ঞতা অতুলনীয়। টিম ম্যান থেকে হোক বা ইনডিভিজুয়াল। সব দিক থেকেই ও পরিপূর্ণ ফুটবলার। এত বড় ফুটবলার ভারতের ইতিহাসে আসেনি।
ইস্টবেঙ্গলের প্রতি বলরামের অভিমান
ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে বলরামের যে সম্পর্ক ভাল ছিল না, সে কথা ও নিজেই বলেছে। ও জানিয়ে দিয়েছিল মৃত্যুর পর ওর দেহ যেন ওই ক্লাবে না যায়। ইস্টবেঙ্গলে একটা ঘটনার জন্য ও প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছিল। সেকথায় আমি আজ আর যেতে চাই না। ও কলকাতায় ইস্টবেঙ্গলের বাইরে কখনও অন্য কোনও ক্লাবে খেলেনি। যা কিছু সব এই ক্লাবেই। তাই ওর ক্ষোভ হওয়া স্বাভাবিক।
বন্ধুর প্রয়াণে ভেঙে পড়া
আজ বুক ভেঙে যাচ্ছে আমার, একটি ছেলে কানাডায় চাকরি করত, ও বলরামকে কাকা বলত। মাসদুয়েক আগে ও চলে আসে কলকাতায়। ছেলেটি রোজ হাসপাতালে যেত। ছেলেটির সঙ্গে রোজ কথা হত। গতকালও সন্ধেবেলা কথা হয়েছিল। আজও রাতে ছেলেটিকে ফোন করব ভেবেছিলাম। তার মধ্যেই ও দুপুরে খবর দিল যে, আমার কাকা চলে গেল। হায়দরাবাদে বলরামে বাবা-মা-ভাই ছিল। তবে ওরা বহুকাল আগে চলে যায়। ওর হায়দরাবাদের সঙ্গে কোনও টাচই ছিল না সেভাবে। বলরাম বিয়ে করেনি। সংসার করেনি। আমি ওর উত্তরপাড়ার বাড়িতে যেতাম। নানারকম কথা হত, পুরনো দিনের কথা ফিরে আসত, বন্ধু হিসাবে, দাদা হিসেবে যা পেয়েছি আমি, তার কোনও তুলনা হয় না। শেষে বলব বলরাম ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে এক নম্বর ফুটবলার হয়েই থাকবে।