Surya Kumar Yadav, IND vs SA : সূর্যের উত্তাপের পরেও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বোলারদের পারফরম্যান্সে চিন্তায় টিম ইন্ডিয়া
Surya Kumar Yadav, IND vs SA : কেউ বলছেন তিনি নাকি ভারতীয় ক্রিকেটের `মিস্টার 360 ডিগ্রি`। কেউ আবার ওঁর মধ্যে কয়েক মাস আগে প্রয়াত অ্যান্ড্র সাইমন্ডসকে দেখতে পান। এবি ডিভিলিয়ার্স ও সাইমন্ডসের ছায়ায় তিনি বসবাস করেন কিনা সেটা একমাত্র `ম্যাচের সেরা` সূর্য কুমার যাদবই বলতে পারবেন।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের (ICC T20 World Cup 2022) আগে দক্ষিণ আফ্রিকার (South Africa) বিরুদ্ধে বড় ব্যবধানে সিরিজ জয়। এশিয়া কাপের (Asia Cup 2022) ব্যর্থতা ভুলে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর পর এ বার প্রোটিয়াসদের হারিয়ে এই প্রথমবার ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সিরিজ জিতল 'মেন ইন ব্লু' ব্রিগেড। তবে এটাও ঠিক যে এই জয় বোলারদের জন্য আসেনি। দীনেশ কার্তিক যদি শেষ দিকে ক্রিজে এসে ৭ বলে ১৭ রানে অপরাজিত না থাকতেন, তাহলে ভারত এই ম্যাচ হেরেই মাঠ ছাড়ত। কারণ স্কোরবোর্ড বলছে রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) দল ১৬ রানে জিতেছে। তবে তাই বলে সূর্য কুমার যাদবের ((Surya Kumar Yadav) ইনিংসকে উপেক্ষা করা যায় না। ফলে ডেভিড মিলার ( David Miller) 'কিলার' মেজাজে ৪৭ বলে ১০৬ রানে অপরাজিত এবং কিউন্টন ডি কক (Quinton de Kock) ৪৮ বপলে ৬৯ রানে অপরাজিত থাকলেও শেষরক্ষা হল না। চতুর্থ উইকেটে ১৭৪ রান যোগ করলেও শেষরক্ষা হল না। প্রোটিয়াসরা ৩ উইকেটে ২২১ রানে আটকে যাওয়ার জন্য ১৬ রানে জিতে মাঠ ছাড়ল ভারত।
সূর্যের উত্তাপে গোটা দুনিয়া ছারখার হয়ে যায়। দক্ষিণ আফ্রিকা কোন ছাড়! হায়দরাবাদ, তিরুবনন্তপুরমের পর এ বার গুয়াহাটি। বদলে গিয়েছে তারিখ। বদলে গিয়েছে ভেন্যু। প্রতিপক্ষেরও বদল ঘটেছে। তবে সূর্য নিজের মারকুটে ব্যাটিং-এ বদল ঘটাননি। আর তাই রোহিত শর্মা এবং কেএল (KL Rahul) মারকুটে মেজাজে ব্যাট করে ভিত গড়ে ফেলার পর বিরাট কোহলির (Virat Kohli) সঙ্গে প্রোটিয়াসদের কচুকাটা করলেন। আর সেটাই দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে 'মেন ইন ব্লু' ব্রিগেড-এর জয়ের ভিত গড়ে দিল।
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সদ্য সমাপ্ত সিরিজে ভারতীয় দলের সর্বোচ্চ স্কোরার তিনিই। বিপক্ষের বোলারদের থান্ডা মাথায় 'খুন' করা সূর্যের পরিসংখ্যান দেখলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। ৩ ম্যাচে রান ছিল ১১৫। সর্বাধিক রান করেছিলেন হায়দরাবাদ। ৩৬ বলে ৬৯ রান। গড় ৩৮.৩৩। স্ট্রাইক রেট ১৮৫.৪৮। সামগ্রিক ভাবে এই মারকুটে মুম্বইকর জাতীয় দলের হয়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও সফল। মাত্র ৩৩টি ম্যাচে করে ফেলেছেন ১০৩৭ রান। গড় ৩৯.০৪। স্ট্রাইক রেট ১৭৩.৩৫। সঙ্গে জ্বলজ্বল করছে ১টি শতরান ও ৯ টি অর্ধ শতরান।
কেউ বলছেন তিনি নাকি ভারতীয় ক্রিকেটের 'মিস্টার 360 ডিগ্রি'। কেউ আবার ওঁর মধ্যে কয়েক মাস আগে প্রয়াত অ্যান্ড্র সাইমন্ডসকে (Andrew Symonds) দেখতে পান। এবি ডিভিলিয়ার্স (AB de Villiers) ও সাইমন্ডসের ছায়ায় তিনি বসবাস করেন কিনা সেটা একমাত্র 'ম্যাচের সেরা' সূর্য কুমার যাদবই বলতে পারবেন। তবে এতটা লেখাই যায় যে সাদা বলের ক্রিকেটে টিম ইন্ডিয়া চার নম্বর ব্যাটারকে পেয়ে গিয়েছে। আসন্ন টি-টিয়েন্টি বিশ্বকাপে (ICC T20 World Cup 2022) রোহিতের টিম ইন্ডিয়ার ঝুলিতে ট্রফি ভরাতে হলে, বাইশ গজে সূর্যের উত্তাপ ছড়ানো খুবই জরুরী। সেটা ক্লাসে সিক্সে পড়া ছেলেও জানে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এই ফর্মটাই তো দেখতে চেয়েছে আসমুদ্র হিমাচল। অস্ট্রেলিয়ার (Australia) বিরুদ্ধে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে সেটা করে দেখানোর পর এ বার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ফের 'উত্তাপ' ছড়ালেন 'স্কাই'। শুধু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ (ICC World Cup 2022) নয়, সব সিরিজে দাপট দেখানোর জন্য সূর্যের ব্যাটের শাসন কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা সবাই জানে। এই মুম্বইকর অভিষেকের পর থেকে এই ফরম্যাটে যে ভাবে উত্তাপ ছড়াচ্ছেন, তাতে এতটুকু লিখে দেওয়া যায় যে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে আসন্ন কাপ যুদ্ধে তিনিই হতে চলেছেন রোহিতের মূল কারিগর।
প্রথম ম্যাচের মতো এ দিন দুই ওপেনার দলকে ডুবিয়ে যাননি। তাই সূর্য যেন বাড়তি আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। গত ম্যাচে যেখানে শেষ করেছিলেন, এ দিন যেন সেখান থেকেই শুরু করলেন তিনি। একেবারে হেলায় মারলেন। এরপর মারতে শুরু করে দিলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেই সিরিজের শেষ ম্যাচে যেখানে শেষ করেছিলেন, এ দিন ঠিক সেখান থেকেই শুরু করলেন সূর্য। বিরাটের সঙ্গে মার দিতে শুরু করলেন। মাঠ জুড়ে চার-ছক্কার বন্যা বয়ে গেল। এই ফরম্যাটে তো চার-ছক্কা দেখতেই আম জনতা গ্যালারি ভরায়। দুই তারকার ব্যাটিং দাপটে তাঁদের আশা পূর্ণ হল। চোখের পলকে তৃতীয় উইকেটে ১০২ রান যোগ করলেন দুজন।
২২ বলে ৬১ রানের ইনিংসে টি-টোয়েন্টিতে হাজার রানও পূরণ করলেন। মাত্র ৫৭৩ বলে ১০০০ রান পূরণ করে ফেললেন সূর্য। যেটা বলের নিরিখে দ্রুততম। তাঁর স্ট্রাইকরেট ১৭৪.০০। এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন 'ম্যাড ম্যাক্স'। তিনি ৬০৪ বলে টি-টোয়েন্টিতে হাজার রান করেছেন। তাঁর স্ট্রাইকরেট ১৬৬.০০। তৃতীয় স্থানে থাকা কলিন মুনরো ৬৩৫ বলে হাজার রান করেন। মুনরোর স্ট্রাইকরেট ১৫৭.০০। ৬৪০ বলে টি-টোয়েন্টিতে হাজার রান করেছেন এভিন লুইস (স্ট্রাইকরেট ১৫৬.০০)। থিসারা পেরেরা আবার ৬৫৪ বলে ১৫৩.০০ স্ট্রাইকরেটে এই হাজার রান পূরণ করেছেন। তবে সবাইকে এ দিন ছাপিয়ে গেলেন সূর্য।
এ দিন টসে জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তেম্বা বাভুমা। তবে তাঁর বোলাররা তাঁকে কাঙ্খিত সাফল্য এনে দিতে পারেনি। দুই ভারতীয় ওপেনার রোহিত ও কেএল রাহুল ৯৬ রানের বড় পার্টনারশিপে ভারতের হয়ে মজবুত ভিত গড়ে দেন। সেই ভিতেই ইমারত গড়েন সূর্য ও বিরাট। রোহিত এ দিন ৪৩ রান (৩৭ বল) করে আউট হলেও, রাহুল কিন্তু নিজের অর্ধশতরান পূরণ করেন। তিনি ৫৭ রানের (২৮ বল) ইনিংস খেলেন। তাও আবার টি-টোয়েন্টি কেরিয়ারে সর্বোচ্চ ২০৩.৫৭ স্ট্রাইক রেট বজায় রেখে ঝড় তোলেন রাহুল।
এই দুইয়ের দাপটেই চাপে পড়ে যায় প্রোটিয়াসরা। তবে নিজের পর পর দুই ওভারে দুই ওপেনারকেই সাজঘরে ফেরান কেশব মহারাজ। তবে সূর্য বিধ্বংসী মেজাজে ছিলেন। তিনি প্রমাণ করে দিলেন কেন তিনি আইসিসির ক্রমতালিকায় টি-টোয়েন্টিতে দুই নম্বর ব্যাটার। মাত্র ১৮ বলে নিজের অর্ধশতরান পূরণ করেন সূর্য। কাগিসো রাবাদা ১৫তম ওভারে তো ২২ রান তোলেন তিনি। তার সুবাদেই হু হু করে স্কোরবোর্ডে ভারতের রান বাড়তে থাকে। সূর্য ঝড়ে বিরাট অপরপক্ষে কিছুটা শান্তভাবেই নিজের ইনিংসটা গুছিয়ে নেন। বিরাট শুরুটা দেখে শুনে করলেও, 'ডেথ ওভার'-এ তিনিও নিজের শট খেলা শুরু করেন। কোহলি ও সূর্য তৃতীয় উইকেটে শতাধিক রানের পার্টনারশিপও গড়েন। তবে দুর্ভাগ্যবশক ভুল বোঝাবুঝির জেরে রান আউট হতে হয় সূর্যকে। কোহলি অবশ্য ৪৯ রানেই অপরাজিত থেকে যান। ডেথ ওভারে ক্রিজে এসে মাত্র ৭ বলে ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন দীনেশ কার্তিক। ভারত তিন উইকেটের বিনিময়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ২৩৭ রান তোলে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এটিই টি-টোয়েন্টিতে ভারতের সর্বোচ্চ স্কোর। শুধু তাই নয়, সার্বিক ভাবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে এটি ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান।