সৌরভ পাল 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

নেপথ্য নায়ক। বঙ্গে এই কথার আক্ষরিক অর্থ এমন এক নায়ক যিনি নায়কোচিত হয়ে ওঠেন না, বরং গোটা কাহিনিতে তিনিই নায়ক। সমস্ত ঘনঘটার নেপথ্যেই থেকে যাওয়া এক 'হিরো'। এই নেপথ্য নায়ককে আবার এ যুগে বলা হয় 'UNSUNG HERO'। সামনে থাকা নায়ক নিয়ে যত বন্দনা আর উচ্ছ্বাস! আকাশের নীল ঘন রঙে জয়ের নেপথ্য কাণ্ডারি থাকেন বটে, কিন্তু আলোহীন, বর্ণহীন, তেজহীন রূপে। তবুও তাঁর অস্তিত্ব থাকে। স্টারডমের পিছনে পড়ে যাওয়া এক তারকা, খেলাতেও তাঁর কাজ একেবারে পিছন দিকেই। দ্বারে দাঁড়িয়ে থাকা দ্বাররক্ষক। গোলরক্ষক। গোল যাঁরা করেন, গোল যাঁরা করান, তাঁদের নিয়ে গোটা বিশ্বই মজে বুঁদ। গোলের নেশায় নেশাতুর মানবজাতির যত শিল্প গোল নিয়েই। অথচ গোল আটকে রাখা গোলরক্ষক, তাঁর কথা? জন্ম হয়েছিল আগেই, এবার বোধহয় ফুটবলে নবজন্ম। বুঁফো, ক্যাসিয়াস পরবর্তী যুগে ন্যুয়েরের প্রতিদ্বন্দ্বীর আবিষ্কার হল ফ্রান্সের ইউরো কাপে। পর্তুগালের গোলরক্ষক রুই পেদ্রো দস স্যান্টোস প্যাট্রিসিও।  


হ্যাঁ। রোনাল্ডো যদি পর্তুগালের অখিলিস হন, তাহলে পেট্রোক্লস অবশ্যই হবেন প্যাট্রিসিও। ট্রয়ের সেই যুদ্ধের কথা একটু মনে করিয়ে দিতে চাই। ট্রয়ের যুদ্ধে যাওয়ার আগে অখিলিসকে তাঁর মা বলেছিলেন, 'তুমি এই যুদ্ধে না গেলে তোমার একটা সুন্দর পরিবার হবে। তোমার সন্তান, তোমার স্ত্রী আর তুমি-সুখী পরিবার। কিন্তু কেউ তোমাকে মনে রাখবে না। আর এই যুদ্ধই তোমাকে হাজার হাজার বছর মনে করিয়ে রাখবে। তবে এই যুদ্ধই হবে তোমার মৃত্যু'। অখিলিস বেছে নিয়েছিলেন মৃত্যু, যুদ্ধ আর ইতিহাসে বেঁচে থাকার বীরত্ব। ইতিহাসে বেঁচে থাকার নাম হয়ে রইলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোও, যেমন 'বেঁচে আছেন অখিলিস'। লুই ফিগোর পর্তুগালের সেই বাচ্চা ছেলে আজ নায়ক রোনাল্ডো। দেশের প্রতিনিধিত্ব করে ফ্রান্সেই ফ্রান্স বিজয় করে হলেন ইউরোপ সেরা। তবে এই জয়ে নায়কের মৃত্যু হয়েছিল ২৪ মিনিটেই।


চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন রোনাল্ডো। ক্যাপ্টেন ব্যান্ড তখন নানির হাতে পড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বেড়িয়ে যাচ্ছেন নায়ক, সব ক্যামেরা তাঁর দিকে। চোখের জল যেন মনে করিয়ে দিচ্ছিল গ্রীসের কাছে ইউরোতে হার। তাহলে কি এবারেও স্বপ্ন ভঙ্গ আর ইতাহসের পুনরাবৃত্তি? না, পুনরাবৃত্তি নয়। নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হওয়াই বাকি ছিল। অতিরিক্ত সময়ে চ্যাম্পিয়নদের 'চ্যাম্পিয়নস লাক'কে সঙ্গী করে এদের দুরন্ত গোল। ১-০। জয় পর্তুগালের। কিন্তু এই ম্যাচে পর্তুগালের লড়াইয়ের নায়ক কিন্তু অবশ্যই এদের নয়, নায়ক প্যাট্রিসিও। আসলে ১টা গোল মনে থেকে যায়, আর ১০০টা গোল বাঁচানোও ঢাকা পড়ে গোলের জৌলুসে। 


পেট্রোক্লস হেক্টরের তলোয়ারে শহীদ গতি পেয়েছিলেন। আর এখানে এদেরের গোল একেবারে কফিনবন্দি করেছে প্যাট্রিসিও'র 'পেট্রিওটিজম'। কটা গোল বাঁচিয়েছেন প্যাট্রিসিও? বলা কঠিন! কারণ সংখ্যাটা অনেক। গ্রিজম্যান, পোগবা, পায়েত, অলিভার জিরার্ডদের এক একটা বুলেট শট, অবিশ্রান্ত, ক্লান্তহীনভাবে সেভ, সেভ আর সেভ। কোয়ার্টার ফাইনালে ট্রাইবেকারে প্যাট্রিসিও'র হাতেই সেমিতে পর্তুগাল। সেমিতে ওয়েলসকে আটকে দিয়েছিল এই প্যাট্রিসিও'ই। আর ফাইনালে বিপক্ষের পা থেকে ছুটে আসা অজস্র গোলমুখী বিপদকে 'সেফ হ্যান্ড সেভ', নায়ক প্যাট্রিসিও'ই। পর্তুগাল চ্যাম্পিয়ন হল, এদের হিরো হলেন, মহানায়ক হয়ে ট্রফি তুললেন রোনাল্ডো, আর যে হাত দেশকে শিরোপা দিল, তা কেবলই তালি দিয়েই ক্ষান্ত রইল।