Umesh Yadav, IPL 2022: কয়লাখনির অন্ধকার থেকে Team India-র সফর! আবেগপ্রবণ KKR-এর `বিদর্ভ এক্সপ্রেস`
২০১০ সালের জিম্বাবোয়ে সফরে সুরেশ রায়নার নেতৃত্বে তাঁর একদিনের ফরম্যাটে অভিষেক ঘটেছিল। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে উমেশই ছিলেন তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী।
নিজস্ব প্রতিবেদন: এ ভাবেই ফিরে আসা যায়। মেগা নিলামে প্রথমবারের বিডে কোনও দল তাঁর জন্য দর হাঁকেনি। অবিক্রীত থেকে গিয়েছিলেন উমেশ যাদব (Umesh Yadav)। দ্বিতীয়বার নিলামে উঠলে তাঁকে তুলে নেয় কলকাতা নাইট রাইডার্স (Kolkata Knight Riders)। সেই উমেশই চলতি আইপিএল-এ (IPL 2022) এখনও পর্যন্ত তিন ম্যাচে সর্বোচ্চ আট উইকেট নিয়ে বেগুনী টুপির মালিক। আগুনে পেসের সাহায্যে প্রতি ম্যাচেই ৩৪ বছরের 'বিদর্ভ এক্সপ্রেস' বুঝিয়ে দিচ্ছেন যে তিনি কতখানি সাবলীল। শেষ ম্যাচে পঞ্জাব কিংসের (Punjab Kings) বিরুদ্ধে ২৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ফের একবার ম্যাচের সেরা হলেন টিম ইন্ডিয়ার (Team India) এই জোরে বোলার। এহেন উমেশ মনে করেন, কয়লা খনিতে থেকে টিম ইন্ডিয়ার (Team India) হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখা তাঁর কাছে দিবাস্বপ্ন দেখা ছাড়া কিছু নয়।
নাইটদের ইউটিউব চ্যানেলে তাঁর উত্থানের কাহিনি জানিয়েছেন। উমেশ সেখানে বলেন, "আমি যেখান থেকে উঠে এসেছি, সেখানকার খুব কম সংখ্যক ছেলেই দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখত। ক্রিকেট খেলা এবং সেটা নিয়ে স্বপ্ন দেখাই ছিল দিবাস্বপ্ন। কিট, ব্যাট, প্যাড, জুতো এগুলো কেনার মতো পয়সা ছিল না। কারণ ওই ছেলেগুলোর বাবারা খনিতে কাজ করত। হাড়ভাঙ্গা খাটনি খাটতে হতো। আমার অবস্থাও ওদের মতোই ছিল। সেই সময়ে আমি কখনও ভাবিনি যে একদিন দেশের হয়ে খেলব। আমার কাছে ছিল কল্পনার অতীত।"
৫২টি টেস্ট ম্যাচ, ৭৫টি একদিনের ম্যাচ এবং সাতটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন উমেশ। দু’বারের আইপিএল চ্যাম্পিয়ন কেকেআর (KKR) তাঁকে ২ কোটি টাকা দিয়ে কিনেছে। নাইট শিবিরে এর আগেও খেলেছেন উমেশ। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত খেলেছিলেন তিনি। চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্যও ছিলেন তিনি। তবে গত কয়েক বছর দেশের জার্সিতে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তাঁকে সুযোগ দেওয়া হয় না। ২০১৮ সালে শেষবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের (West Indies) বিরুদ্ধে একদিনের ম্যাচ খেলেছিলেন। ২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার (Australia) বিরুদ্ধে তাঁকে শেষ টি-টোয়েন্টি খেলতে দেখা গিয়েছিল। তরুণদের জন্য তাঁকে ভুলে গিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। এমনকি আইপিএল-এর গত মরসুমে দিল্লি ক্যাপিটালসে (Delhi Capitals) সুযোগ পেলেও প্রথম একাদশে দেখা যায়নি তাঁকে। কে জানত, সেই উমেশই নাইট জার্সি গায়ে চাপিয়ে এমন বিধ্বংসী রূপ ধারণ করবেন! চেন্নাই সুপার কিংসের (Chennai Super Kings) বিরুদ্ধে ২০ রানে ২ উইকেট নেওয়ার পর রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের (Royal Challengers Bangalore) বিরুদ্ধে নিয়েছিলেন ১৬ রানে ২ উইকেট। এ বার পঞ্জাবের ব্যাটিংকে একাই শেষ করে দিলেন তিনি।
২০১০ সালের জিম্বাবোয়ে সফরে সুরেশ রায়নার নেতৃত্বে তাঁর একদিনের ফরম্যাটে অভিষেক ঘটেছিল। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে উমেশই ছিলেন তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। তাঁর আগে ছিলেন মিচেল স্টার্ক এবং ট্রেন্ট বোল্ট। সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে সেমিফাইনালে হেরে প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নিয়েছিল ভারত। উমেশের ঝুলিতে এসেছিল ১৮টি উইকেট।
সেই বিশ্বকাপ অভিযান প্রসঙ্গে উমেশ বলছেন, "২০১৪ সালে কেকেআর-এর চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য ছিলাম। এরপর আমার কাছে সবচেয়ে বড় মুহূর্ত ছিল ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে আমি সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ছিলাম। কিন্তু বেশি ম্যাচ খেলা হল না! আসলে এটাই জীবন। এগিয়ে যেতে হয়।"
শুধু টিম ইন্ডিয়ার জার্সিতে সীমিত ওভার নয়, টেস্ট দলেও নিয়মিত সুযোগ তাঁর কাছে আসে না। তবে এগুলো নিয়ে আর আক্ষেপ করতে রাজি নন। মাঝে এখন কয়েক দিনের বিরতি। এরপর ৬ এপ্রিল পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে কেকেআর। সেই ম্যাচে আবার বল হাতে আগুন ঝরানোর অপেক্ষায় 'বিদর্ভ এক্সপ্রেস'।