সুদীপ দে: প্রথম দিকে, দুর্গাপূজা কেবল কলকাতার ধনী ‘বাবু’দের অট্টালিকাতেই আয়োজিত হত। ১৭৯০ সালে হুগলির গুপ্তিপাড়ায় বারো জন ব্রাহ্মণ বন্ধু মিলে একটি সর্বজনীন পূজা করবেন বলে মনস্থ করেন। প্রতিবেশীদের থেকে চাঁদা তুলে আয়োজিত হয় সেই পূজা। আর এই ভাবেই বাংলায় সর্বজনীন পূজানুষ্ঠানের সূচনা হয়। এই ভাবেই বাংলায় সর্বজনীন পূজানুষ্ঠানের রীতি লোকমুখে “বারোয়ারি পূজা” নামে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বারোয়ারি বলতে বোঝায় বাঙালি হিন্দুদের সর্বজনীন পূজা বা উৎসব। শব্দটি মূলত পশ্চিমবঙ্গে প্রচলিত। "বারোয়ারি" শব্দটির উৎপত্তি “বারো” (১২) ও “ইয়ার” (বন্ধু) শব্দদুটি থেকে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

একশো বা ১০০-এর একটা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। জন্মদিন হোক বা প্রতিষ্ঠাদিবস, ১০০-এ পৌঁছানো মানে তা যেন একটা কৌলিন্য স্পর্শ করে ফেলে, তা যেন ঢুকে পড়ে ইতিহাসের লালচে পাতায়। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী তখন ১৯১৯ সাল (বাংলার ১৩২৬ সন)। রায়বাহাদুর গিরিশচন্দ্র চট্টপাধ্যায়ের উদ্যোগে শেওড়াফুলি দক্ষিণ পাড়ায় শুরু হয় বারোয়ারি দুর্গাপুজো। সম্ভবত ওই একই বছরে বাগবাজার সার্বজনীন দুর্গাপুজোরও সূচনা হয়। এই পুজো সমিতির সভাপতি হন রায়বাহাদুর গিরিশচন্দ্র চট্টপাধ্যায়। এই পুজো এ বছর ঢুকে পড়েছে ইতিহাসের সেই কুলিন অধ্যায়ে। কারণ, এ বছর এই পুজো একশো বছরে পা দিল। শেওড়াফুলি এলাকার তো বটেই, দক্ষিণ পাড়ার এই পুজো হুগলী জেলার সবচেয়ে প্রাচীন বারোয়ারি দুর্গাপুজো। এই পুজোর শতবর্ষ উপলক্ষ্যে সেপ্টেম্বর থেকেই নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে উদযাপন শুরু করে দিয়েছেন শেওড়াফুলি দক্ষিণ পাড়ার সকলে। তবে শুধু গান-বাজনার জলসায় নয়, ২ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত রক্তদান শিবির, চক্ষুদানের অঙ্গিকারের শিবির, দুঃস্থদের শীতবস্ত্র দান, দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা সামগ্রী প্রদান, দূষণমুক্ত পরিবেশের লক্ষ্যে ‘প্লাস্টিক বর্জন’ প্রচারাভিযান, অঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং সব শেষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে পুজোর মূলপর্বে ঢুকে পড়েছে শেওড়াফুলি দক্ষিণ পাড়ার বারোয়ারি দুর্গাপুজো।



শেওড়াফুলি দক্ষিণ পাড়ার বারোয়ারি দুর্গাপুজোর এ বারের থিম ‘অন্য দুর্গা’। প্রতিদিন যাঁরা দু’হাতে দশ হাতের কাজ সামলাচ্ছেন, সংসার সামলাচ্ছেন, ঘরে বাইরে যুদ্ধ করছেন নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে— সেই সব ‘জীবন্ত দুর্গা’দের সম্মান জানাচ্ছে দক্ষিণ পাড়ার বারোয়ারি দুর্গাপুজো সমিতি।


আজ চতুর্থী। মহাপঞ্চমীতে এ পুজোর উদ্বোধন করবেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল মাননীয় কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। ইতিহাসের সাক্ষী হতে পুজো মন্ডপে ভিড় জমাবেন হাজার হাজার দর্শনার্থী। সমাজ সেবার পথে এই ভাবেই আরও একটা বছর পেরিয়ে যাবে দক্ষিণ পাড়া বারোয়ারি দুর্গাপুজো সমিতির পুজো।