নিজস্ব প্রতিবেদন : বিরোধীদের অবলীলায় উড়িয়ে দিয়ে নোয়াপাড়ার প্রেস্টিজ ফাইট জিতে নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার ভোটগণনা শেষ হতে দেখা যায়, ৬৩ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী সুনীল সিং। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিজেপি। অন্যদিকে ২০১৬ সালে জেতা আসনে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে কংগ্রেসের।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

দু'যুগ পর ২০০১ সালে বামেদের হাত থেকে নোয়াপাড়া ছিনিয়ে নিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এরপর ২০০৬ সালে হারানো আসন পুনরুদ্ধার করে সিপিআইএম। কিন্তু ২০১১ সালে পালা বদলের সময় পরিবর্তনের ঝড়ে নোয়াপাড়া ফের ঘাসফুলের ঝুলিতে যায়। তবে ২০১৬ সালে ফের তৃণমূলের কাছ থেকে নোয়াপাড়া ছিনিয়ে নেন বাম-কংগ্রেস বিরোধী জোটপ্রার্থী। তৃণমূল প্রার্থী মঞ্জু বসুকে ১০০০ ভোটে পরাস্ত করে জয় পান জোটপ্রার্থী কংগ্রেসের মধুসূদন ঘোষ। এবার সেই আসনকে ফের নিজেদের দখলে আনাই ছিল তৃণমূলের টার্গেট।


কিন্তু প্রার্থী ঘোষণা পর্বেই নোয়াপাড়া নিয়ে তৈরি হয় এক নয়া নাটক। নোয়াপাড়ার দু'বারের তৃণমূল বিধায়ক মঞ্জু বসুকেই বিজেপি প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে 'বড় চমক' দেন মুকুল রায়। যদিও উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক তাঁর বাড়িতে 'হত্যে দিতেই' ভোলবদল করেন মঞ্জু বসু। সাফ জানিয়ে দেন, "তিনি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ অনুসারেই চলবেন।" তবে মুকুল রায়ের 'মুখের গ্রাস' কেড়ে নিয়ে মঞ্জু বসুর ঘাসফুল ছেড়ে পদ্মফুলে যাওয়া আটকে দিলেও, নোয়াপাড়ায় প্রার্থী নির্বাচনে মঞ্জু বসুর উপর আর ভরসা করেনি দল। তৃণমূলের জয়ের পিছনে বড় ভূমিকা রয়েছে এই সিদ্ধান্তের।


মঞ্জু বসুর ভাবমূর্তি নিয়ে প্রথম থেকেই প্রশ্নচিহ্ন ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি এলাকার মানুষের সঙ্গে সেভাবে যোগাযোগ রাখতেন না। তাঁর জনসংযোগ খুব খারাপ। এদিকে মঞ্জু বসুর নেতিবাচক ভাবমূর্তির ঠিক উল্টো সুনীল সিং এলাকায় দাপুটে নেতা হিসেবে পরিচিত। অর্জুনের আত্মীয় সুনীল সিং দীর্ঘদিন গারুলিয়া পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। পাশাপাশি ২০১৬ নির্বাচনের মতো এবার নোয়াপাড়ায় বিরোধী জোট হয়নি। লড়াই ছিল চতুর্মুখী। যার সুবিধা পায় তৃণমূল। সেইসঙ্গে মঞ্জু বসুর বিজেপিতে 'যোগ' দিয়েও ফিরে আসা বুঝিয়ে দেয়, রাজ্যে গেরুয়া শিবির দ্বিতীয় স্থান দখলের লড়াইয়ে দৌড়ে থাকলেও এখনও বিকল্প হয়ে উঠতে পারেনি।


নোয়াপাড়ায় প্রার্থী বিতর্কের পরই দলের হয়ে জয় হাসিল করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন 'দাবাং নেতা' হিসেবে পরিচিত অর্জুন সিং। বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী অর্জুন সিং নোয়াপাড়া উপনির্বাচনের দিন একটা সম্পূর্ণ ওয়্যাররুমই তৈরি করে ফেলেছিলেন। হোটেলের ঘরে বসে ৫টি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ক্রমাগত ভোট পরিস্থিতির উপর নজর রাখেন তৃণমূল বিধায়ক। কোন বুথে কত ভোটার, কত ভোট পড়ল, কত ভোট পড়া বাকি নিজের স্ট্রং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ খবন নেন তিনি। সেইমতো 'নির্দেশ'ও পৌঁছে যায় তাঁর অনুগত সৈনিকদের কাছে।


আরও পড়ুন, উলুবেড়িয়া উপনির্বাচন : কড়া নিরাপত্তায় চলছে ভোটগণনা, এগিয়ে তৃণমূল


উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা হতেই নোয়াপাড়ার মাটি কামড়ে পড়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশ্বস্ত সৈনিক হিসেবে পরিচিত রাজ্য খাদ্য ও খাদ্য সরবরাহ মন্ত্রী তথা উত্তর ২৪ পরগনা তৃণমূল জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তাঁর নেতৃত্বেই প্রেস্টিজ ফাইট জিততে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ভুলে ঝাঁপায় সব পক্ষ। শুধু তাই নয় নোয়াপাড়া উপনির্বাচনের প্রচারপর্বে ময়দানে নামেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো তৃণমূলের হেভিওয়েটরাও। সব মিলিয়ে নোয়াপাড়ায় 'অল-আউট অ্যাটাক'-এ যায় তৃণমূল। আর তাতেই হল লক্ষ্যভেদ।