ভূতের উপদ্রপ নাকি মানুষের কীর্তি? প্রশ্নের মাঝেই তিন মাস বাড়ি ছাড়া দম্পতি
ভৌতিক কান্ড বেড়েছে কয়েকগুন। বাধ্য হয়ে বিজ্ঞান মঞ্চের দারস্থ উপদ্রুত পরিবার।
নিজস্ব প্রতিবেদন: নানা রকম অলৌকিক কান্ড ঘটছে বাড়িতে। ভূতের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে কোন্নগরে শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। প্রায় সারে তিন মাস পর বাড়ি ফিরেছেন। ফিরেও স্বস্তি নেই। ভৌতিক কান্ড বেড়েছে কয়েকগুন। বাধ্য হয়ে বিজ্ঞান মঞ্চের দারস্থ উপদ্রুত পরিবার।
শুক্রবার উত্তরপাড়া বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা দীপঙ্কর মৈত্র ও তার পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে যান। খতিয়ে দেখে বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা জানান কোনও অলৌকিক ঘটনা নয়। এর পিছনে পরিবারেরই কারোর হাত রয়েছে। মোবাইলে ফোন এলেও নম্বর না দেখিয়ে স্টার দেখানো, কাগজে লিখে হুমকির মত কয়েকটি বিষয়ে খটকা থাকায় পুলিশের কাছে যেতে পরামর্শ দেন বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা।
উত্তরপাড়ার ৩৫, রামলাল দত্ত লেনের বাসিন্দা দীপঙ্কর মৈত্র। কলকাতায় কনসালটেন্সির কাজ করেন। তার স্ত্রী তনুশ্রী মৈত্র আঁকা শেখান। ছেলে দীপ্তাক্ষ উত্তরপাড়া অমরেন্দ্র বিদ্যাপিঠের ক্লাস এইটের ছাত্র। দীপঙ্কর বাবু জানান গত বছর ভাইফোঁটার পর থেকে তার বাড়িতে অদ্ভুত কান্ড ঘটতে থাকে। কখনও রাত্রে শুয়ে আছেন বিছানা জলে ভিজে গেল। কখনও আবার হঠাৎ করে আগুন লেগে গেল বিছানার চাদরে।
চেয়ার নিজে থেকেই সরে যাওয়া,কাঁচের গ্লাস হঠাৎ করে উপরে লাফিয়ে উঠছে তো কখনো পাথরের টুকরো লেগে আলমারির কাঁচ ভেঙে যাচ্ছে। কখনও আবার ফোন করে কেউ বলছে আলমারি খুলে দেখ টাকা নেই। কাগজে লিখে হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।
দিন দশেক আগে দীপ্তাক্ষ বিকালে পড়তে বেড়িয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। কয়েক ঘন্টা খোঁজাখুঁজির পর নিজেই বাড়ি ফেরে সে। জানায় কোন্নগর শ্মশানে কেউ তাকে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কিভাবে তা সে জানেনা। এমন সব আজব কান্ড ঘটতে থাকায় রীতিমত আতঙ্কিত হয়ে পড়েন মৈত্র দম্পতি। কোন্নগরের শ্বশুর বাড়ি থেকে আবার উত্তরপাড়ার বাড়িতে ফেরেন। কোন্নগরে থাকাকালিন কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু উত্তরপাড়ার বাড়িতে ফিরতেই একই ঘটনা ঘটতে থাকে। তনুশ্রীর দাদা প্রণব আদক বোনের বাড়িতে কী ঘটছে তা জানতে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
শুক্রবার বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা দীপঙ্কর বাবু এবং তার পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে ঢোকেন। বাড়ির দোতালায় দুটি বেডরুম, একটা ডায়নিং ও একটি বৈঠকখানা রয়েছে। মেঝেতে ভাঙা কাঁচের টুকরো,লোহার কয়েকটি যন্ত্রপাতি ছড়ানো অবস্থায় দেখা যায়। দীপ্তাক্ষ মাটি দিয়ে ঠাকুর গড়ে। যে দুর্গা ঠাকুর তৈরী করে সে পুরষ্কার পেয়েছিল তার হাত ভাঙা অবস্থায় পাওয়া যায়। চেয়ারের আগুনে পোড়া গদি সহ সবকিছু দেখান দীপঙ্কর বাবু।
আরও পড়ুন:
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের হুগলি জেলা সম্পাদক অমিত মুখার্জী বলেন, যেসব ঘটনার কথা বলছেন সেটা বাইরে থেকে ঘটার কোনও জায়গা নেই। হঠাৎ আগুন লাগার কারন পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ও গ্লিসারিনের বিক্রিয়া। গদির স্পঞ্জে এখনও সেই গন্ধ রয়েছে। এক্ষেত্রে ভৌতিক অথবা অলৌকিক কিছু নেই বলেই জানিয়েছেন তিনি। যে কাগজে হুমকি লেখা হয়েছে সেগুলো সবই ওনাদের ঘরের কাগজ। ঘরের ভিতর থেকেই পাথর ছুঁড়ে কাঁচ ভাঙা হয়েছে। পুলিসে অভিযোগ জানাতে বলেছেন তিনি।
বিজ্ঞান মঞ্চের আরেকজন সদস্য তুহিন বসু বলেন,"যত অলৌকিক কান্ড দেখেছি তাতে ভূত ভগবানকে এড়িয়ে চলে এখানে ভগবানের হাত ভেঙে দিয়েছে। তাতে বোঝাই যায় এটা ম্যানমেড। এতক্ষন ঘরে আছি কিছু ঘটেনি। আমাদের মনে হয়েছে লৌকিক কোনও সূত্র এই ঘরের মধ্যেই লুকিয়ে আছে।"
(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)