ভবানন্দ সিংহ: প্রায় ৩ বছর ধরে একঘরে এক পরিবার। ফলে সোনার দোকানে আসেনা পড়শীরা। আসলে মাতব্বরদের নিদানে দিতে হবে আর্থিক জরিমানা। জুটবে তালিবানি প্রথায় গলা ধাক্কা, চড়, কান ধরে ওঠবস জাতীয় সাজা। না কোনও অজগ্রামে নয় উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রশাসনিক দফতরের তিন কিলোমিটারের মধ্যে ঘটেছে এই ঘটনা। মুরুব্বিদের দাপট এতটাই যে তাদের নিদানের কথা বাইরে প্রকাশ করা তো দুরের কথা তাদের কথা মুখে আনতে ভয় পান এলাকাবাসীর।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

গত ২০ থেকে ২৫ বছর ধরেই নাকি চলে আসছে এই তালিবানি শাসন। সব জানেন এলাকার বিজেপির টিকিটে জেতা গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য তথা স্থানীয় কমলাবাড়ি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান। এই তালিবানি শাসনের সভায় মাঝে মধ্যে তাকেও দেখা যায় বলে অভিযোগ।


কিন্তু কেউ প্রশাসনের দারস্থ হয়না। যদিও সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের কাছে সবটা শুনে রায়গঞ্জের মহকুমা শাসকের আশ্বাস অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন তারা। কিন্তু মুরুব্বিদের সৃষ্টি করা এহেন ভয়ংকর ভয় আর আতঙ্কের বাতাবরণ যেখানে জেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় এতদিন থেকে কায়েম করা আছে, সেই ভয়ের পাহাড় ভেঙে কি কেউ অভিযোগ করতে পারবে? প্রশ্ন উঠছে সেইখানেই।


আরও পড়ুন: Burdwan: পুলিসের পোশাকে তৃণমূল নেতা, বর্ধমানে বিতর্কে শাসকদল


পাশাপাশি এলাকায় দেখা গিয়েছে যে গ্রামের মুরুব্বিরা পরিষ্কার বলছেন তাদের গ্রামে পুলিসের দরকার নেই। সেখানে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহন করবে কিনা প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে।


উত্তর দিনাজপুর জেলার প্রশাসনিক ভবন থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে কমলাবাড়ি ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার দক্ষিণ সুশিহার গ্রাম। এই গ্রামে প্রায় ৩ বছর ধরে একঘরে হয়ে আছে জয়কান্ত বিশ্বাসের পরিবার। তাদের সঙ্গে কথা বলেনা এলাকার কেউ। মুরুব্বিদের ভয়ে জয়কান্ত বাবুর ছেলে সুশান্ত বিশ্বাসের সোনার দোকানেও যায় না গ্রামবাসীরা। মাস দুয়েক আগে গ্রামের তাস খেলার আড্ডার জায়গায় আচমকাই চলে যান জয়কান্ত বাবু। সেই তাস খেলা চলার সময় দুজন গ্রামবাসী যুবক জয়কান্ত বিশ্বাসের কথায় সারা দেন। এই খবর মুরুব্বিদের কানে পৌছাতেই গ্রামবাসীদের ডাকা হয় গ্রামের বারোয়ারী মন্দিরের মাঠে। একঘরে জয়কান্তর কথায় সারা দেওয়ায় গ্রামের দুই যুবকে ৫০০০ টাকা জরিমানা করে মুরুব্বিরা।


দোষী প্রশান্ত সরকার মুরুব্বিদের ফাইনের টাকা কমানোর অনুরোধ করতেই তাকে সেই মুহুর্তে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে সামনে কান ধরে ওঠবস করান মুরুব্বিরা। দিন হাজিরায় শ্রমিকের কাজ করা প্রশান্ত আর কিছু বলেননি। অনেক কষ্টে জরিমানার টাকা দিয়েছেন।


প্রশান্তর উপর মুরুব্বিদের তালিবানি শাসন দেখে ভয়ে দিন আনা দিন খাওয়া সমর বিশ্বাস গ্রাম্য মুরুব্বিদের ফতোয়া মেনে নেন মুখ বুজে।


আরও পড়ুন: Bengal Weather Update: শুরু হয়ে গেল শীতের মিনি স্পেল, চলবে সোমবার পর্যন্ত


এই সবকিছুই জানেন এলাকার বিজেপি দলের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য তথা কমলাবাড়ি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান নারায়ণ চন্দ্র বালো। কিন্তু কেউ পুলিস প্রশাসনের কাছে কিছু বলেন না।


নারায়ন বালোর বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে ওই বিচারে উপস্থিত থাকার। নারায়ন বাবু বিচারে নিজের থাকার কথা স্বীকার না করলেও দক্ষিণ সুশিহার গ্রামের ঘটনার কথা স্বীকার করছেন।


গ্রামের মুরুব্বি হরিপদ তরফদারের আস্ফালন ধরা পড়েছে এই ঘটনায়। তাদের এলাকায় পুলিসের প্রয়োজন নেই। ফাইনের টাকায় বারোয়ারী মন্দিরের পুজোয় ব্যবহারের বিষয়ে সবটাই জানিয়েছেন তিনি।


রায়গঞ্জের মহকুমা শাসক কিংশুক প্রামানিক অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিয়েছেন। সংবাদ মাধ্যমের কাছে এসব কথা শুনেই এলাকায় কোন রকম খাপ পঞ্চায়েত বসানো যাতে না হয় সেদিকে ব্যবস্থা নিতে পুলিস পাঠানো হয়েছে এলাকায়।


কিন্তু প্রশ্ন উঠছে একঘরে জয়কান্ত বিশ্বাসের পরিবারের উপর থেকে একঘরের তকমা তুলতে কী কোনও ব্যবস্থা নেবে না প্রশাসন?


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)