নিজস্ব প্রতিবেদন: কয়েকটা বাড়ি পরেই ছিল ওই যুবকের বাড়ি।  বাড়ি ফাঁকা থাকলেই ওই যুবক বারবার আলাপ জমাতে আসত ‘বৌদি’র সঙ্গে। নানা অছিলায় বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করত। এক-দুবার প্রেমের প্রস্তাবও দিয়েছিল। কিন্তু লাভ হয়নি তাতে।  একাধিকবার পাড়ার ‘দেওর’কে বারণ করেছিলেন বছর বত্রিশের মহিলা। দিন-দিন মাত্রা ছাড়াচ্ছিল সে। ইদানীং কুপ্রস্তাব দিতেও শুরু করেছিল। রাস্তায় দাঁড়িয়েই ওই  ‘দেওর’ কেই একাধিকবার বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন।  কিন্তু পাড়ার লোক তা দেখে ভাবল অন্য কিছু! গ্রামে রটে গেল ‘দেওর’এর সঙ্গে বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্ক রয়েছে ওই মহিলারই।  গ্রামে রটে যায় ‘ওই মহিলাই দুশ্চরিত্রা’… কথাটা কানে যায় তাঁরও।  দুই সন্তানের মা মানতে পারেননি এই অপবাদ। মহালয়ার সকালেই মানসিক অবসাদে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করলেন তিনি। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে মালদার হবিবপুরের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কলাইবাড়ি গ্রামে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন: যুবককে বেধড়ক মেরে পুড়িয়ে দেওয়ার নিদান মোড়লদের!


রাধা নিয়োগীর স্বামী আনন্দ পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। সুখের সংসার আলো করে রয়েছে দুই সন্তানও।   ছোটো ব্যবসার সামান্য আয়ে স্বাচ্ছল্য না থাকলেও সুখী পরিবারে অশান্তি ছিল না কোনও। কিন্তু তাতে কুনজর পড়ে প্রতিবেশী যুবক বিকাশ মণ্ডলের।


মৃতার পরিবারের অভিযোগ, রাধা সঙ্গে তাঁর স্বামীর সম্পর্ক খুবই ভালো ছিল। একে অপরকে ভীষণই ভালোবাসতেন তাঁরা।  আনন্দ  কাজে বেরিয়ে যাওয়ার পরই  সংসারের যাবতীয় কাজ একাই করতেন রাধা।  দোকান-বাজার-মুদিসদাই সবই তাঁকে করতে হত। রাস্তাতেই রাধার ওপর নজর পড়েছিল বিকাশের।  তাঁর সঙ্গে নিজে থেকে আলাপ জমায় সে। প্রথমদিকে দেখা হলেই বিকাশের সঙ্গে কথা বলতেন রাধা। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই বিকাশের মুখ্য উদ্দেশ্য বুঝে যান রাধা। এই সম্পর্ক নেহাতই বন্ধুত্বের নয়, তাঁর ওপর যে বিকাশের কুনজর রয়েছে, তা আঁচ করতে পেরেছিলেন রাধা।


বিকাশকে এড়িয়ে যেতে শুরু করেন রাধা। দেখা হলে কথা না বলেই চলে যেতে শুরু করেন। কিন্তু বিকাশ ভালোভাবে ব্যাপারটা নেয়নি। রাধাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করা শুরু করে সে। প্রথমে প্রেমের প্রস্তাব, তারপর শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দিতে শুরু করে বিকাশ।


আরও পড়ুন:  পাড়ার পুজোর প্যান্ডেলের ভিতর চোখ যেতেই জ্ঞান হারালেন স্থানীয় বাসিন্দারা! ভয়ঙ্কর দৃশ্য


বিকাশকে একাধিকবার রাস্তায় দাঁড়িয়েই সাবধান করেছিলেন রাধা।  রাস্তায় যখন বিকাশের সঙ্গে রাধা কথা বলতেন-তা দেখেন বেশ কয়েকজন প্রতিবেশী। তাতেই গ্রামে রটে যায়, বিকাশের সঙ্গে প্রেম করছেন রাধা।  লোকমুখে বিষয়টি গোটা গ্রাম ছড়িয়ে পড়ে। কথা কানে যায় রাধারও।  পরিবারের সকলের কাছে নিজেকে ছোটো মনে করতে শুরু করেন রাধা।


আরও পড়ুন: এক জন হাতের শিরা কাটল, অপরজন খেল ঘুমের ওষুধ! ক্লাসরুমে ২ ছাত্রীর আত্মহত্যার চেষ্টা


মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেন রাধা। পরিবারের দাবি, রাধা নিজেকে সকলের থেকে গুটিয়ে রাখতে শুরু করে।  মহালয়ার ভোরে যখন সকলে ঘুমিয়ে ছিলেন, তখনই রান্নাঘরে গিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন রাধা। চামড়া পোড়া গন্ধ পেয়ে ঘুম থেকে উঠে যান আনন্দ। তাঁরই চিত্কারে স্থানীয়রা ছুটে আসেন। রাধা উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই মৃত্যু হয় রাধার।


ঘটনার পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছে অভিযুক্ত যুবক বিকাশ মণ্ডল। ঘটনার তদন্তে নেমেছে হবিবপুর থানার পুলিশ। এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। কিন্তু রাধা এই মর্মান্তিক পরিণতি ফের প্রশ্ন তুলে দিল সমাজের কাছে।