ফের মিরাক্যাল! স্টেজ ফোর ফুসফুসের ক্যান্সারকে হারিয়ে জীবনযুদ্ধ জয় হালিশহরের অমিতেরও
`সেই দিনগুলোতে মানুষের ভালো ও খারাপ দিক নতুন করে দেখেছি।`
নিজস্ব প্রতিবেদন : পাঁচ বছর আগেকার কথা। হঠাৎ বিনা মেঘে বজ্রপাত। একটা রিপোর্ট কেড়ে নিয়েছিল পায়ের তলার মাটিটাই। কিন্তু ৫ বছর পর আজ স্বস্তির নিঃশ্বাস হালিশহরের অমিত চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারে। অসম লড়াই জিতে বিজয়ীর হাসি তাঁর মুখে।
হাওড়ার বাগনানের সোমা দলুইয়েরপর হালিশহরের অমিত চট্টোপাধ্যায়। ক্যান্সারের মারণথাবা থেকে ফিরে এসেছেন তিনিও। ২০১৪-র জুন মাসে ৩৬ বছরের অমিত চট্টোপাধ্যায়ের ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে। একেবারে স্টেজ ৪ দশা। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের। বাবা, মা, স্ত্রী ও ৩ বছরের সন্তানকে নিয়ে পাঁচজনের পরিবারে একমাত্র রোজগেরে বলতে শুধু অমিত চট্টোপাধ্যায় নিজে। কী হবে? এই বিশাল চিকিত্সার ব্যয়ভার কে বহন করবে? সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই মুম্বইতে পাড়ি।
মুম্বইয়ের টাটা মেডিক্যালে শুরু হল চিকিতৎসা। ২০১৪-র জুলাইতে প্রথম কেমো দেওয়া হয় অমিত চট্টোপাধ্যায়কে। এখন ২১ দিন অন্তর অন্তর কেমো নিতে হবে। অথৈ জলে পড়েন অমিত চট্টোপাধ্যায়। প্রতিবার তো আর মুম্বইতে গিয়ে কেমো নেওয়া সম্ভব নয়! টাটা মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের কাছেই কলকাতার ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের খোঁজ চান অমিত চট্টোপাধ্য়ায়। টাটা মেডিক্যাল থেকে তখন তাঁকে রেফার করে দেওয়া হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক শিবাশিস ভট্টাচার্যের কাছে।
এবার কলকাতায় ফিরে শুরু হয় দ্বিতীয় পর্বের লড়াই। চিকিৎসক শিবাশিস ভট্টাচার্যের পরামর্শে ALK ট্রান্স লোকেশন পজেটিভ টেস্ট করা হয় অমিত চট্টোপাধ্যায়ের। টেস্ট রেজাল্ট পজেটিভ হয়। ব্যস, একটা আলোর দিশা মেলে। সেই দিশা ধরেই শুরু হয় অসম্ভবকে সম্ভব করার লড়াই। টেস্ট রেজাল্ট পজেটিভ হওয়ায় ক্রিজোটিনিব ওষুধ নিতে শুরু করেন অমিত চট্টোপাধ্য়ায়। ৯ মাস পর, ২০১৫-র ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আস্তে আস্তে চিকিৎসায় সাড়া দিতে শুরু করেন অমিত। মনের বিশ্বাস ও জোর ফিরে পেতে শুরু করেন। শুরু হয় হার না মানার লড়াই। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন অমিত। প্রসঙ্গত, ১০০ জনের মধ্যে ২ থেকে ৩ জনের ক্ষেত্রে এই টেস্ট পজেটিভ আসে। অমিত চট্টোপাধ্য়ায়ের ক্ষেত্রে যা হয়েছিল।
আজ ৫ বছর পরেও তাঁর শরীরে আর থাবা বসাতে পারেনি ক্যান্সার। তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। টিউমার সম্পূর্ণরূপে নিরাময় হয়েছে। কার্যত মৃত্য়ুর মুখ থেকে ফিরে আসা অমিত চট্টোপাধ্য়ায় তাঁকে জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার সবটুকু কৃতিত্ব-ই দিচ্ছেন চিকিৎসকদের। আর ধন্যবাদ জানাচ্ছেন, সেইসব মানুষদের যাঁরা তাঁর দুঃসময়ে পাশে ছিলেন। অমিত চট্টোপাধ্য়ায় বলেন, "সেই দিনগুলোতে মানুষের ভালো ও খারাপ দিক নতুন করে দেখেছি। হালিশহর থেকে ট্রেনে, মেট্রোয় কলকাতা যাতায়াত করতে হত। ওষুধ খেলে বমি পেত। যারজন্য মেট্রোয় তাঁকে অপমানিতও হতে হয়েছে। আবার ঠিক সেই সময়ই পাশে দাঁড়িয়েছেন অন্য যাত্রীরা। আত্মীয়দের কেউ কেউ বলেছেন বাড়ি বিক্রি করে চিকিৎসার খরচ জোগাতে। আবার অনেকে নিজে থেকে এসে ১০ হাজার টাকা হাতে দিয়ে গিয়েছেন। পাশে ছিল অফিসও।"
আরও পড়ুন, বিরল ক্যান্সার সারিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নজির কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের
ক্যান্সার মানেই যেখানে আতঙ্ক। কর্কটের থাবা থেকে বাঁচার আর্তি, সেখানেই সোমা দলুই ও অমিত চট্টোপাধ্যায়ের মতো মানুষদের জীবনযুদ্ধ আশার আলো দেখায়। সমস্ত মানুষের কাছে তাই ৪১ বছর বয়সী অমিতের আবেদন, "ক্যান্সার হলেই ভেঙে পড়বেন না। নিরাময় সম্ভব। আমি ফিরে আসতে পারলেও, আপনারাও পারবেন।" হ্যাঁ, ওষুধের কিছু সাইডস এফেক্ট রয়েছে ঠিক-ই। তবে জীবন ফিরে পেয়ে হাসিমুখেই সেগুলোকে বয়ে নিয়ে চলেছেন তিনি। অমিতের কথায়, তিনি খুশি। উল্লেখ্য, ধূমপায়ী না হয়েও তিনি ক্যান্সার আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন অমিত।