জঙ্গলমহলের `অনুকূল পরিবেশে` বিধানসভা ভোটে `২০০`-র লক্ষ্য বেঁধে দিলেন শাহ
২০০টি আসন পেতে হবে বিধানসভা ভোটে।
নিজস্ব প্রতিবেদন: লোকসভা ভোটে ২২টি আসনের টার্গেট বেঁধে দিয়েছিলেন। লক্ষ্য ছুঁতে না পারলেও ১৮টি আসন নিয়ে বঙ্গীয় রাজনীতিতে প্রথমবার বিরোধী শক্তি হয়ে উঠেছে বিজেপি। আর সেই জয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছিল জঙ্গলমহল। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রামের মানুষের সমর্থন গিয়েছে গেরুয়া শিবিরের ইভিএমে। সেই জঙ্গলমহলের বাঁকুড়ায় দাঁড়িয়ে বৃহস্পতিবার অমিত শাহের হুঙ্কার,মৃত্যুঘণ্টা বেজে গিয়েছে তৃণমূলের। এরই সঙ্গে দলকে দিলেন ২০০ আসনের টার্গেট।
আদিবাসী-অধ্যুষিত জঙ্গল-মহল। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির মুখে হাসিও ফুটিয়েছে। বিধানসভা ভোটের আগে সে জঙ্গলমহলের মন জয়ের চেষ্টা করলেন অমিত শাহ। বাঁকুড়া পৌছেই পুয়াবাগানে বীরসা মুণ্ডার মূর্তিতে মালা দিলেন অমিত শাহ। এরপরই বাঁকুড়া শহরের রবীন্দ্র ভবনে দলীয় বৈঠক। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, দুই মেদিনীপুর-সহ বিভিন্ন জেলার বাছাই করা নেতারা হাজির। অমিত শাহ বেঁধে দিলেন একুশের টার্গেট। ২০০টি আসন পেতে হবে বিধানসভা ভোটে।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিকে ভাবাচ্ছে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। এদিন, এনিয়েও বার্তা দেন অমিত শাহ। বলেন,''পরিবার বড় হলে বাবা-ছেলের মধ্যেও সমস্যা হয়। দিন শেষে তাঁরা নিজেদের বাড়িতেই আবার এক হন। বিজেপিও বড় পরিবার। মনে রাখতে হবে মূল লক্ষ্য তৃণমূলকে হারানো।'' বাঁকুড়া রওনা হওয়ার আগে এদিন নিউটাউনের হোটেলে দিলীপ ঘোষ এবং মুকুল রায়ের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক সারেন অমিত শাহ। দলের ভিতরের সমস্যা মেটাতে, যা তাত্পর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
রাজ্য সফরের প্রথম দিন বাঁকুড়ায় আদিবাসী পরিবারে দুপুরের খাওয়া সারেন অমিত শাহ। কাঁসার থালায় কলাপাতায় ভাত, রুটি, সব্জি, আলু-পটল-করলা ভাজা। চাটাইয়ে বসে দুপুরের খাওয়া সারলেন অমিত শাহ। পাশে গৃহকর্তা বিভীষণ হাঁসদা-সহ অন্য বিজেপি নেতারা। রবীন্দ্রভবনে বৈঠকের মাঝেই দুপুরে বাঁকুড়া শহর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে চতুরদিহি গ্রামে যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামে মহিলারা নাচের মাধ্যমে তাঁকে স্বাগত জানান। দুপুরের খাওয়া সারতে বিভীষণ হাঁসদার বাড়িতে ঢুকে খাটিয়ায় কিছু ক্ষণ বসেন তিনি। আদিবাসী রীতি মেনে অমিত শাহর পা ধুইয়ে দেওয়া হয়। মধ্যাহ্নভোজন সেরে প্রায় পঞ্চাশ মিনিট পর ফের রবীন্দ্রভবনে ফিরে যান তিনি। বিভীষণের আতিথেয়তা মুগ্ধ শাহ। টুইট করে জানান সে কথা।
বিকেলে রবীন্দ্র-ভবনে আদিবাসী, ক্ষুদ্রশিল্পী-সহ সমাজের বিভিন্ন অংশের পিছিয়ে পড়া মানুষজনের সঙ্গে দেখা করেন অমিত শাহ। ৩ বছর আগে নকশালবাড়িতে আদিবাসী পরিবারে দুপুরের খাওয়া সারেন অমিত শাহ। পরে, সেই পরিবারের সদস্যরা তৃণমূলে যোগ দেয়। বিধানসভা ভোটের আগে ফের অমিত শাহ গেলেন আদিবাসী বাড়িতে। এ দিন দলীয় বৈঠকে তফশিলি জাতি-উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের উপর বিশেষ নজর দিয়ে জেলায় জেলায় কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন অমিত শাহ।
আগামিকাল, শুক্রবার অমিত শাহর রাজ্য সফরের দ্বিতীয় দিন। সকাল ৯ টায় নিউটাউনের হোটেলে বিএসএফ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। ১০টা নাগাদ যাবেন দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে। পুজো দিয়ে যাবেন টালিগঞ্জে গল্ফ ক্লাব রোডে পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর বাড়ি। বেলা দেড়টা নাগাদ সল্টলেকের ইজেডসিসি-তে দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন অমিত শাহ। সেখান থেকে যাবেন নিউটাউনে। মতুয়া মন্দির দর্শনের পর মতুয়া বাড়িতে সারবেন দুপুরের খাওয়া। ফিরে নিউটাউনের হোটেলে সাংবাদিক সম্মেলন। তারপর ফের ইজেডসিসি-তে দলীয় বৈঠক। পরে, ফিরে এসে নিউটাউনের হোটেলেও বৈঠক করবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। সন্ধে সাড়ে ৭টা নাগাদ দমদম বিমানবন্দর থেকে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেবেন।
আরও পড়ুন- নিমন্ত্রণ খাচ্ছেন শাহ, এদিকে তল্লাশি চলছে; কী প্ল্যানিং! বাপরে বাপ: মমতা