পিয়ালি মিত্র: অনুব্রত ও তাঁর নিকট আত্মীয়দের মিলে এখনও পর্যন্ত ১৬২টি সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। পাশাপাশি, বেনামি সম্পত্তির সংখ্যাও শতাধিক, এমনটাই দাবি তদন্তকারীদের। ইতিমধ্যেই মিলেছে ১৭ কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিট। যা কেবল হিমশৈলের চূড়া বলেই মনে করেছেন তদন্তকারীরা। তাঁরা মনে করছেন, এই সম্পত্তির বেশ কিছুটা গোরু পাচার থেকে পাওয়া টাকায় কেনা হয়েছে বলে মনে করা হলেও, এই বিপুল সম্পত্তির পিছনে রয়েছে আরও একাধিক ক্ষেত্র থেকে অবৈধ উপায়ে হাতানো টাকাও। এখনও প্রকাশ্যে অনেকে এই নিয়ে মুখ না খুললেও, বীরভূমের আনাচ-কানাচে কান পাতলে এমনই অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। গোরু পাচারের তদন্তের সূত্র ধরেই সিবিআই তদন্তকারীদের হাতে এমন তথ্য উঠে আসছে বলে খবর। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

গোরু পাচার ছাড়া আর কোন কোন উপায়ে কীভাবে টাকা পৌঁছাত অনুব্রতর কাছে ? 
১) বালি
২) টেন্ডার 
৩) টোল 
৪) পাথর 
৫) জমি 


বালি পাঁচালি 


সূত্রের দাবি, বীরভূমের বৈধ ও অবৈধ যত ঘাট থেকে বালি উত্তোলন হয়, তার দু'দিক থেকে টাকা যেত অনুব্রতর কাছে। কীভাবে? বৈধ বালিঘাটের মালিকদের থেকে মাসে দেড় লক্ষ টাকা তোলা নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। আবার বৈধ ঘাট ছাড়া রয়েছে অসংখ্য অবৈধ ঘাট। প্রশাসনের নাকের ডগাতেই যেখান থেকে বছরের পর বছর ধরে বালি তোলা ও পাচার হচ্ছে। যার অধিকাংশই অনুব্রত ঘনিষ্ঠ দু'জন নিয়ন্ত্রণ করে বলে অভিযোগ। এই অবৈধ ঘাটগুলি বকলমে অনুব্রতর বলেও অভিযোগ। সে কারণেই অবৈধ ঘাটের বালির লভ্যাংশের ৭০ শতাংশ যেত অনুব্রত কাছে। বাকি ৩০ শতাংশ পেত সেই বালি মাফিয়ারা। 


টেন্ডার কিসসা 


কমিশনের বিনিময়ে টেন্ডার পাইয়ে দেওয়া, অনুব্রত বেআইনি উপায়ে আয়ের অন্যতম বড় পথ। অভিযোগ, এক্ষেত্রেও প্রধান ভূমিকা নেন অনুব্রত ঘনিষ্ঠ সেই ব্যক্তি যিনি বেআইনি বালিঘাট চালনা থেকে থেকে বৈধ বালিঘাটের টাকা আদায়ের অন্যতম কান্ডারি। গোরু পাচার মামলায় ইতিমধ্যেই একবার তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে সিবিআই। রাস্তা হোক বা পুরসভার অন্য কোনও কাজ, ১২ শতাংশ কমিশনের ভিত্তিতে তার টেন্ডার পাইয়ে দেওয়া হত। ই-টেন্ডারের ব্যবস্থা না থাকায় মুষ্টিমেয় কিছু লোককেই বছরের পর বছর ধরে টেন্ডার পাইয়ে দেওয়া হত বলে অভিযোগ। সূত্রের দাবি, বরাতের কমিশন থেকে প্রাপ্ত টাকার অঙ্ক এক কোটির নীচে হলে তা পৌঁছাত অনুব্রতর ডান হাত হিসেবে পরিচিত সেই ব্যক্তির কাছে। সেখান থেকে সাইগেল হোসেন মাধ্যমে টাকা যেত অনুব্রত মণ্ডলের কাছে। কিন্তু কমিশনের টাকার অঙ্ক ১ কোটি ছাডালে তা সরাসরি অনুব্রত মণ্ডল নিতেন বলে অভিযোগ। 


টোল রাজ


অনুব্রত মন্ডল গ্রেফতার হওয়ার পরই জেলা পরিষদের নামে চলা একটি টোল বন্ধ করেছে প্রশাসন। যে টোলটি বেআইনিভাবে চলছিল বলে অভিযোগ। জেলা পরিষদ হোক বা বোলপুর পুরসভার ১০, ২০, ৫০, ১০০, ১৫০, ২০০ টাকার ছাপানো কুপনের মাধ্যমে বিভিন্ন গাড়ি থেকে টোল নেওয়া হয়। অভিযোগ, বছরের পর বছরের ধরে যে অধিকাংশ টোলের বরাত পান এক অনুব্রতর ঘনিষ্ঠ একজনই। যিনি আবার অংসখ্য বালিঘাট চালান বলেও অভিযোগ। প্রতিদিন বিভিন্ন গাড়ি থেকে যে মোটা অঙ্কের টাকা তোলা আদায় করা হত, তার একটি বড় অংশ-ই অনুব্রতর কাছে পৌঁছত বলে অভিযোগ। 


আরও পড়ুন, সময় মতো গোরুপাচার নিয়ে মুখ খুলব, সব বলব : কেষ্ট


পাথর চুরি


বালির মতোই বীরভূমে যে কটি বৈধ পাথর খাদান রয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি অবৈধ পাথর খাদান থেকে পাথর তোলা হয় বলে অভিযোগ। যে অবৈধ পাথর খাদানগুলির সিংহভাগই অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ টুলু মণ্ডল নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে অভিযোগ। আর টুলু মণ্ডলের হাত ধরেই পাথর পাচারের টাকার থলিও অনুব্রতর কাছে পৌঁছত বলে সূত্রের দাবি।


জোর যার জমি তাঁর


বীরভূমে জুড়ে অনুব্রত মণ্ডলের নামে ভয় দেখিয়ে জমি দখল, দখলি জমি বিক্রির যে তথ্য বা অভিযোগ সামনে আসছে, তা চোখ কপালে ওঠার মতো। অল্প দামে লোকের জমি হাতিয়ে নেওয়া, মাঠ দখল, দেবত্ব সম্পত্তি দখল করে বিক্রি, খাস জমির ভুয়ো কাগজপত্র বানিয়ে বিক্রি করে দিয়েও অনুব্রত কোটি কোটি টাকা কামিয়েছে বলে অভিযোগ।


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)