সৌরভ পাল: অশান্তির আগুন এখনও পুরোপুরি নেভেনি। থমথমে পরিবেশ গোটা বসিরহাট-বাদুড়িয়ায়। থমথমে পরিবেশ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলগুলোতেও। এরই মধ্যে ফের আরও একবার উস্কানি মূলক বার্তা এল ভারতীয় জনতা পার্টির তরফে।  "২০০২ সালে গুজরাট কাণ্ডে সেখানকার হিন্দুরা যেভাবে জবাব দিয়েছিল, ঠিক একই ভাবে জবাব দেওয়া উচিত বাংলার হিন্দুদের", এই ভিডিও বার্তাতেই পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের 'উস্কানি' দেওয়ার চেষ্টা তেলেঙ্গানার বিজেপি বিধায়ক রাজা সিংয়ের। বসিরহাট-বাদুড়িয়ায় কাণ্ড প্রসঙ্গে আরও একধাপ এগিয়ে এই 'গো রক্ষক নেতা' বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি অশান্তিতে মদত দেওয়ার অভিযোগও এনেছেন। তিনি বলেন, "যারা অশান্তি ছড়াচ্ছে, তাদের মদত দিচ্ছে সরকার। আমি সকল ধর্মনিরেপেক্ষ মানুষের কাছেও আবেদন করছি, যদি বাংলায় হিন্দুদের নিরাপদ এবং সুরক্ষিত রাখতে চান তাহলে এখনই সতর্ক হন। নিজেদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত না করতে পারলে আপনাদেরও সেই একই হাল হবে যেমন হয়েছে কাশ্মীরের হিন্দুদের। আপনারাও কাশ্মীরের হিন্দুদের মত বিতারিত হবেন।" 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

শনিবার বসিরহাট-বাদুড়িয়া কাণ্ডে একটি নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্তের কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নে সাংবাদিক সন্মেলন করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জানান, "আইন সবসময় নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে এসেছে। বসিরহাট-বাদুড়িয়া কাণ্ডেও আইন সেটাই করবে। আমরা জানতে চাই, কে বা কারা অশান্তিতে মদত দিচ্ছে? কাদের উস্কানিতে বাংলায় হিংসা ছড়ানো হচ্ছে? মিডিয়ার ভূমিকাও আতস কাচের তলায় আসা উচিত। কারা গুজব ছড়াল সেটাও নজরে আসা প্রয়োজন"। একইসঙ্গে কেন্দ্রের বিরুদ্ধেও তোপ দেগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "কেন্দ্র আমাদের সঙ্গে অসহযোগিতা করছে"। এমনকি বিজেপিকেই বাংলায় অশান্তির জন্য দায়ী করেছেন তিনি।    


উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে ফেবুকের একটি বিতর্কিত পোস্ট থেকে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট-বাদুড়িয়া অঞ্চলে। ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরের ওই পোস্ট দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধিয়ে দেয়। এরপরই উত্তপ্ত পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে সচেষ্ট হয় প্রশাসন। নামানো হয় সেনা বাহিনী, বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট পরিষেবাও। এখন পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত, দাবি প্রশাসনের। এরই মধ্যে তেলেঙ্গানার বিধায়ক রাজা সিংয়ের এই উত্তেজক টুইট নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করতে পারে বলে আশাঙ্কা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের। 


অবশ্য, এটাই প্রথমবার নয়। এর আগেও রাম মন্দির ইস্যুতে মন্তব্য করে বিতর্ক তৈরি করে শিরোনামে এসেছিলেন এই বিজেপি নেতা। এবার বসিরহাট-বাদুড়িয়া কাণ্ডেও 'অশান্তি উস্কে' দেওয়ার প্রচেষ্টা করেছেন রাজা সিং, অভিযোগ তৃণমূলের। 


পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বিজেপি বিধায়ক রাজা সিংয়ের বক্তব্যের কড়া নিন্দা করে বলেন,"এই বিধায়কের বিধায়ক পদ খারিজ করে দেওয়া উচিত। এবার এমন একটা আইন নিয়ে আসা উচিত সরকারের। সম্প্রীতি নষ্ট করতে যখন যা খুশি তাই বলে দেওয়া যায় না, এটা এই নেতারা বোঝেন না। বাংলাই সব থেকে শান্তির জায়গা। বাংলায় হিন্দু মুসলমান একসঙ্গে উৎসব করে। রমজান পালন করে, পুজো করে।" জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক আরও একধাপ এগিয়ে এও বলেন, "বসিরহাট এবং বাদুড়িয়া কাণ্ডে মদত দিয়েছে আরএসএস আর বিজেপি। গোধরা কাণ্ডের কথা তুললে নরেন্দ্র মোদীকে মাথা নিচু করে যেতে হবে। আমরা রাজনৈতিক ভাবে আরএসএস আর বিজেপির এই ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করব"।


পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সভাপতি তথা বিধায়ক দীলিপ ঘোষ অবশ্য রাজা সিংয়ের মন্তব্যে একেবারে একমত নন। ২৪ ঘণ্টা ডট কমকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, "উনি (রাজা সিং) ওনার মত বলেছেন। উনি কাশ্মীরের হিন্দুদের কথাও বলেছেন। কাশ্মীর থেকে যেভাবে হিন্দুদের পালাতে হয়েছে বাংলাতেও তেমন হবে!"