নিজস্ব প্রতিবেদন: ভূতেদের আজ পোয়া বারো। ভূত চতুর্দশী বলে কথা! আজ মঙ্গলবার ভূতেদের এমন একটা দিন, একটু বেগড়-বাই করলেই মনুষ্যকূলের অমঙ্গল ঘটে যেতে পারে! যতই বাড়িতে চোদ্দ প্রদীপ জ্বালান কিংবা চোদ্দ শাক খান- ফাঁক তাল পেলেই অনিষ্ট করতে পারে সুযোগ সন্ধানী ভূতেরা। কিন্তু যাঁরা ভূতপ্রেমী, মানে তেনাদের নিয়ে একটু আধটু চর্চা-টর্চা করেন, তাঁদের তো আজ সোনায় সোহাগা। শশ্মান, গোরস্থানে যাওয়ার দরকার নেই, ঠিকঠাক নজর রাখলেই গড়িয়াহাটার মোড়েও তেনাদের সঙ্গে দেখা হয়ে যেতে পারে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

ভূতের অস্তিত্ব আছে কী নেই, এমন প্রাগৈতিহাসিক বিতর্কে আজ না গিয়ে অন্ধকারেই হাঁটুন না! কে বলতে পারে ভূতের রাজার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল আপনার! চেয়ে নিলেন মনের মতো তিন বরও।  যদি বিজ্ঞানের ভ্রুকুটি এড়িয়ে অলৌকিক জনশ্রুতির গল্পে বিশ্বাস করেন, তাহলে নিশ্চিন্তে বলা যায় রোমহর্ষক টানটান উত্তেজনার পরিবেশের সাক্ষী হতে পারেন আজ।


ভূত মানচিত্রে পশ্চিমবঙ্গ একটি অন্যতম পীঠ। রাইটার্স বিল্ডিং, জিপিও থেকে হাইকোর্ট বা গার্স্টিন প্লেস- কলকাতার বুকে এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে রাত নামলেই সেগুলো হানাবাড়িতে পরিণত হয়। মহানগরী যখন ঘুমিয়ে পড়ে, এখনও নাকি শোনা যায়  জিপিও-র ভিতর থেকে ভেসে আসা ব্রিটিশদের আর্তনাদ। এখানেই ১৭৫৬ সালে সিরাজদ্দৌলা আটক করে রেখেছিলেন ব্রিটিশ সেনাদের। এমন কথাও প্রচলিত রয়েছে, প্রায় ১৫০ ব্রিটিশ শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিল এখানেই। তার ঠিক সাড়ে তিনশো মিটারের মধ্যেই রয়েছে রাইটার্স বিল্ডিং। অনেকেই বলেন, এখনও নাকি কান পাতলে শোনা যায় ওয়ারেন হেস্টিংসের হেঁটে চলার শব্দ। আবার কলকাতা হাইকোর্টের ১৩ নম্বর সেই বিখ্যাত রুম। এই রুম থেকেই ভারতের সবচেয়ে বেশি ফাঁসির সাজা শোনানো হয়েছিল। বিচারকের কাছে করুণ আর্জির প্রতিধ্বনি এখনও নাকি শোনা যায় সেই কোর্টরুমে। গার্স্টিন প্লেসের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে কানে আসতে পারে সুমিষ্ট পিয়ানোর সুর। এমন মায়াবী রাতে খুঁজে পাবেন অন্য এক কলকাতাকে।


কলকাতা ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন প্রান্তে এমন অলৌকিক গল্প লোকমুখে ঘুরে বেড়ায়।  পুরুলিয়ার বেগুনকোদর স্টেশনের ভূতুড়ে গল্প বহুপ্রচলিত। পুরুলিয়া স্টেশন থেকে ৪৬ কিলোমিটার দূরে ঝালদা এবং কোটশীলার মাঝে এই বেগুনকোদর স্টেশন। প্রায় অর্ধশতক ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল স্টেশনটি। ট্রেন আসে যায় কিন্তু কোনও যাত্রীর দেখা মিলত না। দিনের বেলায় এই চত্বরে আসতে ভয় পেতেন স্থানীয় বাসিন্দারা। রাতে তো কোনও প্রশ্নই ছিল না। কোয়ার্টার, টিকিট কাউন্টার সবই খাঁ খাঁ করত সেখানে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, বহু বছর আগে স্টেশন মাস্টার এবং তাঁর স্ত্রী কুয়োতে ঝাঁপ মেরে আত্মহত্যা করেন। কেউ আবার বলেন, স্টেশন মাস্টারের মেয়েও আত্মহত্যা করেছিল। পরবর্তী সময়ে যাঁরাই এসেছেন বেশিদিন কাজ করতে পারেননি এখানে। দিনের বেলাতেই নাকি অশরীরী আত্মার আনাগোনা অনুভব করতেন তাঁরা। এই ভয়ের অজুহাত দেখিয়ে সবাই বদলি হয়ে চলে যেতেন। সে থেকেই ওই স্টেশনের নাম হয়ে গিয়েছিল ‘ভূত স্টেশন’। আজ যদিও ওই স্টেশনের ভোল অনেকটাই পাল্টেছে।


বাংলায় এমন ভূতের আখড়া অনেক জায়গায় রয়েছে। তাই আজ ভূত চতুর্দশীর দিনে এইসব জায়গাগুলো জ্যান্ত হয়ে উঠবে, এমন আশাই করতে পারেন ভূত প্রেমীরা। তাহলে আর কী রাম রাম করে বেরিয়ে পড়ুন ভূতের সন্ধানে।