নিজস্ব প্রতিবেদন : ঘূর্ণিঝড় বুলবুল-এর তাণ্ডবে ট্রলার উল্টে নামখানায় একজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। মৃতের নাম সঞ্জয় দাস। এখনও নিখোঁজ ৮ মৎস্যজীবী। নিখোঁজদের খোঁজে আজ ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ মৎস্যজীবীদের কোনও খোঁজ মেলেনি। সোমবার ফের ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি চালানো হবে। নিখোঁজ মৎস্যজীবীদের খোঁজে খোঁজ চালাচ্ছেন অন্য ট্রলারের মৎস্যজীবীরাও। কিন্তু কেউই নিখোঁজ মৎস্যজীবীদের কোনওরকম সন্ধান এখনও পাননি।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

কাকদ্বীপ পূর্ব স্টিমার ঘাটে বাড়ি সঞ্জয় দাসের। মর্মান্তিক এই ঘটনার খবর পেয়েই সঞ্জয় দাসের বাড়ি পৌঁছে গিয়েছিল জি ২৪ ঘণ্টার প্রতিনিধি। বাড়িতে সঞ্জয় দাসের বৃদ্ধ বাবা, স্ত্রী, ৭ বছরের মেয়ে ও এক মাসের শিশুসন্তান রয়েছে। আকস্মিক এই বিপর্যয়ে পরিবারের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। দুর্ঘটনার জন্য মৃতের পরিবার ট্রলার মালিককেই দায়ী করেছে। তাঁদের অভিযোগ, মালিকপক্ষ বা পুলিস কেউই এসে কোনও খবর দেয়নি। তাঁরাই কোনও খোঁজ না পেয়ে জোর করে হাসপাতালে ঢুকে পড়েন। আর তাতেই সঞ্জয় দাসের মৃত্যুর কথা জানতে পারেন। দেহ শনাক্ত করেন।   



কাকদ্বীপ ফিশারম্যান ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজন মাইতি জানিয়েছেন, "ফ্রেজারগঞ্জ পাতিবুনিয়ার কাছে ৪০টি ট্রলার নোঙর করে দাঁড়িয়েছিল। রাতে ঘূর্ণিঝড়ে ৪টি ট্রলার ডুবে যায়। ট্রলার ডুবির ঘটনায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৮ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।"


মর্মান্তিক এই ঘটনার জন্য স্থানীয়রা মালিকপক্ষের জোরজুলুমকেই দায়ী করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল-এর সতর্কতা জারি হওয়ার পর ট্রলারগুলিকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। কিন্তু মালিকপক্ষের চাপে মৎস্যজীবীরা ট্রলারেই থেকে গিয়েছিলেন। কারণ, নইলে কাজ হারাতে হত মৎস্যজীবীদের। তাই পেটের দায়ে জীবন বাজি রেখে দুর্যোগের সময় তাঁরা ট্রলারের ভিতরই থেকে গিয়েছিলেন। এমনকি, কুসংস্কারবশত ট্রলারগুলিকে মালিকপক্ষ তীরে পর্যন্ত ঠেকাতে দেয় না। কারণ ট্রলার মালিকরা সর্বক্ষণ মৎস্যজীবীদের এই বলে চাপ দেয় যে, "মাছ নিয়ে ফিরবে তোমরা। নইলে তোমরা কেউ মাটিতে নামবে না।"


দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সঞ্জয় দাসের বাড়িতে যখন জি ২৪ ঘণ্টার প্রতিনিধি পৌঁছন, তখন বাড়ি ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঢাকা। দুর্যোগের পর এলাকায় এখনও পর্যন্ত বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু হয়নি। বার বার সংজ্ঞা হারাচ্ছেন সঞ্জয় দাসের স্ত্রী। একমাসের একরত্তি শিশুটা যে এখনও বাবাকে ভালো করে চেনেইনি, অনর্গল কেঁদে চলেছে সে। ৭ বছরের ছোট্ট দিদিটা নানাভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে কান্না থামানোর। কিন্তু বার বারই ব্যর্থ হচ্ছে।


আরও পড়ুন, রাজ্যে বুলবুল-এর তাণ্ডবে মৃত ৭, বিবৃতি দিয়ে জানাল নবান্ন, পড়ুন পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট


গোটা পরিবার, গোটা এলাকা শোকস্তব্ধ। দুঃসংবাদের আতঙ্কে যেন অন্য নিখোঁজ মৎস্যজীবীদের পরিবারগুলোও  প্রহর গুনছে। জানা গেল, সোমবার সকালে উল্টানো ট্রলারগুলিকে সোজা করার চেষ্টা করা হবে। ট্রলারের ভিতর কোনও মৎস্যজীবী আটকে রয়েছেন কিনা, তা ভালো করে খুঁজে দেখা হবে।