দরকার হলে নিজেদেরই মাথায় করে ইট বইতে হবে!
মুখ্যমন্ত্রী করোনা পরিস্থিতিতে সকলকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। মাইল্ড সিম্পটম যাঁদের তাঁরা যেন সেফ হাউজে থাকেন। করোনা টেস্টের রিপোর্ট দ্রুত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন
নিজস্ব প্রতিবেদন: সাত মাস পরে উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এক ঢিলে তিন পাখি মারলেন।
'অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ রিভিউ মিটিং' পাখি ১। সেই মঞ্চ ব্যবহার করে সরকারের কাজকর্মের একটা বিজ্ঞাপন তো না চাইতেই হয়। এর সঙ্গেই করোনা-পর্বের পরে কেমন আছে উত্তরবঙ্গ, সেটাও খোঁজ নেওয়া হল-- পাখি ২। এবং আরও যেটা খানিকটা লো-কি মোডে হল, তা হল বিজেপিকে একটা বার্তা দেওয়া। কেন্দ্র যে কিছু করছে না, সেটা বলা--পাখি ৩। বলা বাহুল্য, এক মঞ্চে অনায়াসে এই তিন লক্ষ্যভেদ করে উত্তরবঙ্গ প্রশাসনিক বৈঠক জমিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
স্বাভাবিক ভাবেই বৈঠকে নানা প্রসঙ্গ এসেছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রের সমাধান মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গেই করে দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির খোঁজ করে বিষয়টির আপডেট নিয়েছেন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে আবার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে 'ওটা আলোচনার জায়গা এটা নয়', বা 'ওটা পরে হবে' বলে বিষয়টি সরিয়ে দিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী প্রথমেই করোনা পরিস্থিতিতে সকলকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। মাইল্ড সিম্পটম যাঁদের তাঁরা যেন সেফ হাউজে থাকেন। করোনা টেস্টের রিপোর্ট দ্রুত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কোভিড যোদ্ধাদের জন্য উত্তরবঙ্গে কোভিড নিয়ন্ত্রণে আছে বলে উল্লেখ করেছেন। পুলিশের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। পুলিশকর্মীদের সতর্ক হয়ে কাজ করতে বলেছেন। কোনও ভাবেই করোনাকে অবহেলা নয়। আসন্ন পুজোতেও করোনা নিয়ে কোনও ঢিলেমি নয়। জেলাশাসকদের দিন-পিছু কোভিড ডেটা আপলোড করতে হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গ্রিন জোনে বাড়তি নজর দিতে হবে। আলিপুরদুয়ার সীমান্ত এলাকা, ফলে সেখানে বেশি নজর দেওয়ার কথা বলেন।
উদ্বাস্তুদের জমির অধিকার পাইয়ে দেওয়ার আইন পাসের কথা আলোচনা হয়। কাস্ট সার্টিফিকেট দেওয়া, রেশন নিয়ে অভিযোগের সমাধানের কথাও হয়। যে কোনও বিষয়ে ইনস্পেক্টর-রাজ কমানোর কথা বলেছেন। কারও পেনশন আটকানো যাবে না। মানুষের সমস্য়া ১০০ শতাংশ মেটানোর চেষ্টা করতে হবে। উদ্বাস্তুদের কিছু কাজ আটকে আছে সইয়ের জন্যে। যদিও সেল্ফ ডিক্লেয়ারেশন চালু আছে, তা সত্ত্বেও যাঁরা সমস্যা করছেন, তাঁদের কথা শোনা হবে না। কোনও কাজের ক্ষেত্রেই সংশয় তৈরি করা চলবে না-- বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। সাধারণ মানুষের কাছে পরিষেবা পৌছে দিতে সহজ ফর্মুলা চালু রাখতে হবে। বাংলা সহায়ক কেন্দ্রের কাজে ডিএম-রা বাড়তি গুরুত্ব দিন-- সে কথাও বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
বিভিন্ন স্কলারশিপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রূপশ্রী বা শিক্ষাশ্রী কীভাবে আরও ভালো ভাবে চালানো যায়, এ নিয়েও আলোচনা হয়। কামতাপুর ভাষা অ্যাকাডেমির জন্যেও জরুরি ঘোষণা করা হয়। চা সুন্দরী প্রকল্পে বিভিন্ন চা বাগানে শ্রমিকদের জন্য ৩৬৯৪ বাড়ি হবে প্রথম ধাপে। আগামী তিন বছরে ধাপে ধাপে বাকি চা বাগানে এই কাজ হবে। আবাসন দফতর বাড়ি বানাবে। শ্রম দফতর এটা দেখবে। উত্তরের ৩৭০ চা বাগান এই প্রকল্পের আওতায়। ৫০০ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি তীর্থক্ষেত্রের ম্যাপিং করা হচ্ছে। ১৮৩১১ মন্দির চিহ্নিত হয়েছে। ১৮২২৩ পুরোহিতকে ভাতা দেওয়া হবে। কোনও বয়সের সীমারেখা থাকছে না। এসজেডিএ'র (শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি ডেভলেপমেন্ট অথরিটি) জন্যে তিস্তা নগরের কাজ আটকে আছে। হর্ষ নেওটিয়ার কাজ আটকে আছে-- এসবও মনে করিয়েছেন তিনি।
ভারী বর্ষা হচ্ছে এখানে। নদীর জলস্তর বাড়ছে। উত্তরবঙ্গে কয়েকটি জেলায় নদীর জলও বাড়ছে। এ সব নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। তবে দিদি বলেছেন, নদী থাকলেই এটা হবে।
আলোচনা প্রসঙ্গে মুখ্যসচিব জানিয়েছেন, টেন্ডার দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু যথাযথ সময়ে ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হচ্ছে না। জলপাইগুড়িতে কর্মতীর্থ প্রকল্প আটকে আছে। সংখ্যালঘু দফতরকে সেই কাজ দ্রুত করতে বলা হচ্ছে। একই সঙ্গে জেলা পরিষদও কাজে দেরি করছে। এজেন্সি বদলেও কাজে কেন দেরি হচ্ছে, প্রশ্ন তোলেন তিনি। ডিসেম্বরেই কাজ শেষ করার নির্দেশ দেন তিনি। দরকার হলে নিজেরা মাথায় করে ইট বয়ে নিয়ে গিয়ে কাজ করার ভোকাল টনিকও অবলীলায় দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
কাজ পড়ে থাকছে কেন? যে কোনও কাজই দ্রুত শেষ করতে হবে। কাজের গাফিলতি বরদাস্ত নয়। প্রয়োজনে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। যে কোনও ক্ষেত্রেই যাঁরা সামনের সারিতে আছেন, তাঁরা সতর্কতার সঙ্গে কাজ করুন। জোর করো কোনও কাজ আটকানো যাবে না।
প্রসঙ্গত, পরশু ১২০০০ কিমি রাস্তার কাজের উদ্বোধন করবেন বলেও উল্লেখ করতে ভোলেননি তিনি।
তবে আলোচনায় অংশ নিয়ে অধিকাংশ প্রশাসনিক আধিকারিকই অভিযোগ করেছেন, সরকারের কাজ ভালো হলেও, তার সুষ্ঠু প্রচার হচ্ছে না, বরং অপপ্রচারই বেশি হচ্ছে। তাঁরা অনুরোধ করেন, বিষয়টি যেন দিদি দেখেন। মুখ্যমন্ত্রী সেই মতো প্রয়োজনীয় নির্দেশও দিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় সরকার কিছু করে না। ভোট এলে বলে এটা করে দেব, ওটা করে দেব। ওরা আসলে মিথ্যা কথা বলে। জাতীয় সড়ক থেকে চা-বাগান কোনও কাজ ওরা করছে না এই মর্মে বাতাসে কিন্তু ভোট-ভোট যুদ্ধের গন্ধটা ছড়িয়েই রইল।
আরও পড়ুন: কোচবিহার বিজেপিতে 'বড়সড়' ভাঙন, পদ্ম শিবির ছেড়ে ঘাসফুলে 'হেভিওয়েট' নেতা