তোলাবাজি বরদাস্ত নয়, পুরুলিয়ার প্রশাসনিক বৈঠকে কড়া বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
তিন থানার ওসি দাঁড় করিয়ে ভর্তসনা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
নিজস্ব প্রতিবেদন: “স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে হবে, কমিশন-তোলাবাজি বরদাস্ত নয়”। পুরুলিয়ার প্রশাসনিক বৈঠকে কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এবার পুরুলিয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর আগমন ও প্রশাসনিক বৈঠকের গুরুত্ব যে কতটা তা বিশেষজ্ঞ মহলের কাছে আগেভাগেই পরিষ্কার ছিল। প্রশাসনিক কর্তা তো বটেই, এদিনের বৈঠক থেকে আমলাদের উদ্দেশে যে মুখ্যমন্ত্রী কোনও বার্তা দেবেন, তা অজানা ছিল না। বৈঠকের শুরুতেই স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করার জন্য বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্পষ্টভাবে তিনি জানিয়ে দেন, কোনওভাবে কমিশন কিংবা তোলাবাজির অভিযোগ তিনি বরদাস্ত করবেন না।
আরও পড়ুন: প্রতি বছর ফায়ার অডিট না করলে বাতিল হতে পারে লাইসেন্স, আসছে বিল
এদিন তিন থানার ওসি দাঁড় করিয়ে ভর্তসনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “ বহিরাগতরা কীভাবে ঢুকছে এলাকায়? বহিরাগতরা ঢুকে অশান্তি করছে, আপনারা কী করছেন? আপনার এলাকায় আপনারা কেন কিছু করছেন না? তোলাবাজি চলবে না, আবারও বলে দিলাম। যাঁরা যাঁরা মনে করছেন টাকা তোলার দরকার আছে, আমাদের সঙ্গে থাকবেন না।”
অযোধ্যার আইসিকে দাঁড় করিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বাইরের লোক ঢোকে কীভাবে? আপনি তো নিজেই উইক দেখছি।” পুলিস কর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “স্বচ্ছতা নিয়ে কাজ করতে হবে। তোর বাড়ি করে দেবো, টাকা দে, তা হবে না। কোনও অভিযোগ আসলে তত্ক্ষণাত্ পদক্ষেপ করতে হবে। কোনও চোখ চাওয়াচাওয়ি যেন না হয়।”
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “ঝাড়খণ্ড থেকে তোলাবাজি করা হচ্ছে। মাইনে তো পান, আর কত দরকার?’’ তিনি বলেন, “বর্ডার থেকে গুণ্ডা নিয়ে আসছে সব। সব কোড ইউস হয় এখানে।” সীমান্তে ওয়াচ টাওয়ার বসানোর নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিনের প্রশাসনিক সভা থেকে সেচে জোর দেওয়ার জন্য বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেচের ব্যাপারে প্রশাসনকে আরও সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। খরা অধ্যুষিত জেলার জন্য মনিটারিং কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি নোডাল অফিস তৈরির পরামর্শও দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: এনআরএস-এ জটিল অস্ত্রোপচারে শিশুর গলা থেকে বেরল তার
চাষিরা কেন লোন পাচ্ছেন না, সেবিষয়ে এদিন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “রাজনীতি করবেন না, চাষিদের লোন দেবেন।” এরপরই সমবায় ব্যাঙ্ককে পুরুলিয়ায় নজর দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এই জেলায় নজর দিতে হবে। আমাদের সমবায় থেকে দেখো চাষিদের টাকা দেওয়া যাবে কিনা।” বিধায়ক পূর্ণ বাউড়ি সমবায়ের দায়িত্বে ছিলেন। এদিন প্রশাসনিক বৈঠকে তাঁকে দাঁড় করিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "তোমার দ্বারা একাজ ঠিকভাবে হবে না। তুমি ছেড়ে দাও।" এরপরই জেলাশাসককে তিনি নির্দেশ দেন, "ডিএম, এবার থেকে তুমি সমবায়ের ব্যাপারটা দেখে নেবে।"
সৃষ্টিধর মাহাতর প্রসঙ্গ টেনে নতুন সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ দেখো তুমি আগের সভাধিপতির মতো করো না। মানুষের পাশে থাকতে হবে। সব দেওয়া হয়েছে এবার কাজ করো। আমি শুধু কাজটাই দেখতে চাই। কোনও অভিযোগ শুনব না। কাজে ঢিলেমি কোনওভাবেই মানব না।”
এরপর আদিবাসী প্রসঙ্গ টেনে এনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “দেখবেন গরিব মানুষগুলো যেন অবহেলিত না হয়, প্রত্যেকে যেন বাড়ি পায়। আদিবাসীরা খুবই সংবেদনশীল। অনেক এঁদের মধ্যে ঝামেলা লাগিয়ে দেয়। ঝামেলা লাগাতে পারলে কিছু মানুষের স্বার্থসিদ্ধি হয়।”
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটব্যাঙ্ক সুদৃঢ় করতে পুরুলিয়াবাসীর জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এরপর শিমুলতলায় হিন্দিভাষীদের সঙ্গে আলাদাভাবে সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী।