সৌমিক মজুমদার : জানলা-দরজা খোলা রাখলে ভাইরাস বেরিয়ে যায়। চিকিত্সকদের সঙ্গে নবান্নে আলোচনার সময়ে এমনই বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাই ঘিরে টুইট-আক্রমণে রাজ্য বিজেপি।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

বুধবার নবান্নে রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি ও স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে আলোচনায় যোগ দেন চিকিত্সকরা। সেখানে আরও উন্নত মানের পিপিই-র অনুরোধ করেন চিকিত্সকরা। আলোচনায় এয়ার কন্ডিশনিংয়ের প্রসঙ্গ এলে মুখ্যমন্ত্রী জানান, দ্রুত সর্বত্র সম্ভব না হলেও তিনি চেষ্টা করছেন। দরকারে প্রাথমিকভাবে পোর্টেবল এসির ব্যবস্থা করার কথাও বলেন মুখ্যমন্ত্রী।


এরপরেই তিনি বলেন, এসি চালানোর জন্য দরজা-জানলা বন্ধ করা প্রয়োজন। "দরজা-জানলা যদি খুলে দেওয়া যায়, তাহলে ভাইরাস তাড়াতাড়ি চলে যায়," বলেন মুখ্যমন্ত্রী। গাড়ি হোক বা ঘর, দরজা-জানলা খুলে রোদ-বাতাস প্রবেশের প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি।


তাঁর এই মন্তব্য তুলে ধরেই এদিন টুইট করে বিজেপি বেঙ্গলের অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেল। সেখানে তাঁর মন্তব্য বাংলা ও হিন্দিতে লেখা হয়। সেটি রিটুইট করেন বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালভিয়া। সেখানে তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে 'এপিডেমিওলজিস্ট' বলে কটাক্ষ করেন। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, "দরজা-জানলা খোলা রাখলেই যদি হয়ে যেত তাহলে গোটা বিশ্ব ভ্যাকসিন খুঁজছে কেন?"



এসির বন্ধ ঘরে কি করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে?


করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট গবেষণা নেই। তবে, ২০১১ সালে অ্যাডভান্সেস অব ভাইরোলজি নামক মেডিক্যাল জার্নালে SARS-CoV ভাইরাসের উপর তাপমাত্রার প্রভাব সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয় কম তাপমাত্রা ও কম আর্দ্রতায় বেশি স্থিতিশীল হয় এ ধরনের ভাইরাস। ফলে এসি ঘরে আরও বেশিক্ষণ ভালভাবে বেঁচে থাকতে পারবে এ জাতীয় ভাইরাস। বাড়বে সংক্রমণের ঝুঁকিও।


করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনিংয়ে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনার পক্ষে সওয়াল করেছেন বিশেষজ্ঞরা। উদাহরণস্বরূপ, জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে আটকে থাকা ডায়মন্ড প্রিন্সেস ক্রুজের এয়ার কন্ডিশনিং পরীক্ষা করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পুর্ডিউ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। তাঁরা জানান, "বেশিরভাগ সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনিংয়ের ফিল্টারের ঘনত্ব ভাইরাস আটকে দেওয়ার মতো নয়।" ফলে কোনওভাবে এসির মাধ্যমে ভাইরাস দ্রুত অন্যান্য কেবিনেও ছড়িয়ে পড়ে। ৩,৭০০ যাত্রীর ৪৬.৫ শতাংশ যাত্রীই প্রাথমিক টেস্টিংয়ে করোনা পজিটিভ হন। তাঁরা জাহাজ ছাড়ার প্রায় ১৭ দিন পরেও তাঁদের কেবিনের বিভিন্ন অংশ থেকে কোভিড ভাইরাসের হদিশ পান গবেষকরা।



আইআইটি বম্বের এপিডেমিওলজিস্ট সম্বুদ্ধ চৌধুরিও সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনিংয়ে বেশি সংক্রমণের আশঙ্কার কথা বলেন। তিনি জানান, "ভাইরাস বাতাসে বাহিত না হলেও হাঁচি বা কাশির সময়ে সাময়িকভাবে বাতাসে ভাসমান হতে পারে।" এর ফলে ছোট ঘরে, বাড়ির এয়ার কন্ডিশনিংয়ের ক্ষেত্রে কোনও ভয় নেই বলে জানান তিনি। কিন্তু শপিং মল, হাসপাতাল ইত্যাদি স্থানে যেখানে একটিই ডাক্টের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে হাওয়া সার্কুলেশন করা হয়, এসির মাধ্যমে সেখানে এক ঘর থেকে অন্য ঘরে ভাইরাস ছড়ানোর কথা উল্লেখ করেন তিনি। সেন্ট্রাল এসিতে সংক্রমণের সম্ভাবনার কথা বলা হয় পিআইবি ফ্যাক্ট চেকেও।


আরও পড়ুন- টানা ১৪ ঘণ্টা! এসএসকেএম-এর বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে 'বিনা চিকিত্সায়' ফিরল ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত শিশু


সেই সঙ্গে সম্প্রতি ৩২টি দেশের ২৩৯ জন গবেষক করোনাভাইরাস বায়ুবাহিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে WHO-কে চিঠি দিয়েছেন। সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। করোনাভাইরাস বায়ুবাহিত হওয়ার পক্ষে যে ঘটনাগুলি মিলেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। বদ্ধঘরে বায়ুর দ্বারা করোনাভাইরাসের ছড়ানোর আরও আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।  অর্থাত্ সত্যিই যদি করোনার বায়ুবাহিত হওয়ার প্রমাণ মেলে, সেক্ষেত্রে সেন্ট্রাল এসির মাধ্যমে ছড়ানোর আশঙ্কা থেকেই যায়। তবে ছোট ঘরে এসির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু মানুষ থাকায় ও না ছড়ানোয় সেই সম্ভাবনা কম।