Dakshin Dinajpur: পর পর দুর্ঘটনার পরে অবশেষে ঘেরা হচ্ছে আত্রেয়ীর বাঁধ-এলাকা...
Dakshin Dinajpur: এই সমস্ত দুর্ঘটনার যাতে আর না ঘটে সেই কারণে নদীপারের বাসিন্দারা বারবার দাবি করেছিলেন, বাঁধ বরাবর রেলিং দেওয়া হোক, যাতে সাধারণ মানুষ অনায়াসে নদীর ধারে পৌঁছতে না পারেন।
শ্রীকান্ত ঠাকুর: আত্রেয়ী নদীকে শুখা মরসুমে জলপূর্ণ রাখতে এবং জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষের জলের চাহিদা মেটাতে স্বল্প উচ্চতার বাঁধ নির্মাণের কথা ঘোষণা করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইমতো বাঁধ নির্মাণ হয়েছে এবং সেই বাঁধকে ঘিরেই আত্রেয়ীর পাড়ে গড়ে উঠেছে ছোটখাটো মনোরঞ্জনের একটা জায়গা। যা প্রকৃত প্রস্তাবে মনোরঞ্জনের জায়গা নয়। প্রতিদিন সেই বাঁধ দেখতে প্রচুর উৎসাহী মানুষের ভিড় জমে। বিশেষত গ্রীষ্মকালে বাঁধের স্বচ্ছ জলে স্নান করার হিড়িক পড়ে যায় প্রতিবার। এবং এই স্নান করতে গিয়ে জলে তলিয়ে মৃত্যু ঘটেছে একাধিকজনের।
আরও পড়ুন: Bengal Weather Update: বঙ্গোপসাগর-এলাকায় ঘূর্ণাবর্ত! ফের ঝড়? না কি এবার হাড়-কাঁপানো ঠান্ডা?
এই সমস্ত দুর্ঘটনার যাতে আর না ঘটে সেই কারণে নদীপারের বাসিন্দারা বারবার দাবি করেছিলেন, বাঁধ বরাবর রেলিং দেওয়া হোক, যাতে সাধারণ মানুষ অনায়াসে নদীর ধারে পৌঁছতে না পারেন। অবশেষ সেই দাবি মেনেই এবার দুর্ঘটনা এড়াতে আত্রেয়ীর পূর্বপাড় বরাবর ফেন্সিং দিচ্ছে সেচ ও প্রশাসন। দুর্ঘটনা রোধে আত্রেয়ীর চেক ড্যাম ঘেরার কাজও শুরু হয়েছে। অতি উৎসাহী কিছু মানুষের জলকেলি, আড্ডা ও সেলফি তোলার হিড়িক প্রতিরোধ করতেই এই উদ্যোগ।
প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা বাজেট বরাদ্দে চেক ড্যাম সংলগ্ন এলাকা ঘেরার কাজ হচ্ছে বলে সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রথমে শহরের দিকে রেলিং তৈরি করার পরে নদীর পশ্চিম পাড়ে চকভৃগু অঞ্চলেও রেলিং দেওয়ার কাজ শুরু হবে।
বাংলাদেশ মোহনপুরে আত্রেয়ী নদীর মধ্যে বাফার ড্যাম করেছে। ফলে খরার মরশুমে বালুরঘাটে প্রবাহিত আত্রেয়ী নদীর বিস্তীর্ণ এলাকায় জল থাকে না। নদী নির্ভরশীল চাষাবাদে ব্যাপক সমস্যা দেখা দিত। মাছ কমতে থাকায় জীবনজীবিকাতে টান পড়ে মৎস্যজীবীদেরও। তাই আত্রেয়ীর জল ধরে রাখতে রাজ্য সরকার ৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। শহরের চকভবানী এলাকায় নদীর মধ্যেখানে এই বাঁধ দিয়েছে, যা ১০ কিলোমিটার এলাকায় জল রাখছে। ১৯৫ মিটার লম্বা এবং ২ মিটার উচ্চতার বাঁধ এটি। এই ২ মিটার জল ভরে গেলেই বাকিটা উপচে পড়ে ডাউন স্ট্রিমে। এছাড়া এই বাঁধে চারটি গেট রয়েছে। যাতে বিপরীত দিকের জলও নিয়ন্ত্রণ হয়।
কিন্ত এই ড্যামকে ওয়াটার পার্ক হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন কিছু মানুষ। যাঁদের মধ্যে অতি উৎসাহী একশ্রেণির ছাত্র ও তরুণতরুণীকে মাঝে মাঝেই দেখা যায় আত্রেয়ীর ড্যামে নেমে জলকেলি, ফটোশুট এবং আড্ডায় মেতে উঠতে। এদিকে জলের স্রোতে বিপজ্জনক হয়ে থাকা সেই ড্যামের জলে ইতিমধ্যে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০২৩ সালের জুন মাসে এক তরুণ এবং ২০২৪ সালে মার্চে আরেক ছাত্রর মৃত্যু ঘটে।
প্রশাসন সজাগ হয়েছে এরপর। সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড এবং সিভিক প্রহরারও ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্ত তার পরেও অলক্ষ্যে সেখানে ফোটোশুট আর আড্ডার হিড়িক চলছিল। কংক্রিট ও লোহার নেট দিয়ে জায়গাটি ঘেরে দিলে দুর্ঘটনা কমবে বলে মনে করছে প্রশাসন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই ড্যামের দু-দিকেই প্রচুর মানুষ ভিড় করেন। সবসময় কেউ না কেউ আসে। জল কম থাকলে নদীতে নেমে যান। আবার কেউ কেউ ছবি তুলতে যান। সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন থাকলেও উৎসাহীরা অনেক সময় তাঁদের অমান্য করেন। তাই দু’পাড় ঘেরে দিলে কেউ নামতে পারবেন না। দুর্ঘটনাও ঘটবে না।
আরও পড়ুন: Sheikh Hasina: অত্যাশ্চর্য! ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের পরে কি হাসিনাও ফিরছেন বাংলাদেশের ক্ষমতায়?
জেলাশাসক জানিয়েছেন, ড্যাম এলাকায় প্রতিদিনই মানুষের ভিড় জমে এবং অনেকেই নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে জলে নেমে যান এবং দুর্ঘটনা ঘটে। আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল মানুষ সহজ ভাবে যাতে ড্যামের কাছে পৌঁছতে না পারেন তা নিশ্চিত করা। সেই জন্যই রেলিং দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে শহরের দিকে বাঁধের রেলিং দেওয়ার কাজ চলছে। এর পরে উল্টো দিকেও একইভাবে রেলিং দেওয়া হবে।