Durga Puja 2022: কার্শিয়াংয়ে বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের পুজোয় মা আসতেন টয় ট্রেনে, ভাসান হতো ঝর্নায়
পাহাড়ের মূল নদী তিস্তা । এক চালার এত বড় প্রতিমা আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে নিচে নামিয়ে তিস্তায় বিসর্জন দেওয়া সম্ভব নয় , কাজেই বড় কোনও ঝর্নায় দশমীতে হত বিসর্জন । সময়ের কালে ঝর্নাও যে শুকিয়ে এসেছে , কমেছে তার স্রোত । কাজেই কার্শিয়াং থেকে নেমে প্রায় সমতলে দুধিয়ার নদীতে বিসর্জন দেন অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারা ।
নারায়ণ সিংহ রায়: দার্জিলিং-সহ কালিম্পঙয়ের বাঙালিরা নিজেদের খানিকটা প্রাবসী বলেই মনে করেন। বংশ পরম্পরায় পাহাড়ে বসবাস থাকলেও দুর্গা পুজোর প্রতি টান কাটার কোনও প্রশ্নই নেই। দার্জিলিং থেকে খানিকটা নিচে কার্শিয়াংয়ের বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন। ১৯১৬ সালে গুটিকয় বাঙালি সেখানেই দুর্গা পুজো শুরু করেন। অর্থাত্ আজ এই পুজোর বয়স ১০৬ বছর। বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের রাজ রাজেশ্বরী হলে নিয়ম মেনে এক চালার প্রতিমায় পুজো হয়ে আসছে । পাহাড়ের হাতেগোনা যে কয়েকটি পুজো রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের রাজ রাজেশ্বরী হলের পুজো। দার্জিলিং, ঘুম-সহ কালিম্পং থেকেও মানুষজন ভিড় জমান এই হলে । বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান নিষ্ঠা মেনে হয় দেবীর আরাধনা।
পড়ুন- বাঙালির প্রাণের উৎসবে আমার 'e' উৎসব। Zee ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল শারদসংখ্যা
১৯১৬ সাল থেকে পূজা শুরু হলেও তার নির্দিষ্ট কোন স্থায়ী ঠিকানা ছিল না সেই সময় । দেবী প্রতিমা শিলিগুড়ি থেকে টয় ট্রেনে করে কার্শিয়াং নিয়ে আসা হত । এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো সেই সময় পাহাড়ে যাত্রীবাহী টয় ট্রেনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হতো মালবাহী বগি। সেই বগিতে চড়েই মা উঠতেন পাহাড়ে । কার্শিয়াং স্টেশনে নেমে সেখান থেকে পালকি করে মণ্ডপে পৌছাতেন । তবে বেশ কয়েকবার পাহাড়েই মুর্তি গড়ার চেষ্টা চালিয়েও লাভ হয়নি। আবহাওয়ার সঙ্গ না দেওয়ায় মুর্তি গড়ে উঠেনি পাহাড়ের কোলে । মুর্তি কখনও শুকিয়ে উঠত না, কাজেই মুর্তির বাকি কাজ করাও সম্ভব হত না। তাই ১০৬ বছর ধরে শিলিগুড়ি থেকে পাহাড়ে উঠে দুর্গা প্রতিমা । বিভিন্ন বছর বিভিন্ন জায়গায় মায়ের আরাধনা করতেন পাহাড়ের গুটি কয়েক বাঙালি । কখনো তা কারও বাড়ির সামনে , আবার খোদ তিন ধারিয়া রেল স্টেশনে বা আবার কখনও রেলের ইন্সটিটিউটে । তবে ১৯১৬ সালে নির্মিত হয় এই রাজ রাজেশ্বরী হল । তারপর থেকে সেখানেই হয়ে আসছে পূজা । মায়ের আগমন টয় ট্রেনে হলেও মায়ের ভাসান হত ঝর্নায় ।
পাহাড়ের মূল নদী তিস্তা । এক চালার এত বড় প্রতিমা আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে নিচে নামিয়ে তিস্তায় বিসর্জন দেওয়া সম্ভব নয় , কাজেই বড় কোনও ঝর্নায় দশমীতে হত বিসর্জন । সময়ের কালে ঝর্নাও যে শুকিয়ে এসেছে , কমেছে তার স্রোত । বর্ষকাল ছাড়া আর সেভাবে জল লক্ষ করা যায় না পাহাড়ি ঝর্নায় । হাতেগোনা যে কয়েকটি রয়েছে সেখানে মূর্তি বিসর্জন সম্ভব নয় , কাজেই কার্শিয়াং থেকে নেমে প্রায় সমতলে দুধিয়ার নদীতে বিসর্জন দেন অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারা ।
বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি চন্দন কর্মকার জানান , “আগে ঠাকুর টয় ট্রেনে আসত , তখন বাঙালির সংখ্যা আরও কম ছিল , ঠাকুরও ছোট হত । যাতে কয়েক জন মিলেই সেটাকে বহন করা যায় । সেই থেকেই চলছে পূজা , বিসর্জনের সময় সেই কয়েকজন পালকি করেই ঝর্নায় গিয়ে বিসর্জন দিয়ে আসত । তবে এখন রাস্তাঘাট অনেক উন্নত হয়েছে , ফলে ঝর্নায় পৌঁছাবার রাস্তা গুলো সরু হয়েছে , সেখানে এতবড় মূর্তি নিয়ে পৌঁছানই সম্ভব নয় । তাই দুধিয়ার নদিতেই বিসর্জন দিই । তবে আজও একইভাবে পুজো হয়ে আসছে । বাঙালিদের পুজো হলেও পাহাড়ের সকলে মিলেই আনন্দ করি । ২০১৭ সালে পুজোর আগে আগুন লেগে সমস্তটাই পুড়ে যায় , তারপর আবার নতুনভাবে এই হল তৈরি করে চলছে পুজো।“
পাহাড়ের বাসিন্দা অনুরাধা গোস্বামী জানান , “ছোট বেলা থেকেই এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছি। বাবা-কাকারা পুজো করতেন তখন । তবে এখন পাহাড়ে বাঙালির সংখ্যা অনেকটাই কমেছে । তবুও মুষ্টিমেয় যে কজন রয়েছি, তারাই মজা করে বছরের কয়েকটি দিন একসঙ্গে কাটাই ।“