সৌমিত্র সেন 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

প্রায় এসে গেল পুজো। শেষ হতে চলল ভাদ্রমাস। বাতাসে প্রথম-আশ্বিনের মেঘ-রোদ্দুরের গন্ধ। কাশ ফুটেছে নদীতীরে, শিউলি ছড়িয়েছে বনতলে। এই আবহেই প্রতি বছর মনে একটা আবেশ তৈরি হয়। বাঙালির মনটা পুজো-পুজো করে ওঠে। পুজো নিয়ে অতি-উদ্দীপ্ত বাঙালি এই আবহের মধ্যেই দুর্গাপুজোর পিছনে কোনও পৌরাণিক ঘটনাপ্রবাহ কাজ করে কিনা, তার সুলুকসন্ধান করেন। জানতে চান-- দুর্গার নাম কেন দুর্গা? চণ্ডীতে তো 'দেবী'কে অম্বিকা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। কবে থেকে দুর্গা হিসেবে অভিহিত হলেন তিনি?  


বলা হয়, ত্রিভুবনের দুর্গতি নাশ করার জন্যও তাঁর নাম 'দুর্গা' হয়েছিল বলে প্রচলিত। তবে অন্য ব্যাখ্যাও আছে। সে ব্যাখ্যা শাস্ত্রীয়, কিঞ্চিৎ জটিল। হিন্দুশাস্ত্রে 'দুর্গা' শব্দটিকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলা হয়েছে-- 'দৈত্যনাশার্থবচনো দকারঃ পরিকীর্তিতঃ।/ উকারো বিঘ্ননাশস্য বাচকো বেদসম্মত।।/ রেফো রোগঘ্নবচনো গশ্চ পাপঘ্নবাচকঃ।/ ভয়শত্রুঘ্নবচনশ্চাকারঃ পরিকীর্তিত।।' এখানে, 'দ' অক্ষরটি দৈত্যবিনাশ সূচক, উ-কার বিঘ্ননাশ সূচক, রেফ রোগ নাশ করে, 'গ' অক্ষরটি পাপনাশ সূচক, অ-কার শত্রু নাশ করে। অর্থাৎ, বিষয়টি দাঁড়াল-- দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও শত্রুকে নাশ করে যিনি সৃষ্টিকে এদের হাত থেকে রক্ষা করেন তিনিই 'দুর্গা'। 


আরও পড়ুন: Durga Puja 2022: দেবতাদের ক্রোধাগ্নি ও তেজঃপুঞ্জ থেকে আবির্ভূত হলেন দেবী দুর্গা!


'শব্দকল্পদ্রুম' বলেছে, 'দুর্গং নাশয়তি যা নিত্যং সা দুর্গা বা প্রকীর্তিতা'। অর্থাৎ, যিনি 'দুর্গ' নামে অসুরকে বধ করেছিলেন, তিনি 'দুর্গা' নামে পরিচিত। 


বিভিন্ন পুরাণে দুর্গার নাম কেন 'দুর্গা' সে বিষয়ে একটি কাহিনি জানা যায়। ঋষি বিশ্বামিত্র একবার কার্তিক এবং গণেশকে প্রশ্ন করেন, তাঁদের মাতার নাম দুর্গা কেন? ঋষিপ্রশ্নের উত্তরে তাঁরা বলেন, হিরণ্যাক্ষপুত্র রুরুর বংশধর দুর্গম সমুদ্রমন্থনে অসুরদের সঙ্গে ছলনা করা ও তাঁর পিতার মৃত্যুর প্রতিশোধ রূপে ব্রহ্মার কাছে বর চান যে, তাঁকে এমন এক নারী বধ করবেন যিনি অনাবদ্ধকে আবদ্ধ করেন।


এর পরের ঘটনাক্রম এরকম: দুর্গম অসুরের অত্যাচার দিন-দিন বাড়তে থাকে, দেবতারা ত্রাসতাড়িত হয়ে স্বর্গ ছাড়েন, মুনিঋষিদের সাধন-ভজন ব্যাহত হয়। সৃষ্টিতে প্রবল বিঘ্ন এসে উপস্থিত হয়। প্রবল অসুর দুর্গম চতুর্বেদ পর্যন্ত হস্তগত করেন। তখন সৃষ্টিরক্ষায় ব্যাকুল হয়ে দেবতারা শিবের কাছে যান। শিব সব শুনে পার্বতীকে অনুরোধ করেন, তিনি যেন দুর্গমাসুরকে বধ করেন। দেবী পার্বতী তখন দেবগণ ও শিবের অনুরোধে এক উগ্র রূপ ধারণ করেন। এবং দুর্গমাসুরের সঙ্গে যুদ্ধে যান। পুরাণ বলছে, বিন্ধ্যাচলে ১০ দিন ধরে এক মহাযুদ্ধ হয়েছিল। সেই যুদ্ধে দেবী দুর্গমাসুরের কোটি সৈন্যকে নিধন করলেন। পরে দুর্গমাসুরকে তিনি ব্রহ্মজ্ঞানও দান করেছিলেন। অবশেষে তিনি দুর্গমাসুরকে বধ করেন এবং চতুর্বেদ ও অন্যান্য মন্ত্রাদি উদ্ধার করেন। আর এর পর থেকেই দেবীর নাম 'দুর্গা' হিসেবে অভিহিত হয়।


দুর্গম ব্রহ্মার কাছে বর চেয়েছিলেন, তাঁকে যেন এমন এক নারী বধ করেন যিনি অনাবদ্ধকে আবদ্ধ করেন। দেবী পার্বতী স্বয়ং মহাকালী। তিনি স্বয়ং সৃষ্টিতে আবদ্ধ নন। তা ছাড়া যা 'অনাবদ্ধ' অর্থাৎ সময় বা কাল, তাকে তিনি বন্দি করেন। যে-কাল'কে চিরন্তন সত্য হিসেবে মনে করা হয়, সেই কালের ঊর্ধ্বে তিনি, সেই কাল'কে নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। ফলে দুর্গমাসুরের নিধনে ব্রহ্মাবাক্যও মিথ্যা হল না। 


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)