অরূপ লাহা: দুর্গম স্থানে তাঁর বাড়ি। তাই নাম দুর্লভা কালী। আবার অন্য মত বলে, দুর্লভ নামের এক পুরোহিত মায়ের আরাধনা করতেন। সেই থেকে নাম দুর্লভা কালী। এক সময় চারপাশে ছিল ঘন জঙ্গল। আনাগোনা ছিল হিংস্র জন্তুদের। এখন মন্দিরের পাশ দিয়েই গিয়েছে জাতীয় সড়ক। জঙ্গল অতীত। গা ছমছমে ভাবটাও আর নেই। তবুও, ঐতিহ্য আঁকড়ে আজও দাঁড়িয়ে দুর্লভা কালী।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন: Saturn on Diwali 2024: দীপাবলির সময়ে মা কালীর সঙ্গেই এঁরা পাবেন শনিদেবেরও অতি বিশেষ আশীর্বাদ! জেনে নিন, কোন কোন রাশি...


বর্ধমান শহরের উপকণ্ঠে লাকুর্ডি পেরিয়েই এই দুর্লভা কালীর মন্দির। ৩০০ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। আজও সমাধান হয়নি বর্ধমান শহর-লাগোয়া লাকুর্ডিতে পূজিতা দুর্লভা কালীর উপাসনা ঘিরে থাকা নানা রহস্যকাহিনির। তবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গিয়েছে অনেক কিছুই। মন্দিরে শিবাভোগ দেওয়ার প্রথা রয়েছে। শিবাভোগ অর্থাৎ, শিয়ালকে ভোগ দেওয়া। মন্দিরে আজও সন্ধ্যায় যা রান্না হয়, তা ভোগ হিসাবে দেওয়া হয় শিয়ালকে।


কথিত আছে, গোকুলানন্দ ব্রহ্মচারী নামে এক সাধক ঘুরতে-ঘুরতে এখানে উপস্থিত হন। এক দিন স্নান করতে গিয়ে তাঁর পায়ে একটি পাথর ঠেকে। সেই রাতেই স্বপ্নাদেশ পেয়ে তিনি দেবীকে এখানে প্রতিষ্ঠা করেন। পরে বর্ধমানের মহারাজার আনুকূল্য লাভ করেন। শোনা যায়, তিনি নাকি মহারাজকে অমাবস্যায় পূর্ণচন্দ্র দেখিয়েছিলেন। 


এখানে সাধকের পঞ্চমুণ্ডির আসন রয়েছে। রয়েছেন ভৈরবও। পুরনো মূর্তির জায়গায় এখন নতুন মূর্তিতেই নিত্যপুজো হয়। যদিও পুরনো মূর্তিটি এখনও পাশের ঘরে রাখা রয়েছে। দুর্লভা কালী দর্শন করতে বহু দূর-দূর থেকে মানুষ এই মন্দিরে আসেন। প্রতি বছর কালীপুজোর রাতে প্রচুর ভক্তসমাগম হয়। 
প্রবাদ রয়েছে, বর্ধমানের মহারাজা এক দিন জঙ্গলে শিকার করতে গিয়ে দেখতে পান, তালপাতার ছাউনিতে এক সন্ন্যাসী বসে সাধনা করছেন। সেটা ছিল অমাবস্যার রাত। ওই দিন গোকুলানন্দ বর্ধমানের মহারাজা বিজয়চাঁদ মহতাবকে তাঁর দৈবশক্তি দিয়ে অমাবস্যার রাতে পূর্ণচন্দ্র দেখিয়েছিলেন। মহারাজ মুগ্ধ হয়ে গোকুলানন্দকে ১০ বিঘে জমি এবং মায়ের একটি মন্দির তৈরি করিয়ে দেন। কালীমন্দিরের পাশেই করা হয় তিনটি শিবমন্দিরও।


আরও পড়ুন: Bhitarkanika | Dana Cyclone Update: ভিতরকণিকায় 'ডানা'র আছড়ে পড়াটা অভিশাপের বদলে আশীর্বাদ? মিলছে আশ্চর্য ব্যাখ্যা...


তবে দেবীর নাম 'দুর্লভা' হওয়া নিয়ে একটি অন্য গল্পও প্রচলিত আছে। বর্তমানে মন্দিরের সেবায়েতরা জানান, গোকুলানন্দের দেহত্যাগের পরে দুর্লভ ভট্টাচার্য নামে এক পুরোহিতকে নিয়োগ করেন রাজা বিজয়চাঁদ। পুরোহিত দুর্লভ ভট্টাচার্যের নামে দেবী এখানে দুর্লভা কালী নামে পরিচিত। পরিবারের সদস্য মঙ্গল  ভট্টাচার্য বলেন, দেবী এখানে শ্বেতপাথরের মূর্তিতে পূজিতা হন। তবে দেবীর মূর্তিটি প্রথমে মাটির ছিল। পরে তা অষ্টধাতুর তৈরি করানো হয়। সেই মূর্তিটি চুরি যায়। এর পরে বর্ধমানের মহারাজা বিজয়চাঁদ মহতাব বেলকাঠের মূর্তি তৈরি করিয়ে দেন। কিন্তু সময়ের ফেরে বেলকাঠেও ঘুণ ধরে। এর পর ভট্টাচার্য পরিবারের পক্ষ থেকে সিমেন্টের দেবীমূর্তি তৈরি করানো হয়। বছরখানেকের মধ্যে সিমেন্টের তৈরি মূর্তিতেও ফাটল দেখা দেয়। তার পর ভট্টাচার্য পরিবার রাজস্থান থেকে শ্বেতপাথরের মূর্তি নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করে মা দুর্লভাকে।


(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)