Gajan in Howrah: পিরের দরগায় শিবের গাজন! হাওড়ার মাটিতে সম্প্রীতির গভীর সুরধ্বনি...
Gajan at Mazar in Howrah: এ বাংলার গ্রামে গ্রামে শিবকে ঘিরেই পালিত হয় কত না লৌকিক পার্বণ। এর অন্যতম চৈত্রের গাজন। আর সেই গাজন পিরের দরগাতেও। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই অনন্য নজির দেখা যায় হাওড়ার উলুবেড়িয়ার বাগনানের বাণীবন গ্রামে।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: কখনও কখনও খুব সাধারণ ভাবেই অসাধারণ ব্যাপার ঘটে যায়। অথচ, বিষয়টি যে সত্যিই অসাধারণ সেই বোধ আমাদের হয় না। মনে হয়, এটাই তো ঘটার কথা, এর মধ্যে আর অভিনবত্ব কী? তেমনই একটা ঘটনা হল পিরের মাজারে শিবের গাজনের আয়োজন!
কোথায় ঘটেছে এমন আশ্চর্য ব্যাপার?
আরও পড়ুন: Ascent of Mount Rhenock: 'পঙ্গুরে লঙ্ঘাও গিরি'! এক পায়ে শৃঙ্গ জয় করে অসাধ্য সাধন উদয়কুমারের...
বাংলার লৌকিক সংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ শিব। এ বাংলার গ্রামে গ্রামে শিবকে ঘিরেই পালিত হয় কত না লৌকিক পার্বণ। এর অন্যতম চৈত্রের গাজন। আর সেই গাজন পিরের দরগাতেও। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই অনন্য নজির দেখা যায় হাওড়ার উলুবেড়িয়ার বাগনানের বাণীবন গ্রামে। সেই গ্রামে অবস্থিত পির জঙ্গলবিলাসের দরগা। সেখানেই হয় গাজন।
বাণীবন গ্রামের পিরপুরের অন্যতম আকর্ষণ পির আব্বাসউদ্দিন শাহের কবরস্থান। এই কবরস্থান সাধারণের কাছে জঙ্গল বিলাস পিরের কবর নামে পরিচিত। দরগার স্থাপত্যে বাংলার চারচালা মন্দিরের স্থাপত্যরীতির প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। দরজার কারিগরিতেও মন্দিরের ভাস্কর্যশৈলী, পোড়ামাটির অলংকরণ লক্ষ্য করা যায়। হিন্দু স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত এমন মাজার বাংলায় খুব একটা দেখা যায় না।
এই মাজারেই গাজন উৎসব দেখা যায়। চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিনে নীল ষষ্ঠীর দিনে বাংলার গ্রামে গ্রামে শিব ঠাকুরের মন্দিরে বা অন্যান্য শিবক্ষেত্রে শিবের ঝাঁপ অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন বিকেলে অথবা সন্ধ্যায় বাণীবনের অন্তর্গত বৃন্দাবনপুর গ্রামের এবং বৃন্দাবনপুর গ্রামের পার্শ্ববর্তী জগৎপুর গ্রামের দুটি গাজন পির জঙ্গল বিলাসের দরগায় এসে সমবেত হয়। ঢাকঢোল কাঁসির বাদ্য সহযোগে বাবা ভোলা মহেশ্বরের চরণের সেবা লাগে বলে জঙ্গল বিলাসের মাজারটি পরিক্রমা করা হয়। তারপর গাজন দুটির মূল সন্ন্যাসী পিরের উদ্দেশ্যে পুজো করেন। এরপর আরও কিছু আচার পালান করা হয়। গাজনের মূল সন্ন্যাসীদ্বয়কে অনুসরণ করে অন্য সন্ন্যাসীরা মাথাচালা, বেত নাড়া ইত্যাদি করে থাকেন।
পীর জঙ্গল বিলাস বাণীবনের গ্রামদেবতা। তিনি মূলত বাঘের দেবতা হিসেবে পরিচিত হলেও ভক্তজনের বিশ্বাসে তিনি সর্ব বিপদের পরিত্রাতা ও রক্ষাকর্তা। সেকারণে আজও গৃহারম্ভ, গৃহপ্রবেশ, মুখেভাত, ব্যবসার পত্তন, বিদেশযাত্রা ইত্যাদি যে কোনও শুভ কাজের আগে পিরের মাজারে পুজো দেওয়া হয়।