কেতুগ্রামের সতীপীঠ অট্টহাসে আজও পুজো হয় রঘু ডাকাতের কালী
রঘু ডাকাত আজ আর নেই কিন্তু অট্টহাসের রঘুর সেই আরাধ্য দেবী মা কালীর পুজোর জৌলুস কমে নি।
নিজস্ব প্রতিবেদন: কেতুগ্রামের সতীপীঠ অট্টহাসে রঘু ডাকাতের আরাধ্য দেবীর আরাধনায় করোনার প্রভাব। সতীপীঠে কালীপুজোয় এবার পশুবলি বন্ধ করে দিল মন্দির কর্তৃপক্ষ। করোনার নিয়ম মেনেই মাস্ক পরে একসঙ্গে পাঁচজন ভক্ত মন্দিরের গর্ভগৃহে ঢুকে পুজো দিতে পারবেন। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে এই নিয়ম করা হয়েছে বলে মন্দির কর্তৃপক্ষ জানান।
পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের অট্টহাসের সতীপীঠে রঘু ডাকাতের আরাধ্য মাকালী আজও পূজিত হয় মহা ধূমধামে। নতুন করে কালী মূর্তি তৈরি করা না হলেও একটি প্রস্তর কালী মূর্তিতে তন্ত্রাচারে পুজো করা হয়। কালিকা তন্ত্র অনুসারে এই সতীপীঠ তন্ত্র সাধকদের সাধন স্থল হিসাবে বেশি স্বীকৃত। করোনা কালে কালী পুজো হলেও মন্দির কতৃপক্ষ বলিদান সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছে ভক্তদের দল। মহাভোগ যোগে কালী মন্ত্রে দেবী পূজিত হন এখানকার দেবী। কিছুদিন আগেও দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার ডাকাতদলের সর্দাররা গভীর রাতে অট্টহাসের ঘন জঙ্গলে তাদের আরাধ্য দেবী মাকালীর পুজো দিত বলে শোনা যায়। কথিত আছে প্রায় দুশো বছর আগে রঘু ডাকাত নদীয়া থেকে ব্রিটিশ পুলিশের তাড়া খেয়ে কেতুগ্রামের অট্টহাসের জঙ্গলে ডেরা বেঁধেছিল। বীরভূম, মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানে অবাধে লুটপাট চালাত রঘু । এমনকী স্থানীয় ইতিহাস থেকে জানা যায়, চিঠি দিয়ে ডাকাতি করতে যাবার আগে রঘু ডাকাত অট্টহাস জঙ্গলে মা কালীর পুজো করে রওনা দিত। ব্রিটিশ শাসন কালে রঘু তার দল-বল নিয়ে ঈশাণী নদীর তীরে এই জঙ্গলে বছর সাতেক আস্তানা করে ছিল।
আরও পড়ুন: দক্ষিণেশ্বরে দর্শনার্থীদের ভিড়, চলছে মায়ের আরাধোনা, পিপিই পরে রয়েছেন পুরোহিত
অট্টহাস মূলত সতীপীঠ, এখানে দেবীর অধরোষ্ঠ পড়েছিল। এই সতীপীঠে দেবীর পাষাণ মূর্তির উপর মহিষমর্দিনীর প্রস্তর মূর্তি রেখে নিত্য সেবা করা হয়। সতীপীঠ সূত্রে জানা যায় সাধক বামাক্ষ্যাপা,মোক্ষদা, গিরীশ ঘোষ এই সতীপীঠে থাকা পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসে তন্ত্র সাধনা করেছেন। অট্টহাসের প্রায় তিরিশ একর ঘনজঙ্গলে মধ্যেই থাকা কালীর প্রস্তর মূর্তিকে ঘিরে আজও ভক্তেরা মহাসমারোহে কালীর আরাধনা করেন । অট্টহাসের কালী পুজোয় স্থানীয় বাসিন্দা থেকে প্রশাসনে সকলেই অংশ গ্রহন করেন। জনশ্রুতি আছে এক সময় অট্টহাসের মা কালীকে তুষ্ট করতে রঘু ডাকাত নরবলি দিত। যদিও পরে মা কালীর আদেশেই তা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয় বলে জনশ্রুতি আছে। এখন তো মন্দির কতৃপক্ষ পশুবলিও বন্ধের নির্দেশ জারি করেছেন। তবে মন্দিরে হাড়িকাঠ আজও আছে। রঘু ডাকাত আজ আর নেই কিন্তু অট্টহাসের রঘুর সেই আরাধ্য দেবী মা কালীর পুজোর জৌলুস কমে নি।