Howrah Money Recovery: একমাসে ৭৭ কোটি টাকা লেনদেন; অ্যাপে জালিয়াতি, শিবপুরকাণ্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য
Howrah Money Recovery: পুলিসের রেইডের আগে আরও টাকা ভর্তি ব্যাগ নিয়ে পালায় পাণ্ডে পরিবার। শনিবার রাতে পুলিস শিবপুরের ফ্ল্যাটে পৌঁছয়। তার কয়েক মিনিট আগেই সিসিটিভিতে দেখা যাচ্ছে দুটি ব্যাগ নিয়ে শৈলেশের মা ও দুই ভাই যাচ্ছে একটি গাড়িতে। হেঁটে বেরিয়ে যান শৈলেশ
পিয়ালি মিত্র: পার্কিং লটে গাড়িতে টাকা, ফ্ল্য়াটের বক্স খাটের ভেতরে থরে থরে সাজানো টাকা, ব্যাঙ্কে টাকার পাহাড়। ব্যাঙ্কে এক মাসে ৭৭ কোটি টাকা লেনদেন। হাওড়ার শিবপুরের মন্দিরতলায় শৈলেশ পান্ডের ওই যকের ধনের খোঁজখবর নিতে গিয়ে অবাক তদন্তকারীরা। কালো টাকা সাদা করা হতো? এত বিপুল অঙ্কের টাকার লেনদেন কেন? প্রাথমিকভাবে এর পেছনে মোডাস অপারেন্ডিটা বুঝতে পারছিলেন না তদন্তকারীরা। ধীরে ধীরে তা স্পষ্ট হচ্ছে। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানিয়েছিলেন, আগস্ট ২০২০ কিছু লোক এসে তাদের ব্যাঙ্ক ২টি অ্যাকাউন্ট খোলে। যাঁরা তাদের অফিস ঠিকানা দেয় ১৬ স্ট্র্যান্ড রোড়ের। লোকগুলোর ঠিকানা ঝাডখন্ডের জামশেদপুরে। তার জানিয়েছিল রাইস, ফুড গ্রেইনের ব্যবসা রয়েছে তাঁদের। কারেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। প্রাথমিক ভাবে সব কিছু ঠিক ছিল। কিন্তু গত সেপ্টেম্বর মাসে হঠাৎ বিপুল অঙ্কের টাকার লেনদেন লক্ষ করে ব্যাঙ্ক। বিদেশি মুদ্রাতেও ট্রানজাকশন হচ্ছে। গত মাসে ২টি অ্যাকাউন্টে ৭৭ কোটি টাকার ট্রানজাকশন হয় । পুরোটাই অনলাইনে। এবং অধিকাংশ টাকা তুলে বা অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ওই ব্যাঙ্কের বেঙ্গালুরু ব্যাঙ্ক ফ্রড সেকশন সেটা লক্ষ্য করে। দেখা যাচ্ছিল টাকা ঢুকছে ২টি অ্য়াকাউন্টে। পরে তা যাচ্ছে ৩টি অ্য়াকাউন্টে। পরে সেই টাকা চলে যাচ্ছে ৯টি অ্যাকাউন্টে।
আরও পড়ুন-রেল দুর্ঘটনায় মৃতের দেহ ঝাড়খণ্ডে, মাথা বাংলায়! শুরু পুলিসি টানাপোড়েন...
বিপুল লেনদেনের বিষয়টি ব্যাঙ্কের নজরে আসতেই তারা লক্ষ্য করেন, ওই অ্যাকাউন্টগুলির সঙ্গে একটি সংস্থার যোগসূত্র রয়েছে। ওই সংস্থা একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টাকার লেনদেন হচ্ছিল। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ দেখে তার মধ্যে ওই অ্যাকাউন্ট গুলোর সঙ্গে যোগ সূত্র রয়েছে TP Global নামে একটি ওয়েবসাইটের। সেটি আরবিআইয়ের ব্ল্যাক লিস্টে রয়েছে। এই বিষয়টি জানার পরই পুলিসে অভিযোগ জানায় ব্যাঙ্ক। তদন্তে দেখা যায় প্রথম দুটি অ্যাকাউন্ট টাকা জমা পড়ছে কিছু অ্যাকাউন্ট থেকে । দুটি অ্যাকাউন্ট থেকে প্রথমে ৩ টি অ্যাকাউন্টে যাচ্ছে। সেখান থেকে আবার ৯ টা অ্যাকাউন্টে টাকা চলে যাচ্ছে। এর মধ্যে তিনটে অ্যাকাউন্টের অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের খোঁজ করতে গিয়ে পুলিস একজনের খোঁজ পায়। সেই ব্যক্তি জানান, এটা পিছনে আছে সে শৈলেশ পাণ্ডে নামে এক ব্যক্তি। ব্যাঙ্ক থেকেও পুলিস জানতে পারে যে অ্যাকাউন্ট গুলোর মাধ্যমে টাকা লেনদেন হচ্ছে সেগুলির ইন্ট্রোডিউসার শৈলেশ পাণ্ডে।
পুলিসের তদন্তে উঠে আসে IX global নামে একটি অ্যাপ খোলা হয়েছে। সেই অ্যাপটি শৈলেশ পান্ডে খুলেছেন নাকি কোনও মার্কিন অ্যাপের হয়ে শৈলেশরা কাজ করতো তা স্পষ্ট নয়। ওই অ্যাপের মাধ্যমে ক্রিপ্টো কারেন্সি, ইন্ডিয়ান ইক্যুইটি মার্কেটিং সহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হতো। পাশাপাশি ওই অ্যাপটি প্রমোশন করতে পারলে কিছু কমিশন পাওয়া যেত। এভাবেই একটি অনলাইন চেন মার্কেটিং খোলা হয়েছিল। নির্দিষ্ট সময়ের পর কমিশন দেওয়া বন্ধ হয়ে যেত। ঠিক যেমন গার্ডেনরিচের আমির খানের অ্যাপের ক্ষেত্রে করা হয়েছিল। এখনওপর্যন্ত তদন্তকারীদের বক্তব্য হল IX global নামের ওই অ্যাপের মাধ্যমে বিশাল জালিয়াতি চলছিল। আপে ডলারে পেমেন্ট নেওয়া হতো। শৈলেশ পান্ডে বা তার ভাইদের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। তবে জানা যাচ্ছে, পুলিসের রেইডের আগে আরও টাকা ভর্তি ব্যাগ নিয়ে পালায় পাণ্ডে পরিবার। শনিবার রাতে পুলিস শিবপুরের ফ্ল্যাটে পৌঁছয়। তার কয়েক মিনিট আগেই সিসিটিভিতে দেখা যাচ্ছে দুটি ব্যাগ নিয়ে শৈলেশের মা ও দুই ভাই যাচ্ছে একটি গাড়িতে। হেঁটে বেরিয়ে যান শৈলেশ।