নিজস্ব প্রতিবেদন : মেয়ে হয়েছিল। একবার নয়। পর পর তিনবার। আর সেই 'অপরাধ'-এই শিশুকন্যা সহ মাকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠল স্বামী সহ শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে। অভিযোগ, মারধরের পর আগুনে পুড়িয়ে মারা হয় মা ও মেয়েকে। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদিবাদের সাগরজদিঘিতে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির ডাঙাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন সুমিত্রা মণ্ডল। ৮ বছর আগে পাশের গ্রাম বংশিয়ার তাপস কুণ্ডুর সঙ্গে বিয়ে হয় সুমিত্রার। বিয়ের পর প্রথম প্রথম যেমন হয়। সবকিছু ঠিকই ছিল দম্পতির মধ্যে। পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে প্রথম সন্তান জন্মানোর পর থেকে।


অভিযোগ, মেয়ে হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় অত্যাচার। বাপের বাড়ি থেকে টাকাপয়সা নিয়ে আসার জন্য সুমিত্রাকে চাপ দিতে থাকে তাপস। কোনওরকমে সে যাত্রা সামাল দেন সুমিত্রা। বড় মেয়ের বয়স যখন ২ বছর, তখন ফের গর্ভবতী হয়ে পড়েন সুমিত্রা। কিন্তু এবারও মেয়ে-ই হয়। অভিযোগ, ফের শুরু হয় সুমিত্রার উপর শারীরিক নির্যাতন। সুমিত্রার বাবা জানিয়েছেন, প্রতিবারই অশান্তির পর বাপের বাড়ি পালিয়ে আসতেন সুমিত্রা। তিনি বার বারই বুঝিয়ে-সুঝিয়ে মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি রেখে আসতেন।


আরও পড়ুন, মেয়েকে নিয়ে ফেরার সময় বোমার আঘাতে খুন তৃণমূল নেতা


এদিকে, দ্বিতীয়বারে পর ফের তৃতীয়বার সুমিত্রা গর্ভবতী হয়ে পড়লে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। ৪ বছরের বড় মেয়েকে আগেই বড় পিসির বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিল সুমিত্রা। কিন্তু তাতেও বিপদ এড়ানো গেল না। এবারও প্রসবের পর দেখা যায়, ফের কন্যা সন্তানেরই জন্ম দিয়েছেন সুমিত্রা। পর পর ৩ বার মেয়ের জন্ম দেওয়ায় এরপরই সুমিত্রার উপর স্বামী তাপসের অত্যাচার চরমে ওঠে। দিন কয়েক আগে ২ বছরের মেজো মেয়ে ও ৯ মাসের শিশুকন্যাকে নিয়ে বাপের বাড়িতে চলে আসেন সুমিত্রা। কিন্তু সেখানেও নিস্তার মেলেনি। বাপের বাড়ি বয়ে এসেও স্ত্রীকে গালিগালাজ করে যান তাপস।


সুমিত্রার বাবা জানিয়েছেন, ১৮ অগাস্ট ফের মেয়ে ও ২ নাতনিকে নিয়ে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে রেখে আসেন তিনি। এরপরই ১৯ অগাস্ট তাঁরা জানতে পারেন, আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয়েছে মেয়ে সুমিত্রা ও ৯ মাস বয়সী ছোটো নাতনির। তাঁর অভিযোগ, খুন করা হয়েছে তাঁর মেয়ে ও নাতনিকে। তিনি বলেন, সেদিন সুমিত্রাকে বেধড়ক মারধর করে তাপস। তারপর তাঁর মেয়ে ও ৯ মাসের শিশুকন্যাকে ঘরের মধ্যে আটকে রেখে, বাইরে থেকে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয় জামাই ও শাশুড়ি। চিত্কার শুনে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় সুমিত্রাকে উদ্ধার করে তাঁরা।


আরও পড়ুন, ভূতুড়ে ঢিল ঘুম কেড়েছে মালবাজারবাসীর


গুরুতর জখম অবস্থায় সুমিত্রাকে প্রথমে সাগরদিঘি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে বহরমপুর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় স্বামী তাপস কুণ্ডু, শ্বশুর অমল কুণ্ডু ও শাশুড়ি মিনতি কুণ্ডুর বিরুদ্ধে সাগরদিঘি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন সুমিত্রার বাপের বাড়ির লোকেরা।