নিজস্ব প্রতিবেদন: জনশ্রুতি আছে কোচবিহারের মহারানি ইন্দিরা দেবী কলকাতায় এলেই নাকি বিমানের করে যেত বোরোলি মাছ। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুরও অন্যতম প্রিয় মাছ ছিল উত্তরবঙ্গের এই রূপোলি শ্যসটি। যখনই উত্তরবঙ্গ সফর করতেন, নিয়ম করে মধ্যাহ্নভোজের পদে বোরোলি মাছ থাকতো। বন দফতরের পাচক অধীর দাস জিরে-আদা বাঁটা দিয়ে এমন বোরোলির ঝোল বানিয়ে দিতেন, তা চেটেপুটে খেতেন তিনি। তাঁর আপ্ত সহায়ক জয়কৃষ্ণ ঘোষ স্মৃতিচারণায় বলেছিলেন, বোরোলি মাছ তিনিই (জ্যোতি বসু) প্রথম খাওয়ান আমাকে। খাওয়ার পরই জিজ্ঞাসা করতেন, কী কেমন? আমি বলতুম, দারুণ। কিন্তু এ বছর দারুণ শব্দ বলতে পারছেন না বোরোলি প্রেমীরা। পাতে পড়লে তো খেয়ে বলবেন দারুণ! বোরোলির আঁতুড়ঘর গজলডোবার রেস্তোরাঁগুলিতে আকাল ধরেছে এই মাছের। কেন?


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

শীতের প্রকোপে মাঝিরা তিস্তায় কম যাচ্ছেন। যার ফলে মাছের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও জোগানে কুলোচ্ছে না। রেস্তোরাঁর মালিক পরিমল বসু বলছেন, “আমার তো হোটেলের নামই বোরোলি। স্বাভাবিকভাবে এটাই মানুষ খেতে চাইছে। প্রতি দিন মেরে কেটে এক কেজি মাছ জোগাড় করতে পারছি। বাধ্য হয়ে গ্রাহকদের না বলতে হচ্ছে।” এই পরিস্থিতি নজিরবিহীন বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। শীতেই বোরোলি মাছ পাওয়া যায়। অসময়ে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি হলেও এই সময় দাম কম থাকে। স্থানীয় বাজারে বোরোলি পাওয়া যায় ২০০ টাকা কেজি দরেও। কিন্তু  এখন ১৪০০ টাকা প্রতি কেজি বোরোলি মাছ বিকোচ্ছে বাজারে। এর ফলে উত্তরবঙ্গ মানুষের চাহিদা মেটা তো দূর, বোরোলি মাছের টানে যে সব পর্যটকরা গজলডোবায় ভিড় জমাচ্ছেন, তাঁদেরও শুকনো মুখে ফিরতে হচ্ছে।


আরও পড়ুন- নাম নয় কাম, সুন্দরবনের প্রান্তিক মানুষের ভগবান 'ডাক্তার' পাচ্ছেন পদ্মশ্রী


বোরোলি মাছের এই ‘আকাল’ পরিবেশ জনিত সমস্যার জন্যও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জলের দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বোরোলি মাছের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। নদীর দুই পাশের জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার, ব্যাটারি মাধ্যমে বিদ্যুতের শক দিয়ে মাছ ধরা এমনকি মশারি জালে অপরিণত কিংবা ডিমসুদ্ধ বোরোলি ধরার ফলে এই প্রজাতির আবাদ কমছে। স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে প্রশাসনের তরফে যতই পদক্ষেপ করা হোক না কেন, তোর্সা, আত্রেয়ী, পুনর্ভবা নদীতে কুলীন এই বোরোলি এখন সত্যিই বিরল হতে চলেছে।