পার্থ চৌধুরী: জন্মের সময় থকেই দু'টি হাত থেকেও যেন নেই। খর্বকায় দুটি হাতেই নেই তালু, স্বভাবতই নেই আঙুলও। কিন্তু তাতে কী যায় আসে! শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর জগন্নাথ মাণ্ডি পা দিয়ে লিখেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে এবার। পরীক্ষায় সফল হওয়ার ব্যাপারেও সে দৃঢ়প্রত্যয়ী। লেখাপড়া শেখার জন্য বিশেষ ভাবে সক্ষম আদিবাসী পরিবারের এক ছাত্রের এই লড়াইকে কুর্নিশ না জানিয়ে পারেননি পরীক্ষাকেন্দ্রের পরীক্ষকরাও। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন: Shutki Fish: যার গন্ধে টেঁকা দায়, সেই সিদল শুঁটকির জনপ্রিয়তা আজও অক্ষুণ্ণ! চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে ব্যবসায়ীরা


মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী জগন্নাথ মাণ্ডির বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের মেমারি থানার সিমলা গ্রামের আদিবাসী পাড়ায়। শৈশব খুব একটা সুখের ছিল না। ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্মেছে জেনেও ছোটবেলাতেই তাকে ছেড়ে চলে যান মা। তবে মা ছেড়ে চলে গেলেও বাবা, ঠাকুমা এবং পিসি ও দাদার স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়নি জগন্নাথ। ভর্তি করেন গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তখন থেকেই পা দিয়ে বাংলায় লেখা রপ্ত করতে শুরু করে জগন্নাথ। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জগন্নাথ পা দিয়ে লেখাতে সাবলীল হয়ে ওঠে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ সম্পূর্ণ হলে পরিবারের লোকজন জগন্নাথকে  ভর্তি করে মেমারির নুদিপুর ভূপেন্দ্র স্মৃতি বিদ্যামন্দিরে। সেখান থেকেই এবার জগন্নাথ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। সবথেকে বড় কথা, সিমলা আদিবাসী পাড়া থেকে এবার জগন্নাথই একমাত্র ছাত্র যে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। এমন এক  ছাত্রের পরীক্ষা দিতে  যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সেজন্য সদাসতর্ক পরীক্ষাকেন্দ্র মেমারির বাগিলা পূর্ণচন্দ্র স্মৃতি বিদ্যামন্দিরের পরীক্ষকরা।


আরও পড়ুন: সাগরদিঘির উপনির্বাচনে উত্তেজনা! বদলি প্রিসাইডিং অফিসার, মকপোলের অভিযোগ


লেখাপড়া শেখার ব্যাপারে ছোট বয়স থেকেই ওর ঠাকুমা ওকে নানা ভাবে অনুপ্রাণিত করেছেন। সেই প্রেরণায় শত কষ্টের মধ্যেও জগন্নাথ লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। স্কুলে পড়াশোনা করার পাশাপাশি সে গ্রামের এক গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে যেত। পায়ে চামচ ধরে স্কুলে মিড ডে মিল খায় সে। ভালো ফুটবলও খেলে সে। পাশাপাশি পায়ে করে খুব ভালো ছবিও আঁকে জগন্নাথ। তার পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ দেখে স্কুলে ক্লাস করার জন্য স্কুলের তরফে বিশেষ বেঞ্চের ব্যবস্থাও করে দেওয়া হয়। স্কুলে সহপাঠীরা সবসময় জগন্নাথের পাশে থাকে। বেশিরভাগ দিন সহপাঠীরা তাদের সাইকেলে জগন্নথকে চাপিয়ে নিয়ে স্কুলে আসত। প্রধান শিক্ষক এও জানান,পায়ে করে লিখে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য  জগন্নাথ যাতে অতিরিক্ত সময় পায় সেজন্য পর্ষদে আবেদন জানানো হয়। পর্ষদ তা অনুমোদনও করেছে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় জগন্নাথ যে সাফল্যের সঙ্গেই উত্তীর্ণ হবে, সে ব্যাপারে 
একপ্রকার নিশ্চিতই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।


জগন্নাথের ঠাকুমা ও পিসি বলেন, জগন্নাথ লেখাপড়া শিখে নিজের পায়ে প্রতিষ্ঠিত হোক, মানুষের মতো মানুষ হোক, এটাই আমরা চাই। ওর মা ওকে ছেড়ে চলে গেলেও আমরা আগামী দিনেও ওর পাশে থাকব। জগন্নাথ একজন আদর্শ শিক্ষক হয়ে উঠলে আমাদের আদিবাসী মহল্লার ছেলেমেয়েরাও লেখাপড়া শেখায় অনুপ্রাণিত হবে।


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)