অরূপ বসাক: গাঁটের টাকা খরচ করে জমি কিনেছেন অনেকেই। অথচ সেই জমিতে তাঁরা না ঢুকতে পারছেন, না করতে পারছেন কোনও নির্মাণকাজ। মাফিয়াদের দাপটে রীতিমতো ত্রস্ত ওদলাবাড়ি। দিনকয়েক আগেই জমি নিয়ে দুই পরিবারের বিবাদ গড়ায় থানা পর্যন্ত। অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে ধারালো অস্ত্র নিয়ে বাড়িতে ঢুকে বিবাদে জড়িত এক পরিবারের উপর আক্রমণ করা হয়েছিল। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে পুরোটাই সাজানো ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে অভিযুক্তদের তরফে। পাল্টা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে তাদের তরফ থেকেও।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন: Santragachhi Jheel: মিগজাউম কীভাবে সাঁতরাগাছি ঝিলেও ঢেউ তুলল, বেঁধে দিল পাখির ডানা?


দক্ষিণ ওদলাবাড়ির শান্তি কলোনি এলাকায় গোবিন্দ ছেত্রী ও তাঁর বাবা ললিত বাহাদুর ছেত্রীদের ১১ বিঘা জমি রয়েছে। সেই জমির এক প্রান্তের সীমানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ প্রতিবেশী সানি ওঁরাও'-এর পরিবারের সঙ্গে। সম্প্রতি নিজের জমিতে পিলার পুঁতে কংক্রিটের দেওয়াল তুলতে শুরু করেন গোবিন্দ ছেত্রী। এই সময় সানি ওরাওঁ ও তাঁর ছেলেরা ওই কাজে বাধা দিতেই বিবাদের সূত্রপাত। 


সানি ওরাওঁদের অভিযোগ, ওই জমির পাশে ৭০'র দশকে পঞ্চায়েতের তরফে কৃষিকাজের জন্য একটি সেচ নালা তৈরি করা হয়েছিল। যে সেচ নালার জলে আশপাশের সমস্ত জমিতে কৃষিকাজ করতেন স্থানীয়রা। দেওয়াল তুলতে গিয়ে গোবিন্দ ছেত্রী ওই সেচ নালাটির বেশ কিছু অংশ বুজিয়ে সীমানা প্রাচীরের মধ্যে ঢুকিয়ে নিতে চাইছেন। এমনটা হলে তাঁদের অনেকের জমিতে সেচের জল আসবে না। 


অন্য দিকে, গোবিন্দ ছেত্রীর বক্তব্য, সেচ নালাটি উত্তর থেকে দক্ষিণে গিয়েছে। সেটা একই রকম আছে। তাঁর জমি পূর্ব-পশ্চিমে। উত্তর-দক্ষিণের সেচ নালায় কোনও বাধা সৃষ্টি না করে তিনি পূর্ব-পশ্চিমে তাঁর জমিতে দেওয়াল তুলতে শুরু করতেই তাঁকে বাধা দিচ্ছেন সানি ওঁরাও ও তাঁর পরিবার। এমনকি সম্প্রতি সানি ওঁরাও ও তাঁর ছেলেরা রাতের অন্ধকারে ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁর বাড়িতে হামলাও চালিয়েছে বলে অভিযোগ। এই ঘটনার মূল প্রকাশ ছেত্রী। প্রকাশ ছেত্রী বাইরে থেকে উস্কানি দিয়ে এই গন্ডগোল পাকাচ্ছেন।  গোবিন্দ ছেত্রীর দাবি, প্রকাশ ছেত্রীর উদ্দেশ্য, তাঁদের এখান থেকে বিতাড়িত করে সমস্ত জমি দখল করা। তিনি আরও বলেন, সেই রাতে বৃদ্ধ বাবা ললিত বাহাদুর ছেত্রী (৮৪), মা চন্দ্রমায়া ছেত্রী (৭২), স্ত্রী সীতা ছেত্রী-- কেউই ওদের হামলা থেকে রেহাই পাইনি। গোলমাল থামাতে এসে মা চন্দ্রমায়া-সহ প্রতিবেশী এক আদিবাসী নাবালিকা রজনী ওঁরাওও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জখম হয়েছিলেন সেই রাতে। এখানেই শেষ নয়, ঘটনার পর দিন থেকে দশম শ্রেণির পড়ুয়া তাঁর মেয়েকেও বিভিন্ন ভাবে ভয় দেখানো হচ্ছে বলে গোবিন্দ ছেত্রীর অভিযোগ। পুরো বিষয়টি অভিযোগের আকারে মাল থানায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে বলে গোবিন্দ জানিয়েছেন।


যদিও রাতের অন্ধকারে ধারালো অস্ত্র হাতে প্রতিবেশীর বাড়ি আক্রমণের অভিযোগ অস্বীকার করে সানি ওরাঁও বলেন, 'পুরোপুরি সাজানো অভিযোগ। এটা ঠিক যে, ঘটনার রাতে আনুমানিক সাড়ে সাতটা নাগাদ আমরা গোবিন্দ ছেত্রীর বাড়ির সামনে গিয়ে ওঁর সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম। সেই সময় দু-তরফেই উত্তেজিত বাগবিতণ্ডা হয়। সেই সময় ধ্বস্তাধস্তির ফলে দরজায় ধাক্কা লেগে গোবিন্দের মা'র হাতে চোট লেগে রক্তপাত হয়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণের কোনও ঘটনা ঘটেনি।'


এদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে সেই রাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় মাল থানার পুলিস। তদন্তে নেমে সানি ওরাওঁয়ের এক ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায় পুলিস। যদিও পরদিনই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। দুই পরিবারের এই বিবাদে নাম জড়িয়েছে জমির দালালদেরও। ফোনে হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ সামনে এসেছে। 


এই পরিস্থিতিতে বিবাদরত দুই পরিবারকে মুখোমুখি বসিয়ে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হয়েছেন এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য তথা ওদলাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তাছিরুল হক্। এলাকায় জমি মাফিয়াদের দাপটের কথা মেনে নিয়ে তাছিরুল বলেন, আশা করছি, দুপক্ষকে সামনাসামনি বসিয়ে সমস্যার সমাধান করতে পারব। 


আরও পড়ুন: Purbasthali: নেই কেন সেই পাখি নেই! চুপির চর থেকে চুপি চুপি মুখ ফেরাচ্ছে পাখিরা, পর্যটকেরাও...


বিষয়টি নিয়ে যাতে এলাকায় আইনশৃঙ্খলাজনিত কোনও সমস্যা দেখা না দেয়, সেদিকে সতর্ক নজর রাখা হয়েছে বলে জানান মাল থানার আইসি সুজিত লামা।


(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)