সৌমিত্র সেন 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

অজয় নদের পাড়ে ছোট্ট গ্রাম কেন্দুবিল্ব। পরে-পরে কেঁদুলি। আরও পরে লোকমুখে জয়দেব-কেঁদুলি। অজয়ের পাড়ে বাউল আখড়ায় বসে জমজমাট গানের আসর। প্রতিবছরই মকর সংক্রান্তির দিনটির জন্য দিন গোনেন মানুষ। কারণ এই সময়টায় মকরস্নানের দিন থেকেই কেঁদুলিতে শুরু হয়ে যায় বাউল-কীর্তন। গানবাজনা, মেলা, উত্‍সবে জমজমাট থাকে কেঁদুলি। 


জয়দেব-কেঁদুলির মেলা বহু প্রাচীন। প্রাচীনত্ব ও জনপ্রিয়তার নিরিখে এ মেলা আজ দেশের অন্যতম প্রধান ও ঐতিহ্যশালী মেলা হিসেবে পরিগণিত। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসে অজয়ের তীরে কেন্দুবিল্বে জয়দেব গোস্বামীর মেলার উল্লেখ রয়েছে। 


আরও পড়ুন: Swami Vivekananda: কর্মের কোলাহল ও না-কর্মের নির্জনতার মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছিল সহস্রদল বিবেকানন্দ-পদ্ম...


এই কেঁদুলি গ্রামই গীতগোবিন্দের রচয়িতা কবি জয়দেব গোস্বামীর জন্মস্থান। 'গীতগোবিন্দ' রচিত হয় দ্বাদশ শতকে। জয়দেব যখন 'গীতগোবিন্দ' রচনা করছিলেন সেই সময়েই (১১৫৯ সাল) কোনও এক পৌষ-সংক্রান্তির দিনে কবি জয়দেব গঙ্গার সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন বলে কথিত। বরাবর পৌষমাসের শেষ দিন কবি ভোরবেলা গঙ্গাস্নানে যেতেন। একবার কোনও অসুবিধার জন্য যেতে পারেননি। এজন্য মনে কিছু অশান্তি অনুভব করেন তিনি। কিন্তু সংক্রান্তির রাত্রেই কবি এক আশ্চর্য স্বপ্ন দেখেন। মকরবাহিনী গঙ্গা হেসে তাঁকে বলেছেন—‘তুমি যখন যেতে পারলে না, তখন আমিই আসব অজয়ের স্রোত বেয়ে কদমখণ্ডীর ঘাটে’! আজও লোকবিশ্বাস, মকরসংক্রান্তির দিনে গঙ্গা এসে মেশে অজয়ের জলে। 


আরও পড়ুন: Surya Gochar 14 January 2023: মকর সংক্রান্তির ঠিক পরেই এই ছয় রাশির জাতকদের ভাগ্য হয়ে উঠবে অতি উজ্জ্বল...


বলা হয় স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ এসে 'গীতগোবিন্দ' কাব্যের চরণ লিখে গিয়ে গিয়েছিলেন। কাব্যটির মানভঞ্জন পালা রচনায় কবি একটু বিপদে পড়েছিলেন। কৃষ্ণ কী ভাবে রাধার মান ভাঙাবেন তা প্রকাশ করার যেন ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলেন না কবি। অশান্ত মন নিয়েই পুথি ছেড়ে স্নানে গেলেন তিনি। কুটিরে তখন কেবল স্ত্রী পদ্মাবতী। তিনি দেখলেন কবি একটু দ্রুতই যেন স্নান সেরে ফিরে এসেছেন। এসে ফের পুথি নিয়ে বসলেন। কিন্তু আসলে জয়দেব তখনও স্নান সেরে ফেরেননি। তিনি ফিরে সব শুনে আশ্চর্য হন। তারপর পুথির কাছে গিয়ে যা দেখলেন, তাতে বিস্ময়ে রোমাঞ্চিত হলেন। লেখা আছে সেই বিখ্যাত চরণ-- ‘স্মরগরলখণ্ডনং মম শিরসি মণ্ডনং দেহিপদপল্লবমুদারম’। এই চরণ জয়দেব স্নান করার আগে লিখে যাননি! তা হলে? 


এত মিথ, এত স্মৃতি, এত ঐতিহ্যে মাখামাখি এই জনপদ। এত অনুভবে জারিত এই গীতগোবিন্দ কাব্য। কবি জয়দেব, তাঁর কাব্য, শ্রীকৃষ্ণ, মা গঙ্গা-- সব মিলেমিশে এক আশ্চর্য আবেশ তৈরি হয়েছে এই কেঁদুলিতে। এ গ্রামের ধুলোয় ধুলোয় পুণ্য। সেই ধুলোতেই বসে বাউল ও কীর্তন গানের আসর। এই ধুলো ছুঁতেই, এই সুর বুকে তুলে নিতেই প্রতিবছর অগণিত মানুষ আসেন অজয়ের তীরের এই কবি-গ্রামে। এবারও আসছেন।  


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)