সন্দীপ ঘোষচৌধুরী: করোনা-বিভীষিকার দুবছর কাটিয়ে এবছর দ্বিগুণ উৎসাহের সঙ্গে কার্তিক পুজোয় মেতে উঠেছে কাটোয়া। কাটোয়ায় কার্তিক পুজো কার্তিক লড়াই নামেই পরিচিত। এই কার্তিক লড়াইকে কেন্দ্র করে উৎসবে মেতে উঠে গোটা কাটোয়া। কার্তিক-লড়াই দেখতে কাটোয়া সংলগ্ন বীরভূম, মুর্শিদাবাদ,নদিয়া জেলার একাংশের মানুষ ভিড় জমান। আলোর বন্যায় ভাসছে গোটা কাটোয়া শহর। তৈরি হয়েছে সুদৃশ্য মণ্ডপ, দেবমূর্তি, সঙ্গে বাহারি আলোকসজ্জা। চেনা শহরটা যেন অচেনা হয়ে উঠেছে। রকমারি বাজনায় মুখরিত শহর। কোথাও বাঁশের কারুকার্যে বাংলার লুপ্তপ্রায়  ডোকরা শিল্পকে তুলে ধরা হয়েছে, কোথাও বুর্জ খলিফার আদলে মণ্ডপ, কোথাও ইন্ডিয়া গেট, কোথাও জ্যান্ত ভূত! কাটোয়ার এই প্রাচীন উৎসব কার্তিক লড়াই সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে বহু পুলিসকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। গোটা শহর মুড়ে ফেলা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরায়।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন: মৌর্য যুগের বন্দর-এলাকা বাঁশবেড়িয়ায় কে শুরু করল হালের বর্ণিল এই কার্তিকপুজো?


কার্তিক পুজো কাটোয়ার কার্তিক লড়াই হয়ে উঠল কী করে? 



এর পিছনে রয়েছে লম্বা কাহিনি। জানা যায়, প্রাচীন কালে মূলত বারবনিতাদের হাত ধরে কাটোয়ায় কার্তিক পুজোর সূচনা। মারাঠা বর্গী ভাস্কর পণ্ডিতের সৈন্যরা নিজেদের মনোরঞ্জনের জন্য কাটোয়ার সুন্দরী যুবতীদের ধরে এনে রাখত ৷ বর্গীরা চলে গেলে এই মহিলারা আর সংসারে ফিরতে পারলেন না, সমাজ তাঁদের ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করল। তখনই ওই মহিলার পেশা হিসেবে যৌনব্যবসায় ঢুকলেন। কাটোয়ার চুনরিপাড়ায় এই মেয়েরা প্রথম যৌনপল্লি গড়ে তোলেন। এই মহিলাদের কাছে আসা-যাওয়া শুরু করল নতুন এক শ্রেণির বাবু। সেই বাবুদের হাত ধরেই ১৭৫০ সাল নাগাদ আলীবর্দ্দির সময়কালে এ অঞ্চলে কার্তিক পুজোর শুরু৷ আগের লবণগোলা ঘাট আজকের হরিসভা ঘাট ৷ সেখানেই হয় কাটোয়ার প্রথম কার্তিক পুজো 'ল্যাংটো কার্তিক'৷ 'আমরা ক'জন ক্লাবে' আজও হয় সেই পুজো ৷ যেখানে ঘরের শিশুর মতো কার্তিককে ঝুনঝুনি, বেলুন, মোয়া দেন ভক্তরা ৷ বিশ্বাস, এই জাগ্রত কার্তিকের কাছে মানত করলে ইচ্ছা পূরণ হয়, নিঃসন্তানের সন্তান হয়!



ওই বাবুদের উদ্যোগেই হরেক কার্তিকের পুজো শুরু হয় কাটোয়ায়। সঙ্গে শুরু হয় বিভিন্ন পুজো কমিটির মধ্যে প্রতিযোগিতা। কালান্তরে যা কাটোয়ার 'কার্তিক লড়াই' নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। বিসর্জনের শোভাযাত্রা নিয়েও শুরু হয় বিভিন্ন দলের মধ্যে রেষারেষি ৷ রাসের প্রায় সমসাময়িক কার্তিক লড়াইয়ে মেতে ওঠে কাটোয়া ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, তারকাসুর বা কৃত্তিকাসুর বধের সঙ্গেও কার্তিকের নাম জড়িত ৷ কার্তিক ক্ষত্রিয় শক্তির প্রতীক ৷ তাঁর বাহন ময়ূর। যে ক্ষিপ্রগতির, যার মধ্যে অলসতা নেই ৷ কার্তিক নিজে রূপবান ও গুণবান। তাঁর মতো সন্তান সবার কাম্য ৷ তাই কার্তিক হয়ে উঠলেন নিঃসন্তান দম্পতির আরাধ্য ৷


কাটোয়ার কার্তিকের আর এক বিশেষত্ব 'থাকা'। থাক থাক করে ৩০/৪০টি মূর্তি সাজিয়ে উপস্থাপিত হয় ৷ এখন অবশ্য আগের চেয়ে থাকা কমে এসেছে ৷ ১৯২০ সালে একজন মাড়োয়ারি ব্যবসায়ী কাটোয়ায় থাকার প্রচলন করেন ৷  এখনও চাউলপটির গোয়ালপাড়ায়, গৌরাঙ্গপাড়ায়, ডুবোপাড়ায় ধুমধামের সঙ্গে কার্তিক পুজো হয়, এবারেও হচ্ছে। এবার এ অঞ্চলে বড় পুজো প্রায় ৯০টি!


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)