নিজস্ব প্রতিবেদন: ‘সাত খুন মাফ’ সিনেমাটির কথা মনে রয়েছে? একের পর এক সাত জন স্বামীকে খুন করেছিলেন স্ত্রী। সাত না হলেও, সংখ্যাটা হয়তো ধারে কাছেই যাবে! খড়দহের প্রৌঢ় প্রতুল চক্রবর্তীর খুনের ঘটনার  দৃশ্যপট অনেকটা সেরকমই। অন্তত তদন্তের গতিমুখ যেদিকে এগোচ্ছে, তাতে সেরকমই  মনে হতে পারে পাঠকের। খড়দহের খুনের তদন্তে নেমে কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে পড়ছে কেউটে! উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই ঘটনার পর্দাফাঁস করতে ১৪ বছরের আগে ঘটে যাওয়া বারাসতের চার জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুরও  নতুন করে তদন্ত শুরু করল পুলিস।   


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

খড়দহ খুনের প্রতি পরতে যেন টান টান উত্তেজনা ।  যেন কোনও ‘থ্রিলার মুভি’র প্রেক্ষাপট।  খড়দহর প্রৌঢ় প্রতুল চক্রবর্তীর খুনে ধৃত তাঁর স্ত্রী অদিতির বিরুদ্ধে উঠে আসছে আরও বিস্ফোরক অভিযোগ। তদন্তে  জানা গিয়েছে,  ২০০৪ সালে অদিতির প্রথম পক্ষের স্বামী বারাসতের চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা জয়দীপ বিশ্বাসের মৃত্যু হয়।  কয়েকদিনের ব্যবধানে ওই পরিবারে আরও তিন জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়।  মৃত্যু হয় জয়দীপের মা, পিসি ও পিসেমশাইয়ের। এরপর ওই বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে চলে যান অদিতি। অদিতি তাঁর প্রথম পক্ষের স্বামীর চাকরি পান। বারাসতের চৌধুরীপাড়ায় জয়দীপের পাড়ায় গিয়ে পুলিসের কাছে উঠে আসছে অন্য তথ্য। প্রতিবেশীদের অভিযোগ, জয়দীপের মৃত্যুও স্বাভাবিক ছিল না। তাঁর দেহ নীল হয়ে গিয়েছিল, মুখের কোণায় গ্যাঁজলা বেরোচ্ছিল বলে দাবি স্থানীয়দের।  জয়দীপ, শাশুড়ি , পিসি শাশুড়ি ও তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পিছনেও অন্য কারণ রয়েছে।   সেক্ষেত্রেও খুনের অভিযোগ তুলছেন স্থানীয়রা।  নতুন করে পুরনো ফাইল খুলছে পুলিস। সব বিষয় বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে।


আরও পড়ুন: আত্মরক্ষার্থেই 'প্রাক্তন' স্বামীর গলায় ফাঁস! খড়দা খুনে পর্দা ফাঁস


প্রসঙ্গত অদিতির সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয় পক্ষের স্বামী প্রতুল চক্রবর্তীরও ডিভোর্স হয়েছে কিছুদিন আগে। এরপর থেকে ম্যাট্রি মনি সাইটে অ্যাকাউন্ট খুলে  নতুন করে নিজের বিয়ের জন্য বেশ কয়েকজন যুবকের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। এরই ফাঁকে কলকাতার বাসিন্দা বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত এক যুবকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে অদিতির।  বয়সে ছোট সেই যুবকের সঙ্গে বিয়ে করারও পরিকল্পনা ছিল অদিতির। সেই সম্পর্কে বাধা দেওয়াতেই খুন হতে হয় প্রতুলকে।


প্রথম অদিতি পুলিসকে জানিয়েছিল, ঘটনার দিন প্রতুল তাকে খুন করার চেষ্টা করেছিলেন। নিজেকে বাঁচাতে  প্রতুলকে খুন করেছে অদিতি। কিন্তু এখন জেরায় অদিতি স্বীকার করছে, পূর্ব পরিকল্পিতভাবেই প্রতুলকে খুন করেছে সে। ঘটনার দিন সাড়ে তিন ঘণ্টা  প্রতুলের সঙ্গে খড়দহের ওই ফ্ল্যাটে থাকে অদিতি। তারপর প্রতুলকে মদ্যপান করান। নিজেও মদ্যপান করেন। এরপর বালিশ চাপা দিয়ে প্রতুলকে খুন করে অদিতি। মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে দেয়।


এই ঘটনায় অদিতির সঙ্গেও তৃতীয় কোনও ব্যক্তির যোগ রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। ফরেন্সিক টিম সোমবার ফের খড়দহের শান্তিনগরের সেই ফ্ল্যাটে গিয়ে খতিয়ে দেখে।


প্রসঙ্গত, গত ২০ ডিসেম্বর খড়দহের  শান্তিনগর খালপাড় থেকে উদ্ধার  হয় প্রতুলবাবুর দেহ। শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে বলে প্রথমেই সন্দেহ করে পুলিস। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া যায় মহিলাদের একটি রুমাল। উদ্ধার হওয়া সেই রুমালের সূত্র ধরেই প্রতুল চক্রবর্তীর স্ত্রী অদিতিকে গ্রেফতার করে খড়দা থানার পুলিস।