মৃত্যুঞ্জয় দাস: সংরক্ষণের দাবিতে কুড়মিদের আন্দোলনের জেরে কিছুদিন আগেই তোলপাড় হয়েছে জঙ্গলমহলে। স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল রেল চলাচল। এবার এক মন্তব্যের জেরে কুড়মিদের রোষ গিয়ে পড়ল রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষের উপরে। কুড়মিরা দিলীপ ঘোষকে আল্টিমেটাম দিয়েছেন, তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে। নইলে তাঁর বাড়ি ঘেরাও করা হবে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন- 'আপনাদের সঙ্গেই আছি', পিংলার বিধায়কের মন্তব্যের জন্য কাদের কাছে ক্ষমা চাইলেন মমতা?


গতকাল ঝাড়়গ্রামে দিলীপ ঘোষের একটি মন্তব্য নিয়ে সমস্যার শুরু। কুড়মিদের দাবি, গতকাল ঝাড়গ্রামে দিলীপ ঘোষ মন্তব্য করেছেন তিনি খেমাশুলিতে কর্মীদের আন্দোলনে চাল-ডাল পাঠিয়েছিলেন। তাঁর সেই মন্তব্যের প্রতিবাদ আজ বাঁকুড়ার রানীবাঁধে প্রবল বিক্ষোভ দেখায় কুড়মিরা। পোড়ানো হয় দিলীপ ঘোষের কুশপুতুল। পাশাপাশি আজ সারাদিন বাঁকুড়ার বিভিন্ন জায়গায় দিলীপ ঘোষের কুশপুতুল পোড়াবে কুর্মীরা। তাদের দাবি,কর্মীরা কোনও নেতার কাছে হাত পাতে না। নিজেরা চাঁদা তুলে আন্দোলন করে।  দিলীপ ঘোষ কাকে সাহায্য করেছেন? তিনি যা বলেছেন তা কুড়মিদের বদনাম করা জন্যই।


কুড়মিদের রাজ্য যুব সভাপতি পরিমল মাহাত বলেন, দিলীপবাবু গতকাল একটি কথা বলেছেন। ওঁর দাবি, খেমাশুলিতে কুড়মিদের আন্দোলন হয়েছিল সেই আন্দোলনে নাকি উনি চাল ডাল দিয়েছিলেন। কুড়মিদের গায়ে কালি দেওয়ার জন্য এটা একেবারে মিথ্যে অভিযোগ। উনি যদি কাউকে টাকা বা সাহায্য করেই থাকেন তাহলে তার সঙ্গে কুড়মিদের কোনও সম্পর্ক নেই। কুড়মিরা কোনও নেতার কাছে হাত পাতেনি। প্রত্যেকটি বাড়ি থেকে চাল-ডাল, টাকাপয়সা তুলে খেমাশুলিতে আন্দোলন করেছি। আমরা কোনও রাজনৈতিক দলের কাছে হাত পাতিনি। দিলীপবাবুকে ধিক্কার জানাচ্ছি। আজ নাকি উনি বলেছেন কর্মীদের জামা প্যান্ট খুলে নেব। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উনি যদি ওঁর মন্তব্য প্রত্যাহার না করে ক্ষমা চান তাহলে আগামী ১৭ মে আমরা ওঁর ঘরে যাব জামা প্য়ান্ট খোলাতে। ওঁর যদি ক্ষমতা থাকে ওই দিন ঘরে থাকুন দিলীপবাবু। আমাদের সামনাসামনি হয়ে কথা বলবেন। কোনও সমাজকে নিয়ে কথা বললে আমরা জঙ্গলমহলের মানুষ ছেড়ে কথা বলছি না।  সেদিন উনি ঘরে না থাকলে ওঁকে জঙ্গলমহলে বয়কট করব। ওকে ওঁর মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে হবে। 


এনিয়ে দিলীপ ঘোষ সংবাদমাধ্যমে বলেন, আমার এলাকায় যারা বলেছিলেন তাদের আমি সহযোগিতা করেছি। আমি তাদের কাছে লোক পাঠিয়েছি, সহযোগিতাও করেছি। আমি আগে থেকে বলতে যায়নি। আমার রাস্তা যখন আটকেছে তখন আমি বলেছি। ওরা চাইলে সংবাদমাধ্যমের সামনে নাম নিয়ে বলব কোন নেতা কী করেছেন। নিজেদের সমাজ নিয়ে আন্দোলন করছেন করুন। আমাদের সহমর্মিতা রয়েছে। রাজনীতি করতে এলে রাজনৈতিক উত্তর দিতে হবে। বেশি বাড়াবাড়ি করতে এলে কাপড় খুলে দেব। 


প্রসঙ্গত, কুড়মিদের আন্দোলনে নিয়ে পিংলার তৃণমূল বিধায়ক অজিত মাইতির মন্তব্য নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। তার জেরে ক্ষমা পর্যন্ত চেয়ে নেন মুখ্যমন্ত্রী। কী বলেছিলেন অজিত মাইতি? গত ৬ মে মেদিনীপুর শহরে এক সভায় অজিত মাইতি বলেন, 'কিছু কুড়মি নেতা স্বঘোষিত খলিস্থানি নেতার মতো কুড়মি ভাইবোনদের ভুল বোঝাচ্ছেন। তারা বলছেন এসটি সার্টিফিকেট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিতে হবে।' পরদিন ৭ মে দাসপুরের এক সভায় অজিত মাইতি বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে কোনও কোনও জেলায় কাউকে কাউকে খেপিয়ে দিতে পারেন ২ কুড়মি নেতা। তাদের দম নেই দিল্লিতে গিয়ে আন্দোলন করার। অজিত মাইতির ওই মন্তব্যের প্রতিবাদে শালবনিতে পোস্টার পড়ল। সেখানে লেখা হয়েছে, কুড়মি নেতাদের খলিস্তানি বলার জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে অজিত মাইতিকে। কোথাও লেখা কুড়মি বিরোধী রাজ্য সরকার হুঁশিয়ার।


তাঁর ওই মন্তব্য নিয়ে অজিত মাইতি সংবাদমাধ্যমে বলেন, আমি কাউকেই খালিস্তানি বলিনি। আমি বলেছি স্বঘোষিত খলিস্তানি নেতাদের মতো। স্বঘোষিত খলিস্তানি নেতা বলিনি। এরকম বিতর্কের মধ্যেই আজ নবান্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমি ওঁকে ফোন করেছিলাম। আমি বলব, আমারও খুব খারাপ লেগেছে। ও আমাকে বলল আমি বলতে চেয়েছিলাম এক জিনিস আর ওরা অন্যভাবে বলছে। কুড়মি তো অনেক আছে আমাদের এখানে। তাদের দাবি মতো কেন্দ্র সরকারকে আমরা চিঠিও লিখেছি। অজিত মাইতি যদি কিছু বলে থাকে বা তার বক্তব্য যদি বিকৃত করে থাকে বিজেপি তাহলে আমি বলব ওই বক্তব্য আমাদের নয়। আমরা কুড়মিদের যথাযোগ্য সম্মান করি। যদি কারও বক্তব্য ঘুরিয়ে বলার জন্য বা মুখ ফসকে কিছু বেরিয়ে যাওয়ার জন্য যদি মাহাতরা দুঃখ পেয়ে থাকেন তাহলে আমি নিজে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। এটা নিয়ে রাজনীতি করার কোনও জায়গা নেই। আমরা সবাই আপনাদের সঙ্গে আছি।


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)