নিজস্ব প্রতিবেদন: মন মত্ত করী। তাকে বশ মানাতে হবে। কে বশ মানাবে? সিংহ বশ মানাবে সেই মত্ত করীকে। কিন্তু সিংহও তো আত্মনিয়ন্ত্রণের চূড়ান্ত নয়, অনিষ্ট তার থেকেও হতে পারে। তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে তাই করীপৃষ্ঠে দণ্ডায়মান সিংহের পৃষ্ঠে আসীন দেবী স্বয়ং!


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

এই হল মোটামুটি জগদ্ধাত্রী মূর্তির ব্যাখ্যা। আজ গোটা বাংলা জুড়ে এই আদি মাতৃকাশক্তির আরাধনা। তবে কৃষ্ণনগর ও চন্দননগরেই জগদ্ধাত্রী পুজোর রমরমা বেশি দেখা যায়। 


মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন বাঁকুড়া সফরে। তবে শুভ এই দিনটিতে রাজ্যবাসীকে জগদ্ধাত্রীপুজোর শুভেচ্ছা জানাতে ভোলেননি তিনি। বার্তায় বাংলা ও ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করেছেন তিনি। সঙ্গে জগদ্ধাত্রী সংক্রান্ত একটি সংস্কৃত মন্ত্রও (বাংলা লিপিতে) উল্লেখ করেছেন। বার্তাটি এরকম: 'জয়দে জগদানন্দে জগদেক প্রপূজিতে।/ জয় সর্ব্বগতে দুর্গে জগদ্ধাত্রী নমোহস্তুতে।। সকলকে জানাই জগদ্ধাত্রী পুজোর শুভেচ্ছা' পরে ইংরেজিতে লিখেছেন-- 'Heartiest greetings to all on the occasion of Jagaddhatri Pujo'


সাধারণত তিনটি দেবীমূর্তি আমরা পুজো করে থাকি।  মনে করা হয়, এর মধ্যে তামসী শক্তির প্রতীক কালী, রজোগুণের প্রতীক দুর্গা এবং সত্ত্বগুণের প্রতীক জগদ্ধাত্রী।


জগদ্ধাত্রীমূর্তির ব্যাখ্যায় অন্য তত্ত্বও আছে। দুর্গাসৃজনের পরে দেবতাদের মনে অহঙ্কার হল। তাঁরা মনে করলেন, তাঁরাই সর্বশক্তিমান। তাঁদের উপরে আর কেউ নেই। এমন যখন ভাবছেন তখন আদি মাতৃকাশক্তি মায়ারূপে তাঁদের সামনে আবির্ভূত হন এবং এক খণ্ড ঘাস তাঁদের সামনে রেখে সেটাকে স্থানচ্যুত বা বিনষ্ট করতে বলেন। ইন্দ্র, বরুণ, বায়ু সকলেই চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেন। এবং নিজেদের অকর্মণ্যতায় যথেষ্ট বিস্মিতও হলেন। তখনই সেই মায়ারূপী আদি মাতৃকাশক্তি জগদ্ধাত্রীরূপে তাঁদের সামনে আবির্ভূত হন এবং নিজের অদ্বিতীয় সত্তার কথা তাঁদের মনে করিয়ে দেন। দেবতারা তখন অহঙ্কার ত্যাগ করলেন। 


এ হেন দেবীমূর্তির পুজোর আড়ম্বর অবশ্য দুর্গা বা কালীর মতো নয়। প্রথম দিকে বাংলায় বারোয়ারি হিসেবেও এই পুজোর প্রচলন তেমন হয়নি। আগে কৃষ্ণনগর এবং হালে মূলত চন্দননগরই এই পুজোকে বাংলায় জনপ্রিয় করে। 


বাংলায় কবে এই পুজোর প্রচলন, তা নিয়ে অবশ্য মতভেদ আছে। কেউ বলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়, কেউ বলেন ফরাসি কোম্পানির দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী, কেউ বলেন কৃষ্ণচন্দ্রের দেওয়ান দাতারাম শূর। ইতিহাসবিদেরা দেখেছেন, কৃষ্ণচন্দ্রের অন্তত সাড়ে তিনশো বছর আগে থেকেই বাংলায় জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন। তবে নিজ পরাক্রমবলে তিনি পুজোটিকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন এ কথা ঠিক। ইন্দ্রনারায়ণের নাম অবশ্য ইতিহাসবিদেরা এ ক্ষেত্রে খারিজ করে দিয়েছেন। আর দাতারামের বিষয়টি আলাদা। কৃষ্ণচন্দ্রের দেওয়ান হিসেবে জগদ্ধাত্রীপুজো জনপ্রিয় করে তোলার কর্মযজ্ঞে তাঁর কিছু অবদান থাকতেই পারে। তা আলাদা করে নজরযোগ্য নয়। 


কিন্তু কৃষ্ণনগরের জমজমাট পুজো কী ভাবে চন্দননগরে চলে এল? প্রথমত, উনিশ শতকে চন্দননগর রেলপথ পেয়ে গেল। দ্বিতীয়ত ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে চন্দননগর জায়গাটি বরাবরই সুবিধাপ্রাপ্ত। কেননা, শহরটি গঙ্গার ধারে। এই দু'টি কারণে ধীরে ধীরে কৃষ্ণনগর থেকে জগদ্ধাত্রীপুজোর রমরমা চন্দননগরে সরে আসে। এ অঞ্চলের পুজোর বয়স আড়াইশো বছরের মতো। 


জগদ্ধাত্রীপুজোকে বলা হয় একদিনের দুর্গাপুজো। দেবীকে তিন প্রহরে সত্ত্ব রজ ও তম এই তিন রূপে পুজো করা হয়। সেই একদিনের দুর্গাপুজোয় আজ মেতে উঠেছে সারা বাংলা। 


আরও পড়ুন:  করোনা আবহে প্রবেশ নিষেধ, বেলুড় মঠের জগদ্ধাত্রী দর্শন ইউটিউবেই​